মোল্লা জসিমউদ্দিন
উপলক্ষ টা 'সম্প্রীতি ও সংবর্ধনা সভা' হলেও মূল লক্ষ হচ্ছে বাংলার সংখ্যালঘু নেতাদের একত্রকরণ। হ্যা বুধবার হাওড়ার পশ্চিম বাইনান এলাকায় সবুজ সংঘের মাঠে মাদ্রাসা কাসেমুল উলুমের পরিচালনায় সারারাত্রীব্যাপি চলবে 'সম্প্রীতি ও সংবর্ধনা সভা'। যেখানে উপস্থিত থাকছেন রাজ্য জমিয়ত উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি, সারাবাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ কামরুজাম্মান সহ নানা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের নেতৃত্ব। এটি নিছকই কোন সাংস্কৃতিক কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, তা মানছেন অনেকেই।একটি সংগঠনের রাজ্য নেতা জানান - "যেভাবে গত দুই থেকে তিনমাস ধরে রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তী কে ঘিরে বিজেপির সাথে তৃনমূলের উগ্র হিন্দুত্ব নিয়ে ধর্মীয় লড়াই হলো।তাতে গ্রামবাংলার সংখ্যালঘু মানুষরা চরম আতঙ্কিত। অজশ্র মসজিদ /মাদ্রাসার ইমাম - মাওলানারা আমাদের রিপোর্ট দিয়েছেন একহয়ে থাকতে।তাই সাংগঠনিক ভেদাভেদ ভূলে একছাতার তলায় থাকতে চাইছি।কেননা এই লড়াই ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন অবধি চলবে "।এহেন বক্তব্য থেকে পরিস্কার বাংলায় সাম্প্রতিকতম বিজেপি বনাম তৃনমূলের যে লড়াই শুরু হয়েছে, তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের বড় অংশ ক্ষুব্ধ।বিশেষত যারা বাংলা কে রবীন্দ্র - নজরুলের বাংলা বলে মনে করেন।এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংগঠন কে নিজেদের ভেদাভেদ মূলে এক হয়ে থাকার ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী হয়েছেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। শাসকদলের মন্ত্রী হয়েও পঞ্চায়েত ভোটে দলের ম্যাসলম্যানদের মনোনয়ন সন্ত্রাস নিয়ে ক্ষুব্ধ সিদ্দিকুল্লাহ গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বিধানসভা কেন্দ্র মঙ্গলকোটের আটঘড়ায় দলের ক্ষমতাসীন ব্লক নেতৃত্ব এবং পুলিশের একাংশের মদতে ঝাঁটা জুতো হাতে মহিলাদের গালিগালাজ খেয়েছিলেন।সেসময় থেকেই বাংলার প্রায় মসজিদ - মাদ্রাসায় 'মাওলানা' মন্ত্রীর প্রতি এহেন আচরণ নিয়ে তুমুল নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।উল্লেখ্য সারারাজ্যে হাজারের বেশি মাদ্রাসার কর্মকর্তা এবং ইমাম / মোয়াজ্জেনদের বৃহত্তর সংগঠনের নেতা হচ্ছেন সিদ্দিকুল্লাহ।স্বভাবতই মঙ্গলকোটের ঝাঁটা কান্ড নিয়ে নোংরা রাজনীতির শিকার তত্ত্ব টি উঠে আসে।ফেব্রুয়ারি মাসে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রামনবমী নিয়ে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ব কে হাইজ্যাক করতে রাস্তায় নামে তৃনমূল। এরপরে আবার হনুমান জয়ন্তীতে একই অবস্থান দেখা যায় তৃনমূলের মধ্যে।সংখ্যালঘু মানুষদের বড় অংশে নিরাপত্তাহীনতার সংকটে ভুগে।রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনগুলির কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে রণনীতি সাজিয়ে নেন বলে জানা গেছে।তাই সরাসরি কোন সভা সমাবেশ না করে নানান ইসলামিক জলসা, সম্প্রীতি সভার নামে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি একত্রিত করতে এবং আলাপ আলোচনা চালাচ্ছে তাঁরা।হাওড়ার পশ্চিম বাইনান এলাকার সভাটি আদতে তারই অংশ মাত্র বলে কেউ কেউ মনে করছেন।সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন - ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১০০ আসনে পিডিসিআই দলের প্রার্থী দেওয়ার ভাবনাতেই মমতা বাধ্য হয়েছিল নবান্ন ডেকে রফা করতে।ওই ১০০ আসনে গোটা দশেক আসনে লড়াই হলেও তৃনমূলের হারজিত অনেকটাই পাল্টে দিত।সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের পাঁচ থেকে দশ শতাংশক ভোট মাইনাসে গেলে তৃনমূলের ফলাফল অন্য হত।তাই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে তৃনমূল মন্ত্রিত্ব দিয়ে সেই বিপদ রুখেছে।পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশি সন্ত্রাসের কাছে বিরোধীশুন্য জেলাপরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত অনেকজায়গায় দখলে আনতে পেরেছে তৃনমূল। সেখানে বিধানসভা ভোটের মত পঞ্চায়েত ভোটে কোন পাত্তা পাননি সিদ্দিকুল্লাহ।তৃনমূল শিবিরের দাবি গত বিধানসভা নির্বাচনের সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে ব্লাকমেলিং এর উপযুক্ত জবাব পঞ্চায়েত ভোটে সিদ্দিকুল্লাহ কে দিয়েছেন দলনেত্রী।তবুও হাল ছাড়ছেন না সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। বিভিন্ন ধর্মীয় জলসা, সভার মাধ্যমে সংখ্যালঘু মানুষদের বঞ্চনা, অত্যাচার সর্বোপরি উগ্র হিন্দুত্ব নিয়ে বিজেপির সাথে তৃনমূলের একই অবস্থান নিয়ে জমিয়ত উলেমা হিন্দ তো বটেই অন্য সংগঠন গুলিতে একই প্লাটফর্মে রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনের সময় জবাব দিতে।এইরুপ মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।বাংলার রাজনীতি বলয়ে বিজেপি যে হিন্দুত্ব নিয়ে লড়াই শুরু করেছে, সেখানে তৃনমূলের পক্ষে উগ্র হিন্দুত্বের পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কে তুষ্ট করে রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।সেখানে ক্ষুব্ধ সিদ্দিকুল্লাহ অতীতের বিভিন্ন আন্দ্রোলনের মত পেক্ষাপট করতে চলেছেন।তার প্রাথমিক সূচনা হিসাবে প্রস্তাবিত জমিয়ত উলেমা হিন্দের মুখ্যমন্ত্রী কে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী টি।এখন দেখার সিদ্দিকুল্লাহের এই রাজনৈতিক লড়াইতে অন্য সংখ্যালঘু সংগঠন গুলি কতটা সহযোগী হয়, তা নিয়েও!