একজন নিরক্ষর রিক্সা চালক তারা মিয়া। করোনা যুদ্ধেও থেমে নেই তাঁর মানবিকতার কাজ।
বাবুল সাহা
করোনা যুদ্ধে একজন নিরক্ষর রিক্সাচালক তার মানবিকতার হাত প্রসারিত করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের দুর্গাপুর উপজেলার চকলেঙ্গুরা গ্ৰামের বাসিন্দা। এই রিক্সা চালক তারা মিয়া(৩৩)। তিনি ১মে শুক্রবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে জনসম্মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ হাজার ২০০ শত টাকা সংসদ সদস্য মানু মজুমদারের হাতে তুলে দেন। তারা মিয়া প্রতিনিধিকে ৩০ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে এ কাজটি যে তিনি করতে যাচ্ছেন তা জানিয়েছিলেন। তিনি হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। এরকম পরিবারে জন্ম হওয়ায় তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি। তার বাবা আব্দুল হেলিম ছিলেন একজন দিনমজুর। এই গরীব দিনমজুরের তিন সন্তানের মধ্যে তারা মিয়া সবার বড় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই ঘাত, প্রতিঘাতের মধ্যেই তার বেড়ে ওঠা। তার বাড়ির অদূরে সোমেশ্বরী নদীতে সে এবং তার স্ত্রী নাজমা আক্তার (২৯) নদী থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিক্রি করে সংসার চালাতো। তাদের দুটো সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে রিফাত মিয়া (১১) বাড়ির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। ১ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। এক পর্যায়ে তারা মিয়া কিছু অর্থ সঞ্চয় করে একটি রিক্সা করে চালানো শুরু করেন। তার স্ত্রী এখনও কয়লা শ্রমিক। তারা মিয়ার স্বপ্ন ছিল নিজে অর্থের অভাবে যেহেতু পড়ালেখা করতে পারেনি ,তারমত যেন কোন গরিবের সন্তান লেখাপড়া থেকে ঝড়ে না পরেন। সেই মানষিকতা নিয়ে দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে অন্ততঃ ১৫ টি প্রাইমারি স্কুলের অতি গরিব ছেলেমেয়েদের ও প্রতিবন্ধী শিশুদের খাতা ,কলম, পোশাক, টিফিন বক্স, খেলার বল দিয়ে তার সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছেন। তার এই কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সন্মানিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে এ যাবৎ যত অর্থ পেয়েছেন তাও তিনি হতদরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে যা আয় করেন তা থেকে প্রতিদিন ২০/২৫ টাকা করে নিয়মিত তার বাড়িতে নিজস্ব মাটির ব্যাংকে জমা করে , সেই টাকা দিয়েই তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ান। সংসদ সদস্য মানুষ মজুমদারের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও ফারজানা খানম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আল আজাদ, আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলী আজগর, পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় সুসঙ্গ বার্তা পত্রিকার সম্পাদক জামাল তালুকদার সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। করোনার কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় , রিক্সা চালক তারা মিয়া তার জমানো ১০ হাজার ২০০ শত টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তুলে দেন। তারা মিয়া বলেন, আমি নিজেও গরীব মানুষ । তবু আমি নিজে আয় করে পরিবার নিয়ে খেতে পারছি। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি গত কারনে আমার চেয়ে যারা আরো গরিব , তাঁদের জন্য আমার এই উদ্যোগ। ত্রাণ তহবিলে আমি টাকা জমা দিতে পেরে খুশি। সংসদ সদস্য মানু মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, হতদরিদ্র এই মানুষটির মহানুভবতা দেখে সমাজের বিত্তবানদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।