মঙ্গলবার, জুন ২০, ২০১৭

পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত অধ্যক্ষ মহারাজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হল বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠের গঙ্গাতীরে

হাওড়া: পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত অধ্যক্ষ মহারাজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হল বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠের গঙ্গাতীরে। সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ শুরু হয় অন্ত্যেষ্টির কাজ। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ভক্তদের ঢ্ল নামে বেলুড় মঠে। এর আগে দেহ নিয়ে মঠের বিভিন্ন মন্দির পরিক্রমা করা হয়।  বাসভবনেও আনা হয় মহারাজের দেহ। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে গান স্যালুট দেওয়া হয়। এদিন রাত ৮-১০ নাগাগ কালচারাল হল থেকে শেষযত্রা শুরু হয়। এরপর রামকৃষ্ণদেবের মন্দিরের সামনে আনা হয় দেহ। ৮-২৫ থেকে ৯টা পর্যন্ত মঠ প্রাঙ্গনে দেহ শায়িত রাখা হয়। এরপর ব্রহ্মানন্দ মন্দিরে আনা হয় তার দেহ। এরপর  মায়ের ঘাটে স্নান করানো হয়। এখান থেকে স্বামী বিবেকান্দের মন্দিরে দেহ আনা হয়। এরপর গঙ্গাতীরে তাঁর শেষকৃত্য-র কাজ শুরু হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই লাখো ভক্ত শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মঠের সমস্ত প্রবীণ সন্ন্যাসীগণ। রাজ্য সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম। রবিবার রাতে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়াত মহারাজের দেহ প্রথমে বেলুড় মঠে আনা হয়। ভক্তদের দর্শনের জন্য মঠের প্রধান ফটক সারারাত খোলা রাখা হয়েছিল। রাত থেকেই ভক্তরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে মহারাজকে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্বেতপদ্ম, ফুল, মালা দিয়ে ভক্তেরা অন্তিম শ্রদ্ধা জানান প্রিয় মহারাজকে। সোমবার রাত পর্যন্ত সেই দেহ সকলের দর্শনের জন্য শায়িত রাখা হবে। প্রয়াত স্বামী আত্মস্থানন্দজি মহারাজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন বেলুড় মঠ প্রাঙ্গনে লাখো ভক্তের সমাগম ঘটে। পুষ্পস্তবক দিয়ে চোখের জলে প্রিয় মহারাজকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের অসংখ্য অনুরাগীও মহারাজের প্রয়াণে শোকবার্তা দেন। গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী রবিবারই রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে ছুটে যান। প্রয়াণের খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে ফোন করে মঠের মহারাজদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানম্নত্রীর দপ্তর থেকেও ফোন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটে শোকজ্ঞাপন করে বার্তা দেন। রবিবার রাতের পর সোমবার সকাল থেকে ভক্তদের ঢ্ল নামে বেলুড় মঠে। প্রয়াত মঠের অধ্যক্ষ মহারাজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সবাই। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পুষ্পস্তবক পাঠানো হয়। সকালে মঠে এসে একে একে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান মন্ত্রী অরূপ রায়, সাংসদ মুকুল রায়, হাওড়ার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্ত্তী, ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়, মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্লা, পুলিশ কমিশনার ডি.পি.সিং, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে পুষ্পস্তবক দেন মন্ত্রী অরূপ রায়। উল্লেখ্য, রবিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে প্রয়াত হন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দজী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ২ দিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। তাঁর চিকিৎসা চলছিল কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে। গত ২০১৫ র ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তিনি এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার আত্মস্থানন্দজির স্টেন্ট বদল করা হয়েছিল। এর একদিন পর থেকেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চিকিৎসাতেও সাড়া দিচ্ছিলেন না। শুক্রবার থেকে অসুস্থতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। রক্তচাপজনিত সমস্যার সঙ্গে শুরু হয়েছিল শ্বাসকষ্ট। ডায়ালিসিস করার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত রবিবার তাঁর জীবনাবসান হয়। স্বামী আত্মস্থানন্দ মহারাজ ১৯১৯ সালে ২১ মে জন্ম নিয়েছিলেন অধুনা বাংলাদেশের সাহাবাজপুরে। দেড় দশক পর ১৯৩৮ সালে স্বামী বিরজানন্দ মজারাজের সান্নিধ্যে মন্ত্র দীক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। ঠিক তার তিন বছরের মাথায় ১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি মঠে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। নাম হয় স্বামী আত্মস্থানন্দ। ২০০৭ সালের ৩ ডিসেম্বর মঠের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।

সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী:

রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি স্বামী আত্মস্থানন্দজী মহারাজ ঢাকার কাছে সাবাজপুরে ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে স্বামী বিজনানন্দজি মহারাজের কাছে দীক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বেলুড় মঠে ২২ বছর বয়েসে যোগ দেন। ১৯৪৫ সালে মঠের সভাপতি স্বামী বীরাজানন্দজী মহারাজের আদেশ অনুযায়ী ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করতে শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি সন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম হয় আত্মস্থানন্দ। এরপর তিনি বেলুড় মঠ এবং দেওঘর বিদ্যাপিঠ এবং তার শাখা মায়াবতী অদ্বৈত আশ্রমে দীর্ঘদিন ধরে সেবাকার্য করে গেছেন। তিনি বহু বছর নির্জন  হিমালয়ের সিমলার তালে কাটিয়েছেন।১৯৫২ সালে তিনি রাঁচিরর টিবি স্যানেটরিয়াম ব্রাঞ্চে এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে সেক্রেটারি হিসেবে তাঁকে রেঙ্গুন সেবাশ্রমে পাঠান হয়। সেখানে তিনি সেই সেবাশ্রমকে আধুনিক করেন এবং খুব তাড়াতাড়ি তা সেই সময় সেরা হাসপাতাল রূপে পরিগণিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে যখন রেঙ্গুনে সামরিক শাসন শুরু হল, তিনি ভারতে ফিরে এলেন। ১৯৬৬ সালে রাজকোট ব্রাঞ্চের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়। তাঁরই উদ্যোগে রাজকোট আশ্রমে রামকৃষ্ণের সুন্দর মন্দির তৈরি হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের গভর্নিং বডির সদস্য এবং রামকৃষ্ণ মঠের ট্রাস্টি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে দুই সংস্থার এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হন। তাঁকে মঠ এবং মিশনের রিলিফ অপারেশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার নেতৃত্ব ভারত, বাংলাদেশএবং নেপালের বিভিন্ন জায়গায় রিলিফ এবং পুনর্বাসনের কাজ করেছেন।১৯৯২তে তিনি মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক হন। পাঁচ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। এই সময়ে তিনি দেশের অনেক শাখাগুলিতে যান। ১৯৯৮তে তিনি আমেরিকা, কানাডা, জাপান, এবং সিঙ্গাপুরএর অনেক জায়গায় তিনি গিয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি মালয়েশিয়া, ফিজি, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। এই সকল জায়গায় তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীসারদাদেবী, স্বামী বিবেকানন্দ এবং বেদান্তকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভক্তদের দিয়েছিলেন মন্ত্র দীক্ষা। স্বামী আত্মস্থানন্দজী মহারাজ ২০০৭ এর ৩ ডিসেম্বর থেকে রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি মিশন ও মঠের ১৫ তম প্রেসিডেন্ট।

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER