বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ভাটপাড়া পুরসভার অনাস্থা মামলাটি উঠে। এদিন ডিভিশন বেঞ্চে ভাটপাড়া পুরসভার অনাস্থা ভোট নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন উত্তর ২৪ পরগণার ডিএম। ডিএম রিপোর্ট কে মান্যতা দিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় - 'পুর আইনী প্রক্রিয়া মেনেই ভাটপাড়া পুরসভার অনাস্থা ভোট হয়েছে। পুরসভা পরিচালনায় কোন অসুবিধা নেই '। তবে বেশকিছু আইনী প্রশ্নের জন্য এই মামলাটি বিবেচনাধীন পর্যায়ে রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ। দু সপ্তাহ পরেই পুনরায় এই মামলার শুনানি রয়েছে। অপরদিকে বিজেপি সুত্রে প্রকাশ, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এহেন রায়ের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করছে। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের প্রতিলিপি নিয়ে তারা আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চলেছে। গত ৬ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে ভাটপাড়া পুরসভার দ্বিতীয়বারর জন্য অনাস্থা ভোট করানোর নির্দেশিকা জারী হয়েছিল। প্রথমবারের মত দ্বিতীয়বারেরও ১৯-০ ব্যবধানে ভাটপাড়া পুরসভার পুন দখল নেয় তৃণমূল। সেদিন ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল - অনাস্থা ভোট পর্ব নিয়ে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করবেন ডিএম। আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই রিপোর্ট জমা দেন উত্তর ২৪ পরগণা ডিএম। এই রিপোর্ট দেখে ডিভিশন বেঞ্চ শুনানিতে পর্যবেক্ষণে জানায় - 'পুরআইন মেনে ভাটপাড়া পুরসভার অনাস্থা ভোট হয়েছে। পুরসভা পরিচালনায় কোন অসুবিধা নেই'। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিনহার সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় কে খারিজ করে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল - 'মঙ্গলবার বেলা একটা নাগাদ নির্বাচন কমিশনের উপস্থিতিতে ডিএম - এসপির পরিচালনায় অনাস্থা ভোট হবে। পুরো অনাস্থা ভোট প্রক্রিয়াটি ভিডিও রেকর্ডিং চলবে। বৃহস্পতিবার ডিএম মুখবন্ধ খামে এই অনাস্থা ভোট নিয়ে রিপোর্ট দেবেন '। সেইসাথে এই পুরসভার সমস্ত কাউন্সিলারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আদেশনামা জারী হয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিনহার এজলাসে এই মামলার রায়দানে সেদিনকার অনাস্থা ভোট বাতিল হয়েছিল। তড়িঘড়ি গত শুক্রবারেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ভাটপাড়া পুরসভার তিন তৃনমূল কাউন্সিলার। তবে রায়ের প্রত্যায়িত কপি পিটিশনে না থাকায় গত শুক্রবার দ্রুত শুনানির আর্জি খারিজ হয়।গত সোমবার দুপুরে পুনরায় এই মামলাটি উঠে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় খারিজ করে মঙ্গলবার বেলা একটার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উপস্থিতিতে ডিএম - এসপির পরিচালনায় অনাস্থা ভোট করার নির্দেশ জারী হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ডিএম অনাস্থা ভোটপর্ব নিয়ে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ ছিল কলকাতা হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চের । ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল তাতে - 'গত ২ জানুয়ারি পুর চেয়ারম্যানের অনাস্থাপ্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না '। প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া পুরসভার ৩৫ টি ওয়ার্ড রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে একদা ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অর্জুন সিং সাংসদ হওয়ায় এই আসন টি খালি হয়। এছাড়া একজন কাউন্সিলার মারা গেছেন। অর্থাৎ ৩৩ জন কাউন্সিলার রয়েছেন।সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৭ জন কাউন্সিলার। গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা ভোটে তৃণমূলের পক্ষে ১৯ টি ভোট পড়েছিল। এই পুরসভায় একজন বামেদের কাউন্সিলার রয়েছেন। যিনি বরাবরই ভোটদানে বিরত থাকেন। লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা পরবর্তী ২৯ জন কাউন্সিলার তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই ফিরেছেন পুরাতন দলে (তৃণমূল) । প্রথমবারের মত দ্বিতীয়বারেরও ভাটপাড়া পুরসভার অনাস্থা ভোটে ১৯-০ ব্যবধানে দখল নিল তৃনমূল। এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিলে আদৌও যায় কিনা বিজেপি। গেলেও সুপ্রিম কোর্ট ভাটপাড়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ নিয়ে কি অবস্থান নেয়?