বুধবার, মে ২২, ২০১৯

হাওড়া আদালত কান্ডে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট



মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

ঘটনা ১,  গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশি হামলার সময় অর্থাৎ বেলা দশটার পর পৌনে এগারোটা নাগাদ হাওড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাওড়া সদর থানার ওসি কে অবগত করান ঘটনার বিষয়ে। ঘটনা ২,  সেইদিনেই বেলা এগারো টা পনেরো মিনিটে ডিস্ট্রিক্ট জাজ হাওড়া পুলিশ কমিশনার কে তলব করেন। দুটি ঘটনাতেই হাওড়ার সদর থানার ওসি এবং পুলিশ কমিশনার কোন সক্রিয়তা দেখাননি। অথচ শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার হাওড়া আদালত সফরে ঘটনার দিন বিকেলে আদালত চত্বরে ডাইনে বাঁয়ে ঘুরেন তাঁরা। ঘটনা ৩,  গত ১০ ই মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে পাঁচ পুলিশ অফিসার কে তাঁদের কে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশ কে উপেক্ষা করেছে পুলিশ। উল্টে রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত নির্বাচনী আচরণবিধি চালুতে রাজ্যসরকার কোন পদক্ষেপে সক্ষম নয়, এই বার্তা দিতে গেলে কলকাতা হাইকোর্ট চরম ভাবে রাজ্যের এহেন অবস্থান কে কড়া সমালোচনা করে থাকে। গত ২০ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার এই মামলার শেষ শুনানির দিনে সব পক্ষের বক্তব্য শুনার পর কলকাতা হাইকোর্ট পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়,  নির্বাচনী বিধি দোহাই দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের আড়াল করার কোন চেস্টা সফল হবেনা। রাজ্যসরকার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা ঘটনা সম্পকে তাদের অভিমত জানাতে পারতো। এর পরে যদি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের পদক্ষেপ নিয়ে কোন প্রশ্নচিহ্ন তুলতো, তখন নির্বাচন কমিশন কে নির্দেশ দিতে পারতো কলকাতা হাইকোর্ট। শুনানির শেষদিনেও 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে৷ এই সংগঠন কে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়ার কথাও বলা হয় কলকাতা হাইকোর্টের তরফে৷ মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা সিটি সিভিল কোর্টের ষষ্ঠতলায় বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অফিসে বৈঠক চলে। কর্মসমিতির বৈঠকে আগামী ২৪ তারিখ পর্যন্ত পুনরায় সারারাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলবার নির্দেশিকা জারী করা হয়৷ উল্লেখ্য 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ' এর ভুমিকায় ক্ষুব্ধ জেলার বিভিন্ন আদালতের বার এসোসিয়েশন। গত সোমবার কলকাতা সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বার এসোসিয়েশন এর পদাধিকারীদের সরব হতে দেখা যায়। কোথাও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল কে মেরুদণ্ড সোজা রাখার দাবি তোলা হয়। আবার কোথাও বা শাসকদলের দলদাস বৃত্তি থেকে মুক্ত থাকার স্লোগান তোলা হয়। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের এডভোকেট জেনারেল সহ জেলার সদর এবং মহকুমা আদালতে সরকারি আইনজীবীদের গনইস্তফা দেওয়ার দাবি তোলা হয়। উল্লেখ্য হাওড়া জেলা আদালতে সিংহভাগ সরকারি আইনজীবী রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতির প্রথম পয্যায়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন।  ইতিমধ্যেই তিনটি পয্যায়ে কর্মবিরতি ২৭ দিন অতিক্রান্ত করেছে। এবং চতুর্থ দফায়  আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়েছে। ঘটনাক্রমে ২৪ মে থেকে ৯ জুন অবধি টানা ১৫ দিন কলকাতা হাইকোর্ট সহ দেওয়ানী আদালতগুলিতে গরমের ছুটি পড়ছে। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে আজ অর্থাৎ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চ হাওড়া কান্ডে রায়দান করতে চলেছে৷ ঘটনার দিন (২৪ এপ্রিল)  হাওড়া সিজেএম সাহেবের ফোনে হাওড়া সদর থানার ওসি কোন ব্যবস্থাগ্রহণ না করা, তারপর জেলাজাজের ফোনে হাওড়া পুলিশ কমিশনার গুরত্ব না দেওয়া। সর্বপরি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এর ডিভিশন বেঞ্চে গত ১০ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হলফনামাজমা দেওয়ার সুযোগ দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করা বিষয়গুলি একপ্রকার আদালত অবমাননার সামিল। এমনকি অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার দের প্রতি রাজ্যের অভিমত অস্বচ্ছ রাখার ঘটনাগুলি পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাগ্রহণের সুত্র হিসাবে উঠে আসছে। যেসব তথ্য রাজ্য সরকার পেশ করেছে সেগুলিও পরস্পর বিরোধী বলে শুনানিতে উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশ কেন এত বেপরোয়া এবং আদালতের প্রতি অবজ্ঞাসূচক বার্তা দিচ্ছে?  তাহলে কি রাজ্যের প্রশাসনিক তরফে গুরত্ব না দেওয়ার নির্দেশ মিলেছে!  রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে থাকা হাওড়া জেলা আদালতে সকাল পৌনে দশটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত টানা ন ঘন্টা তান্ডবলীলা চালালোর জন্য কি সুপরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র ছিল?  কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিরা পুলিশ নিয়ে তির্যক মন্তব্যও ছুড়েছেন যে সেদিন কি জঙ্গিদের তাড়া করতে হাওড়া জেলা আদালতে অভিযান চালিয়েছিল..                                                                                                                                                                                                                                                                                                                       

কর্মবিরতি নিয়ে ক্ষোভ আইনজীবীদের অন্দরে


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

গত সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে। এজন্য সারা রাজ্যের প্রতিটি মহকুমা এবং জেলা আদালতের বার এসোসিয়েশনের পক্ষে গড়পিছু দশজন করে আইনজীবী প্রতিনিধিত্ব স্বরুপ এসেছিলেন। এছাড়াও ব্যাংকশাল - শিয়ালদহ - আলিপুর - সিটি সেশন এবং সিটি সিভিল কোর্টের আইনজীবীরাও ছিলেন। শ খানেক বিভিন্ন জেলার  আইনজীবীরা ' বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর মঞ্চে আন্দ্রোলন চালালেও বারবার ভেসে উঠে 'আইনজীবী গন ঐক্য' জিন্দাবাদের স্লোগান। বারবার বিভিন্ন বার এসোসিয়েশনের পদাধিকারীদের গলায় উঠে আসে - 'বার কাউন্সিল' কে দলদাস হতে দেব না, কিংবা  'বার কাউন্সিল'  এর  মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। প্রসঙ্গত প্রতিটি জেলার বার এসোসিয়েশন এর প্রতিনিধি হিসাবে বার কাউন্সিল এর সদস্য নির্বাচিত হয়। তাই বিক্ষোভ মঞ্চে বার কাউন্সিল এর পদাধিকারীরা থাকলেও কেউ উচ্চবাক্য করেননি জেলার আইনজীবীদের প্রতিবাদী রুপে। সভায় আগত আইনজীবীদের একাংশ দাবি করেন - এতদিন কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি, তাদের পেশাগত আয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবং পড়ছে। আবার আইনজীবিদের অপর অংশ মনে করছেন যে,  আদালতের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী পুলিশ যেভাবে তান্ডবলীলা চালিয়েছে, তাতে অভিযুক্ত পুলিশঅফিসারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে। মহকুমাস্তরে আদালতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা যেখানে অনেক সেখানে কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁরা আশাবাদী। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অবস্থান নিয়েও একদল আইনজীবী ক্ষুব্ধ। যদিও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর এক বর্ষীয়ান আইনজীবী জানিয়েছেন - হাওড়া আদালত কান্ড নিয়ে চার থেকে পাঁচবার বৈঠক চলেছে কলকাতা হাইকোর্টে। তবে কোন সমাধান সুত্র বের হয়নি। এছাড়া রাজ্যের আইনমন্ত্রীর কাছে দুবার যাওয়া হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন নাকি। এদিন সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে আইনজীবীদের ধর্নামঞ্চে বারবার স্লোগান উঠে - 'আমরা আইনজীবী, আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাই কোনরকম রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করবো না '। সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার পর কয়েকশো আইনজীবী প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলান। অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে এদিনও শুনানি হয়। সব পক্ষের হলফনামা জমা পড়ার পর আগামী বুধবার অর্থাৎ ২২ মে রায়দান দেওয়া হবে বলে কলকাতা হাইকোর্ট সুত্রে  জানা গেছে।     আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর ঘোষিত কর্মবিরতি শেষ হচ্ছে। তাই পুনরায় কর্মবিরতি বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়ে৷ টানা ২৭ দিন কর্মবিরতি চলার পর আর কতদিন বাড়ে তার দিকে মুখিয়ে গোটা রাজ্য। এখনও অবধি রাজ্য সরকারের পক্ষে কোন হস্তক্ষেপ করা হয়নি হাওড়া কান্ডে। যদিও জানা গেছে, সমস্ত পুলিশকর্মী এখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় রয়েছে,  ব্যবস্থাগ্রহণ সম্ভবকর হয়নি। তবে যাইহোক টানা কর্মবিরতি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ উঠে আসছে। তা আজকের কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে ফুটে উঠলো। কর্মবিরতি নিয়ে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বর্তমান সদস্য আনসার মন্ডল বলেন - "আদালতে অচলাবস্থা কাটুক সেটা আমরাও চাইছি তবে সেটা হাওড়া কান্ডে আক্রান্ত আইনজীবীদের সুবিচার পাইয়ে দিয়ে "।                                                                                                                                                                                                              

    

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER