বুধবার, মে ০১, ২০১৯

তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিবাদে রাস্তায় আদিবাসী সমাজ


মোল্লা জসিমউদ্দিন,

চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে যে আটটি আসনে ভোটপর্ব মিটেছে। তার মধ্যে বোলপুর লোকসভার অধীনে মঙ্গলকোট ও আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকা রয়েছে। মঙ্গলকোটের তিনশোর কাছাকাছি বুথের মধ্যে দুশোর অধিক বুথে শাসকদল তৃনমূল একতরফাভাবে ভোটপর্ব চালালেও পঞ্চাশের অধিক বুথে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটদান হয়। এই অবাধ নির্বাচনের বুথগুলির মধ্যে মঙ্গলকোটের চাণক এলাকার প্রায় বুথ অন্যতম । আর এতেই ক্ষিপ্ত অনুব্রত মন্ডলের মঙ্গলকোটের অনুগামীরা। জানা গেছে, ভোটগ্রহণের দিন ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ গতকাল চাণকে বিজেপির বুথ এজেন্টগুলির পরিবারের উপর চড়াও হয় শাসকদলের সশস্ত্র বাহিনী। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্রের রুপ নেয় পশ্চিম মঙ্গলকোটের চারটি অঞ্চল এলাকায়৷ হাজার হাজার আদিবাসী নুতনহাট গুসকারা সড়ক রুট অবরোধ করে সশস্ত্র প্রতিবাদ জানায়। ঘটনাস্থলে মঙ্গলকোট থানার মেজ বাবু বিবেক মুদি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা এখনো অবরোধ চালাচ্ছে বলে প্রকাশ। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠল পশ্চিম মঙ্গলকোটের  জালপাড়া বাসস্ট্যাণ্ড। স্হানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে গতকাল ভোট চলাকালীন বিজেপির এজেন্টদের পরিবার সহ  চারজন বিজেপি সমর্থক রমেশ মু্র্মু, প্রদীপ হাঁসদা , সুখরাম হাঁসদা  ও সোম মাড্ডি মোটরবাইকে চড়ে চাণক অঞ্চলের ইরসন্দা গ্রামের মধ্যে দিয়ে আসছিল ।সেই সময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের ব্যাপক মারধর করে ।খবর পেয়ে আদিবাসীরা তাদের উদ্ধার করতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাদের ভয়ে ছেড়ে দেয়।গতকাল পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও আজ সকাল ১০ টা থেকেই আদিবাসীরা জালপাড়ায় নতুনহাট-গুসকরা রাস্তা অবরোধ করে। মঙ্গলকোট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলেও অবরোধ ওঠেনি ।স্থানীয় বিজেপি সূত্রে জানা গেছে,  ১৬ নং বুথের তাদের এজেন্ট রণজিৎ রাণার মা মাধবী রাণার কে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা  হুমকি দেয় ।রণজিৎ রাণা বুথ ত্যাগ না করলে তাকে খুন করে দেওয়া হবে ।স্হানীয় বিজেপি নেতা সোম মাড্ডির জানালেন - তৃণমূল আশ্রিত এইসব দুষ্কৃতিদের জন্যই তাদের শান্ত এলাকা বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে।স্হানীয় থানার পুলিশ সব জেনেও নীরব থাকছে।আবার মঙ্গলকোট লাগোয়া আউশগ্রামেও গন্ডগোল এর খবর মিলেছে।   ভোটের পরের দিনও উত্তপ্ত হলো আউসগ্রাম। ব্যাপক উত্তেজনা আউসগ্রাম এর বিভিন্ন এলাকায় । বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেছে ।আউসগ্রামের ছোড়া তে আজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে তৃনমূল বিজেপি সংর্ঘষ। ব্যাপক উত্তেজনা ছোড়া গ্রামে।রামনগড় পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি ভাংচুর হয়েছে। আক্রান্ত বিজেপির লোকেরা পাল্টা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।পুলিশ সূত্রে খবর,আটক করা হয়েছে ৮ জন কে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে।  

কর্মবিরতির মাঝে কেন অনুব্রত মন্ডলের হয়ে মামলা? শোকজ আইনজীবী কে


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

যতদিন যাচ্ছে ততই যেন হাওড়া আদালতে আইনজীবী আক্রান্ত ঘটনায় পরিধি ক্রমশ বাড়ছে। গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া আদালত চত্বরে গাড়ি পার্কিং ঘিরে যে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাতে  রাজ্যের সবকটি আদালত এজলাসে আইনজীবীহীন অবস্থায় বিচারপ্রক্রিয়া শিকেয় উঠেছে। এক সপ্তাহ কর্মবিরতিতেও কোন সমাধান সুত্র বের হয়ে আসেনি। উল্টে সমস্যা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইতিমধ্যেই  কলকাতা হাইকোর্টের সুয়োমুটো মামলায় বাদী বিবাদী পক্ষ কে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার হাওড়া জেলা আদালতে জেলাজাজের কাছে রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এমনকি গত ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার  হাইকোর্টের পাঁচজন বিচারপতির এক প্রতিনিধিদল হাওড়া জেলা আদালত পর্যবেক্ষণে যান। তাঁরা আক্রান্ত আইনজীবিদের পাশাপাশি জেলাজাজের কাছে আদালত স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগও নেন। কিন্তু হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সহ চার আইপিএসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ ছাড়া আইনজীবীরা  কর্মবিরতি আন্দ্রোলনের রাশ ছাড়তে অপারগ।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের বার এসোসিয়েশন হাওড়া আদালতে আইনজীবী আক্রান্ত ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরফলে ঘটনাটি আর এইরাজ্যে নয়, সমগ্র দেশের কাছে বিশেষত আইনজীবি মহলে আলোচিত  বিষয় হিসাবে  পরিচিত লাভ করলো।পুলিশি সন্ত্রাস নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যেখানে হাওড়া জেলা আদালতের সিংহভাগ সরকারি আইনজীবী ( পিপি)  তাঁদের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্যের সমস্ত আইনজীবী যেখানে কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। সেখানে বীরভূম জেলা তৃনমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে  মামলা লড়তে গিয়ে আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টপাধ্যায় আইনজীবীমহলে একপ্রকার একঘরে হয়ে গেছেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে শোকজ করেছে 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল '। যদিও বেশিরভাগ আইনজীবীদের রণংদেহী মেজাজে বাধ্য হয়ে শোকজ টি করেছে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত গত ২৮ এপ্রিল চতুর্থ দফার নির্বাচন অবাধ করার জন্য বীরভূম জেলা তৃনমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে বারোঘন্টার 'নজরবন্দি' রাখার নির্দেশিকা জারী করে থাকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের এই নির্দেশিকা কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গতকাল অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের দেবাংশু বসাকের এজলাসে মামলা দাখিল করেন বিশিষ্ট তৃনমূল নেতা তথা বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর সদস্য বৈশ্বানর চট্টপাধ্যায় মহাশয়। যেখানে সারা রাজ্য জুড়ে আইনজীবীরা পেশাগত বৃত্তিকে জলাঞ্জলি দিয়ে কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। সেখানে উনি কেন অনুব্রত মন্ডলের হয়ে মামলা লড়তে গেলেন?  তা নিয়ে তীব্র জটলা কলকাতা হাইকোর্ট সহ সিটি সিভিল কোর্টের অন্দরে আইনজীবিরা শুরু করে দেন। সিটি সিভিল কোর্টের ষষ্ঠতলায় বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অফিসে একপ্রকার বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে দেন শয়ে শয়ে ক্ষুব্ধ আইনজীবী।গতকাল  সন্ধে সাড়ে সাতটায় - মামলা কেন করলেন এই কর্মবিরতির মাঝে, তা নিয়ে শোকজ করা হয় ওই বর্ষীয়ান আইনজীবী কে। যদিও বীরভূম জেলা তৃনমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলায় বিচারপতি দেবাংশু বসাক কমিশনের আদেশনামা কে বৈধ বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিদের আলোচনা হলেও কোন সমাধান সুত্র বের হয়নি। আগামী ২ মে ফের আলোচনার দিনক্ষণ হয়েছে বলে প্রকাশ।উল্লেখ্য গত ২৪ এপ্রিল থেকে যে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে, তা আগামী ২ রা মে পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আইনজীবীদের সম্মিলিত মঞ্চ। একাধারে সুপ্রিম কোর্টের বার এসোসিয়েশনের হাওড়া কান্ডে নিন্দা প্রস্তাব, অপরদিকে কর্মবিরতির মাঝেই স্বতন্ত্রভাবে অনুব্রত মন্ডলের হয়ে মামলা দাখিল বিষয় দুটি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাচ্ছে - হাওড়া জেলা আদালতে আইনজীবী আক্রান্ত ঘটনায় জল অনেকদূর গড়াতে চলেছে। পুলিশ বনাম আইনজীবীদের এহেন লড়াইয়ে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ক্রমশ বাড়ছে ' নিরপরাধ' বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ।  কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল বলেন - আক্রান্ত আইনজীবীদের সুবিচার দিয়ে  আমরা চেস্টা চালাচ্ছি সমস্ত আদালত সচল রাখার  ।                                                                                                                                                                                                                                                                            

     

মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০১৯

আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলবে ২ মে পর্যন্ত


মোল্লা জসিমউদ্দিন - টিপু, 

সোমবার দুপুরে রাজ্য বার কাউন্সিল এর জরুরি বৈঠকে হাওড়া কান্ডে কর্মবিরতি নিয়ে জট কাটলো না। উল্টে আগামী ২ রা মে পর্যন্ত তা বহাল রাখার সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশও হয়ে গেল। অর্থাৎ গত বুধবার অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে যে সংঘর্ষ পুলিশ বনাম আইনজীবীদের মধ্যে হয়েছিল। তার রেশ কমছে না, উল্টে ক্রমশ বেড়েই চলেছে ভোগান্তি । ইতিমধ্যেই টানা ছয়দিন ধরে রাজ্যের সবকটি আদালতে আইনজীবীদের সার্বিকভাবে কর্মবিরতি চলেছে এবং সেইসাথে আরও তিনদিন চলবে উকিলবাবুদের এই কর্মসূচি। অর্থাৎ টানা নয়দিনের সময়সীমায় আদালত একপ্রকার বিচারপ্রার্থীদের কাছে বন্ধ রইলো। এতে চরম বিপাকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীরা। এমনতেই মামলার পাহাড় ক্রমশ বাড়ছে বিভিন্ন আদালতের বুকে। এক বিচারপ্রার্থী জানান - "কর্মবিরতি ছাড়াও অন্যভাবে প্রতিবাদ উকিলবাবুরা জানাতে পারতেন। এর ফলে আমরা মামলায় ডেটের পর ডেট  পাচ্ছি, যারফলে সমস্যা আরও বাড়ছে আমাদের  "। জানা গেছে,  গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে তুমুল মারপিট হয় পুলিশ বনাম আইনজীবীদের মধ্যে।ঘটনার দিনেই রাজ্যের সব আদালতের আইনজীবীরা ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে দেন। সেদিনই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে হাওড়া জেলাজাজের কাছে রিপোর্ট তলব করে। বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেন হাওড়া জেলাজাজ৷ শুক্রবার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিরা হাওড়া জেলা আদালতে যায়। বার এসোসিয়েশনের পাশাপাশি জেলাজাজের চেম্বারে বৈঠক হয়। বার কাউন্সিল এর পক্ষে আহত ছাব্বিশ জন আইনজীবীদের চিকিৎসার জন্য কুড়ি হাজার টাকা সাহায্য করে। তবে পরিস্কারভাবে হাওড়া জেলা বার এসোসিয়েশন জানিয়ে দেয় - হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় চার আইপিএসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে, সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে। এছাড়া রাজ্য সরকারের কাছে আহত পিছু পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ অর্থাৎ এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা উকিলদের দিতে হবে। এইরূপ পরিস্থিতির মাঝে হাওড়া জেলা আদালতের পনেরোজন  সরকারি উকিল (পিপি) দের মধ্যে এগারোজন ইস্তফাপত্র দেয় গত বুধবারের পুলিশি সন্ত্রাস অভিযোগ তুলে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে আলাপ আলোচনায় বসেন বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিরা। সেখানে এখনও অবধি কোন সমাধান সুত্র বের হয়নি বলে প্রকাশ। আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কেননা ইতিমধ্যেই তাঁর দপ্তর ( রেজিস্ট্রার জেলারেল)  হাওড়া জেলা আদালতের জেলাজাজের কাছে রিপোর্ট নিয়েছে৷ সেইসাথে আইনজীবীদের সাথে দফায় দফায় তিনি বসেছেন।পুলিশ বনাম আইনজীবীদের এহেন গন্ডগোলে সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। এটি শুধু কোন নিদিষ্ট আদালতের কর্মবিরতি নয়। সমগ্র রাজ্য জুড়ে চলছে। এই কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে  কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও। কেননা অবাধ নির্বাচনের লক্ষে পেন্ডিং ওয়ারেন্ট গুলি কার্যকর করার যে নির্দেশিকা দেয়। তার বাস্তব প্রতিফলন হচ্ছেনা আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকার জন্য। এই জটিল পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কে কোন সদর্থক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। যেখানে গোটা রাজ্যের প্রায় মানুষ  আদালতে কর্মবিরতিতে কমবেশি বিপযস্ত হচ্ছেন সেখানে রাজ্য প্রশাসন চুপ কেন?  সে নিয়েও উঠেছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ীর পার্কিং নিয়ে রণক্ষেত্র রুপ নিয়েছিল গোটা এলাকা। আদালত চত্বরে তো বটেই বিভিন্ন বিচারকের এজলাসেও তান্ডবলীলা দেখা যায় পুলিশের। এমনকি এক মহিলা আইনজীবী কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায় এক সিভিক পুলিশ কে। ঘটনার প্রায় ভিডিওগ্রাপি দেখা যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।সেইসাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এইসব ভিডিও। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন কেন অভিযুক্ত পুলিশঅফিসার দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কাটোয়া মহকুমা আদালতের আইনজীবী অনিন্দ চট্টরাজ বলেন - আমাদের সহকর্মীরা রাস্তায় মার খেয়ে রক্তাক্ত হবে, আর আমরা বসে থাকবো?                                                                                                                                                                                                                                             

    

অনুব্রতের খাস তালুক মঙ্গলকোটে ভোট হল ইভিএমে আতর রেখে




মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

চতুর্থ  দফা নির্বাচনে যে আটটি আসনে ভোটপর্ব মিটলো, তাদের মধ্যে বোলপুর লোকসভার অধীনে কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট ও আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকা এবং বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের অধীনে থাকা কাটোয়া, কালনা, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষীন বিধানসভা এলাকায় ভোট মোটামুটি শান্তিতেই মিটলো। সেইসাথে বর্ধমান পশ্চিম ( দুর্গাপুর)  কেন্দ্রের অধীনে মন্তেশ্বর বিধানসভা এলাকায় বড় ধরনের কোন গন্ডগোলের খবর মিলেনি। হানাহানি না ঘটায় শাসকদল সহ বিরোধীদলগুলিও একপ্রকার খুশি বলা যায়।তবে এই ভোটে নীরব সন্ত্রাস টি সুসংগঠিতভাবে ঘটেছে বলে অভিযোগ। কোন কোন ক্ষেত্রে ছাপ্পা, ইভিএম মেশিন খারাপের খবর মিলেছে। আবার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি প্রার্থী কে মারধর সহ গাড়ী ভাঙচুর করার। শাসক শিবিরের পক্ষে অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সোমবার সকালে  বোলপুর আসনের অধিনে থাকা   কেতুগ্রামের খাঁজি বিদ্যালয়ে ১০৪ এবং ১০৭ নং বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সামনেই ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ উঠে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠার সাথেসাথেই নির্বাচন কমিশন অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।   উক্ত দুটি বুথে নুতন প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করে নির্বাচন কমিশন  । এদিন কালনা শহরে যোগীপাড়ায় বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসের উপর হামলার অভিযোগ উঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গাড়ী ভাঙচুর এর পাশাপাশি প্রার্থী কেও মারধর করা হয়েছে। প্রার্থীর হাতে চোট লেগেছে বলে জানা গেছে   । কালনা থানায় এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। যদিও তৃনমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মঙ্গলকোটের চকগ্রামে, বনকাপাসিতে ইভিএম মেশিন বিকল হয় ভোটপর্বের সূচনাতেই। ভোট দিতে আসা ব্যক্তিরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভাতারে দশের বেশি বুথে ইভিএম বিকল দেখা যায়। পূর্বস্থলীর পাটুলির (ছাব্বিশ নং বুথে)  তেও একই অবস্থা। ঘন্টা খানেক পরে অবশ্য সচল ইভিএম দেওয়া হয় বুথগুলিতে। অপরদিকে মঙ্গলকোটের মাঝীগ্রামে বকুলিয়ার ১৩২ নং বুথে ইভিএমে তৃণমূল  প্রতীকে আতর দেওয়ার অভিযোগ উঠে ভোটকর্মীদের ম্যানেজ করে । এমনকি ভোট দেওয়ার পর বুথের দুশো মিটারের মধ্যে থাকা শতাধিক শাসকদলের  লোকজন সেই ভোটারের হাতের আঙুলের ঘ্রাণ নিয়ে ভোট তাদের পক্ষে দিয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা নীরিক্ষা চালায় বলে অভিযোগ। মঙ্গলকোটের কামালপুরে বাইশটি পরিবার কে ভোটগ্রহণের আগের দিন ভোট না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে মঙ্গলকোটের গোতিস্টা, চৈতন্যপুর  প্রভৃতি গ্রামের বুথগুলিতে স্বনির্ভর গ্রুপের মহিলাদের মহিলা ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলগুলির পক্ষে। তবে সমস্ত  অভিযোগ অস্বীকার করে তৃনমূলের ব্লক নেতৃত্ব জানিয়েছেন - "রক্তপাতহীন ভোট  হয়েছে,  বিরোধীরা শতকরা আশিভাগ বুথে এজেন্ট বসাতেই পারিনি। যদি বলতো তাহলে আমাদের লোক জোগাড় করে দিতাম!" গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মঙ্গলকোট বিরোধীশুন্য হয়েছিল। তাই এবার লোকসভায় মন খুলে ভোট দেবে বলে আশাও করেছিল বেশিরভাগ ভোটার। সেই আশাতেও জল ঢালে শাসক দলের স্থানীয় নেতারা। ভোটের দশদিন আগে লোকদেখানো দুই থেকে তিনবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা রুটমার্চ করলেও, নির্ভয়ে ভোটদানের সেইরুপ আশা জোগাতে পারেনি। জানা গেছে, মঙ্গলকোটের চৈতন্যপুর, গোতিস্টা, পালিগ্রাম, মাঝীগ্রাম প্রভৃতি গ্রামের বুথে গত রবিবার দুপুরের মধ্যে ভোটকর্মী সহ দুই জন গড়ে জওয়ান ঢুকে যান। স্বনির্ভর গ্রুপের মহিলাদের হাতের তৈরি খাবার তৃণমূলের স্থানীয়  বুথ কর্মীরা ভোটকর্মীদের হাতে দেয়। সেইসব সিগারেট - খৈনি সহ নানান খাবার পৌঁছে দেয় বলে অভিযোগ। সেটিং ফিটিংস করে যতদুর ম্যানেজ করতে হয় করেছে তারা। যারা প্রতিবাদী ভোটকর্মী তাদের কে তাদের স্ত্রীর সিঁথির সিঁদুরের কথা তুলে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটকর্মী জানিয়েছেন। তাই তো মঙ্গলকোটের মাঝীগ্রামে বকুলিয়ার ১৩২ নং বুথে ইভিএম মেশিনে তৃনমূল প্রতীকে আতর দেওয়া কিংবা মঙ্গলকোটে প্রায় বুথে খাবার সাপ্লাইকারী স্বনির্ভর গ্রুপের মহিলাদের শাসকদের হয়ে ভোট করানোর অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবার শাসকদলের সারাদিনের দায়িত্বে থাকা তিন বুথএজেন্টদের একসাথে ভোট লুটে বিশেষ সক্রিয়তা চোখে পড়েছে। জানা গেছে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তুলে লিখিতভাবে জানিয়েছে বিজেপি শিবির।                                                                                                                                                                          

সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০১৯

আইনজীবী দের কর্মবিরতি, দুর্ভোগে বিচারপ্রার্থীরা




মোল্লা জসিমউদ্দিন,  

পশ্চিমবঙ্গে গত বুধবার দুপুরে হাওড়া জেলা আদালত চত্বরে গাড়ি পার্কিং ঘিরে যে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে  পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে। তাতে ভোগান্তি পোহাতে যেমন হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের কে। ঠিক তেমনি   বিপাকে পড়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষও বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল    । কেননা গত বুধবার থেকে রাজ্যের সব আদালতেই উকিলবাবুদের কর্মবিরতি চলছে,এরফলে সমস্ত বিচার-প্রক্রিয়া বন্ধ প্রায় বলা যায়  । এবং  সোমবার পর্যন্ত আইনজীবীদের   এই কর্মবিরতি  চলবে। অর্থাৎ চারদিন ওয়ার্কিং ডে আদালতে নষ্ট   হয়েছে। যারফলে অবাধ নির্বাচনের লক্ষে যে ওয়ারেন্ট গুলি  পড়ে রয়েছে, সেগুলি ডিসপোজাল হয়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে   ।  আসামি কিংবা অভিযুক্তরা  আগাম জামিন কিংবা এজলাসে হাজিরা দিয়েও  তা পাচ্ছেনা। যার ফলে ভোট প্রক্রিয়ায় দাগী আসামিদের কাছে ভোটের দিন গন্ডগোলের আশংকা থেকেই যায়। চলতি লোকসভা নির্বাচনে ইতিমধ্যেই তিন দফা ভোট হলেও এখনও চারদফা ভোট বাকি রয়েছে। নির্বাচনী বিধি চালু হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে রাজ্য পুলিশ ভায়া হয়ে প্রতিটি পুলিশসুপার থেকে ওসিস্তরের আধিকারিকদের  কাছে  সংশ্লিষ্ট জেলা কিংবা থানায় ফৌজদারি মামলাগুলির ওয়ারেন্ট তালিকা যায়। সেইসাথে ভোটের পূর্বে সেইসব মামলায় আসামি / অভিযুক্তদের পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে দেয়।কেননা নির্বাচন কমিশনের রোষানলে তারা পড়তে পারেন ওয়ারেন্ট গুলি তে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়াতে বিভিন্ন মহকুমা থেকে জেলা আদালতে এসিজেম এজলাস থেকে ডিস্ট্রিক জাজের এজলাসে জামিনের আবেদন জমা পড়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে। চলতি লোকসভা নির্বাচনের তিন দফায় উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভোট হলেও চতুর্থ দফায় অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল রাজ্যের ৮ টি আসনে ভোট হচ্ছে। এই ৮ টি আসনে অর্ধেকের বেশী উত্তেজনাময় বুথ হিসাবে পরিচিত। যার জন্য প্রায় ১০০ ভাগ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা থাকছেন। ঠিক এইরূপ পরিস্থিতিতে গত বুধবার দুপুর থেকে যে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে রাজ্যের সব আদালতে। সেখানে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি / অভিযুক্তরা কোন জামিনের আবেদন জানাতেই পারেনি 'বিদ্রোহী'  আইনজীবীদের সৌজন্যে  । যেদিন ভোট অর্থাৎ সোমবার অবধি কর্মবিরতি বহাল থাকছে। যারফলে যেমন জামিনের সুযোগ মিললো না। ঠিক তেমনি ' জেল বার্ডস' আসামিরা ভোটের দিন গন্ডগোল করতেও  পারে। এইরূপ আশংকা করছে নির্বাচন কমিশন। গত বুধবার হাওড়া আদালতে যে মারপিট পুলিশ বনাম আইনজীবীদের মধ্যে হয়। সেখানে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে  বিচারপ্রার্থীরা। সিভিল অর্থাৎ দেওয়ানি মামলাগুলিতে আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি সেইরুপ প্রভাব  ফেললেও ক্রিমিনাল অর্থাৎ ফৌজদারী মামলায় বিচারপ্রার্থীরা সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন।এটি কোন নিদিষ্ট আদালতের ঘটনা নয় সমগ্র রাজ্যের মহকুমা / জেলাস্তরের আদালতে প্রভাব পড়েছে। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টেও একপ্রকার অচলাবস্থা চলছে। জানা গেছে, আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিদের সাথে বসছেন হাওড়া আদালতে পুলিশি সন্ত্রাস অভিযোগ টি নিয়ে। ইতিমধ্যেই তিনি হাওড়া জেলা জজের কাছে রিপোর্ট নিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার  তিনি কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে জানা গেছে, আগামী সোমবার হাওড়া আদালতে এসিজেম এজলাসে অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করার আবেদন জমা পড়তে পারে আইনজীবীদের তরফে। অভিযোগ উঠেছে, গত বুধবার দুপুরে হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে মারপিটে ঘটনায় আহতদের হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হচ্ছে সম্ভাব্য মামলার গুরত্ব কমানোর জন্য। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যম   কে জানিয়েছে - অল্পবিস্তর আহতদের চিকিৎসা করিয়ে ডিসচার্জ করানো হয়েছে। ' বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ' এর সদস্য তথা কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল বলেন -" বিষয়টি এখন বিচারধীন, আমাদের চেয়ারম্যান অশোক দেবের নেতৃত্বে আগামী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে বৈঠক হবে। তারপর আমরা আমাদের আন্দ্রলোনের কর্মসূচি জানাবো। "  উল্লেখ্য কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি চেন্নাই হাইকোর্টে থাকাকালীন পুলিশ বনাম আইনজীবীদের অনুরুপ মামলায় তিনশ পাতার অর্ডার দিয়েছিলেন। তাই আগামী মঙ্গলবার তিনি হাওড়া জেলা আদালতের ঘটনায় কি ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন, তার দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্যবাসী। লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে এইরুপ পুলিশ বনাম আইনজীবীদের রণক্ষেত্র ঘটনা শুধু এই রাজ্য নয় গোটা দেশের কাছে এক অনন্য মাত্রা এনে দিয়েছে।গত বুধবারের ঘটনায় হাওড়া জেলা আদালতের ১৫ জন পিপি ( সরকারি উকিল)  দের মধ্যে সিংহভাগই ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।                                                                                                                                                                                                                                                                      

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER