মোল্লা জসিমউদ্দিন,
আজ অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে বহু চর্চিত 'হাওড়া আদালত কান্ড' নিয়ে শুনানি রয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। এই বেঞ্চের অর্ডারের দিকে তাকিয়ে আইনজীবীমহল। শুধু তাই নয় সমগ্র রাজ্যের বিচারপ্রার্থীরাও মুখিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দিকে। টানা ১৬ দিন চলছে রাজ্যের সব আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি। এতে আইনজীবিদের পেশাগত আয়ে যেমন টান পড়েছে। ঠিক তেমনি আবার বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেসব অভিযুক্তেরা জেল কিংবা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে, তাছাড়া যাদের মামলার রায়দান গত দু'সপ্তাহের মধ্যে ছিল। তাদেরও হয়রানি ক্রমশ বাড়ছে আইনজীবীদের এই কর্মবিরতির ফলে । এই দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে ওয়াকিবহালমহল মনে করছে। কেননা 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর ঘোষিত কর্মবিরতি আগামী ১৪ মে অবধি থাকলেও সেটা আরও বর্ধিত হতে পারে। কেননা গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া আদালত কান্ডে নাম জড়িয়েছে চার আইপিএসের। এদের মধ্যে আবার পুলিশ কমিশনারও রয়েছেন! তাই আইপিএসদের বিরুদ্ধে শাস্তিদানের দাবিতে সরব আইনজীবীরা যতদিন না আদালতে অর্ডার পাবেন। ততদিন আন্দ্রোলনে 'শেষ অস্ত্র' কর্মবিরতির ব্যবহার চলবে বলে মনে করা হচ্ছে । উল্টো দিকে রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল তিনিও অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়ে সরব হবেন এজলাসে। গত ৮ মে এই মামলার প্রথম শুনানিতে তার ইংগিত তিনি দিয়েছেন অবশ্য। হাওড়া আদালতের বার এসোসিয়েশন চার আইপিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও সেদিন এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত কোন নিদিষ্ট আবেদন পেশ হয়নি বলে সওয়াল করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে । এরেই মাঝে 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর প্রতিনিধিরা রাজ্যের আইনমন্ত্রীর সাথে হাওড়া আদালত কান্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে নাকি আইনমন্ত্রী অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশ ব্যাপক মারধর চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। সেদিন বেলা দশটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত অর্থাৎ টানা নয় ঘন্টা তান্ডবলীলা চলে। ঘটনায় ২৬ জন আইনজীবী আহত হন। ঘটনার সময় পুলিশের তরফে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। ঘটনার প্রায় অংশ বিভিন্ন বৈদ্যতিন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়। এই দেখে ঘটনার পরের দিন ২৫ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের তরফে হাওড়া জেলাজজের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। এবং সেইসাথে হাওড়া পুলিশ কমিশনার, পুরসভা, স্থানীয় থানার পুলিশ এর কাছেও রিপোর্ট চাওয়া হয়। এরেই মাঝে অবশ্য 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর প্রতিনিধিরা হাওড়া জেলা আদালতে বার এসোসিয়েশন সহ জেলাজজের কাছে ঘটনার বিবরণ নেন এবং আহত আইনজীবীদের চিকিৎসার জন্য কুড়ি হাজার টাকা দেওয়া হয়। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের জোনাল জাস্টিস সহ পাঁচ জন বিচারপতি হাওড়া আদালতে আইনজীবী সহ জেলাজজের কাছে রিপোর্ট নেন। গত ২৯ এপ্রিল হাওড়া জেলাজজ, হাওড়া পুলিশ কমিশনার, পুরসভা, থানা সহ পাঁচজন বিচারপতির পর্যবেক্ষণ জানার পর প্রধান বিচারপতি স্বতঃস্ফূর্ত মামলার নির্দেশ দেন। এই মামলার প্রথম শুনানি ছিল গত ৮ মে। সেখানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য বার কাউন্সিল কে মামলায় যুক্ত হবার নির্দেশ দেন। সেইসাথে ১৩ মে এর মধ্যে হলফনামা পেশের নির্দেশিকাও থাকে। হাওড়া জেলা বার এসোসিয়েশন কেও গত ১০ মে এর মধ্যে হলফনামা পেশের নির্দেশিকা ছিল। রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত প্রথম শুনানিতে হাজির হয়েই আইপিএসদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আবেদন পেশ হয়নি বলে সওয়াল করেন। জানা গেছে, এই মামলার দ্বিতীয় শুনানিতে অর্থাৎ আজ সোমবার দুপুরে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর পক্ষে চারজন আইনজীবী সওয়াল করবেন, অনুরুপভাবে হাওড়া বার এসোসিয়েশন এর পক্ষে চারজন আইনজীবী সওয়াল চালাবেন। রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল থাকছেন। এছাড়া সর্দার আমজাদ আলী, অরুণাভ ঘোষের মত দুঁদে আইনজীবীদের দেখা যেতে পারে সওয়াল জবাব পর্বে। ইতিমধ্যেই পুলিশ ও আইনজীবীদের তরফে ঘটনার দিনে ভিডিওগ্রাফি জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলায় 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলঃ এর চার প্রতিনিধির মধ্যে থাকা বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল বলেন - "আমরা ঘটনাস্থল ঘুরেছি, আক্রান্তদের সাথে কথা বলেছি,সেইসব কথাগুলিই মহামান্য প্রধান বিচারপতির এজলাসে বলতে চাই। "