'করোনা' ও 'যান্ত্রিক-নববর্ষ' !
অদিতি চট্টপাধ্যায়,
ক্যালেন্ডারের পাতা উলটিয়ে দেখতে দেখতে আরও একটা নতুন বছর (1427 ) চলে এল | বছর ভরকার লাভ-লোকসানের হিসেব-নিকেশ, চাওয়া-পাওয়া বাদ দিয়েও এবারের নববর্ষটা যেন একটু অন্যরকম | যেন কিছুটা হলেও ফিকে | এ নববর্ষ যেন যান্ত্রিক ! কেন ?
কারণ "করোনা" নামক এক ভাইরাস মানব জীবনকে ক্রমশঃ অতিস্থ্য করে দিয়েছে | চিন থেকে এর উৎপাত শুরু হয়ে কম-বেশি বিশ্বের আজ দুশোটি দেশে এই ভাইরাসের অবাধ বিচরণ | আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে | দেশব্যাপী শুরু হয়েছে লক ডাউন অর্থাৎ গৃহবন্দী | মাছ, মাংস, ওষুধ, সবজি সহ প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার ও দোকান খোলা থাকলেও নিদিষ্ট্য দূরত্ব মেনে ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা সংগ্রহ করতে হবে | এ যেন বড় জ্বালা ! গিন্নির ফরমায়েশ ও কর্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ! চাকরি হারানোর আশঙ্কা | আমেরিকার মত বিত্ত্ববান, সংমৃদ্ধিশালী দেশের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভারতের মত দেশে যেখানে বর্তমানে জিডিপির হার তলানিতে থেকেছে সেই দেশের 130 কোটি মানুষের ঠিক কি অবস্থা হতে পারে ? চিন্তায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা আজ সকলেই ! বিশেজ্ঞদদের মতে ঠিক সময়ে যদি লক ডাউন না হত দেশে সংক্রমণের হার আট লক্ষেরও কিছু কম-বেশি হত | ওপর দিকে লক ডাউনের জেরে দিন পিছু কোটি কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি অর্থাৎ লোকসান | প্রচুর টাকার রাজস্ব ঘাটতি | প্রাইভেট কর্মীদের চাকরি থাকবে কি থাকবে না দুশ্চিন্তার মাথা-ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের | যে যে পেশাতেই থাকুক না কেন আজ যেন আয়- ব্যায়ের সমতা বজায় থাকছে না | পেট যে কোন কিছুর বাঁধ মানে না !
মহানগর থেকে জেলা, ছাড়িয়ে মফস্বল, গ্রামাঞ্চল সব জায়গাতেই একশো টাকায় জোড়া টি-শার্ট সেই চেনা পরিচিত সুর এবছর কানে এলনা | বছরভর আমজনতা চৈত্র সেলের জন্য অপেক্ষা করে থাকে | গৃহস্থের টানাপোড়েনের মধ্যে যা কিছু কেনার খামতি থেকে যায় তা কেনার যেন এটাই মোক্ষম সময় | কিন্তু এবারে সব মাটি ! জমজমাট বাজারগুলি চেনা যেন দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে | গাঁ ঘরের গিন্নির ভাষায়, আ মরণ, 'কি যে করোনা নামক ভাইরাস এল, জীবনটাকে পুরো ছাড়খার করে দিল গাঁ ! কত সাধ ছিল বাবুলের বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে এবারে একটা বালুচরি তাঁত কিনবো তা আর এ বছর হল না ! ধুর ছাই' !
অগত্যা ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও কাটছাঁট | বাড়িতে বসেই কোনোরকমে আড়ম্বর ছাড়া তা পালন করা | শিশু মন কিন্তু এতসব কিছুতে বাঁধ মানে না ! আগেরবার বছর পাঁচেকের রাজুকে মনসুর চাচা তাঁর দর্জির দোকানে ডেকে নিয়ে গিয়ে বড় বড় চমচম খাইয়েছিল | পাশের বাড়ি কার্তিক কাকুও হালখাতার মিষ্টি পাঠিয়েছিল | আম্মিও হাসিনা চাচির বাড়িতে রান্না শেষে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে এসেছিল | এবারে কি মনসুর চাচা, কার্তিক কাকু, হাসিনা চাচীরা মিষ্টি দেবে না আব্বু !