মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০১৯

মঙ্গলকোটে রাজনৈতিক সন্ত্রাস থামে না


মোল্লা জসিমউদ্দিন,

চলতি লোকসভার চতুর্থ দফার নির্বাচন ইতিমধ্যেই হয়েছে। ভোটপর্ব দুসপ্তাহ কেটে গেলেও হিংসা একফোঁটাও কমেনি। হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও চাপা সন্ত্রাস চলছে মঙ্গলকোটের বুকে। অনেকেই পুলিশের কাছে পৌঁছাতে পারছেনা বলে অভিযোগ।  যারা পৌছাছে থানার দোরগোড়ায়, তাদের গুরতর অভিযোগপত্র আবার কম গুরত্বে মামলা রুজু করা হচ্ছে। আবার পাল্টা মামলায় অভিযোগকারীর দলবলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হচ্ছে জব্ধ করার জন্য।     গত ২৯ এপ্রিল বোলপুর লোকসভার অধীনে মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় ভোটপর্ব মিটেছিল। কোথাও ভোটকর্মীদের সাথে সেটিংস  ফিটিংস করে ইভিএমে আতর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে   । আবার কোথাও স্বনির্ভর গ্রুপের মহিলাদের খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মহিলা ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল। এইরূপ নানান অভিযোগের মাঝে দুটি ঘটনায় তপ্ত হয়েছিল মঙ্গলকোটের বড় অংশ। একটি হল, ভোটের দিন চাণক এলাকায় বিজেপির বুথ এজেন্ট সহ চারজন কে সশস্ত্র হুমকি ও সেইসাথে মারধর চালানো হয়েছিল তৃনমূল আশ্রিত দুস্কৃতিদের তরফে। এই ঘটনায় হাজার হাজার আদিবাসী সংগঠিত হয়ে দফায় দফায় পথ অবরোধ চালায়। থানার মেজবাবুর মৌখিক প্রতিশ্রুতিতেও অবরোধকারীরা শান্ত হয়নি। অবশেষে লিখিত অভিযোগপত্রে থানার ওসির সাক্ষর আদিবাসীদের রণং দেহী অবস্থান কে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। তবে আদিবাসীরা তো অত আইন কানুন বোঝেনা। ভোটের দিন হামলার মূল চক্রীদের গ্রেপ্তারের দাবি তোলা হলেও মামলায় দেখা যায় জামিন যোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি হল, সদর মঙ্গলকোটের পুরাতনহাটে বিজেপির পোলিং এজেন্ট হয়েছিল শান্ত ঘোষ। সে দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির স্থানীয় নেতা রয়েছে।ভোটের দিন, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা   এই বুথে তৃণমূলের সশস্ত্র বাইক বাহিনীর ব্যাপক দৌরাত্ম দেখা যায়। ভোটপর্ব মেটার সাথেসাথেই পেশায় দুগ্ধ ব্যবসায়ীর গরু - ছাগল তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। যাতে আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় অভিযোগ জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। মলকোটের কামালপুরে ভোটের আগের দিন বাইশ টি পরিবার কে ভোট না দেওয়ার ফতোয়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। অনুব্রত মন্ডলের খাস তালুক হিসাবে পরিচিত এই মঙ্গলকোট। যেখানে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীশুন্য ফলাফল এলেও শাসকদলের অন্দরে বিবাদ প্রকাশ্যে আসে। মূলত এই কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সাথে অনুব্রতের লড়াই জমে উঠেছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যেখানে সিদ্দিকুল্লাহ তাঁর সরকারি নিরাপত্তারক্ষী / গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন ক্ষোভে। অভিযোগ, স্থানীয় থানার ওসি কে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলায় তাও গাঁজা পাচারের মত নুন্যতম  দুবছর জামিন না পাওয়ার মামলায় একের পর এক বিধায়ক অনুগামীদের ফাসিয়েছিলেন অনুব্রত অনুগামী নেতারা। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে পঞ্চায়েত ভোটের মতনই লোকসভাতেও সেই চাপা সন্ত্রাস চলছে মঙ্গলকোটের বুকে।                                                                                                                                                                            

বুধবার, মে ২২, ২০১৯

হাওড়া আদালত কান্ডে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট



মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

ঘটনা ১,  গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশি হামলার সময় অর্থাৎ বেলা দশটার পর পৌনে এগারোটা নাগাদ হাওড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাওড়া সদর থানার ওসি কে অবগত করান ঘটনার বিষয়ে। ঘটনা ২,  সেইদিনেই বেলা এগারো টা পনেরো মিনিটে ডিস্ট্রিক্ট জাজ হাওড়া পুলিশ কমিশনার কে তলব করেন। দুটি ঘটনাতেই হাওড়ার সদর থানার ওসি এবং পুলিশ কমিশনার কোন সক্রিয়তা দেখাননি। অথচ শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার হাওড়া আদালত সফরে ঘটনার দিন বিকেলে আদালত চত্বরে ডাইনে বাঁয়ে ঘুরেন তাঁরা। ঘটনা ৩,  গত ১০ ই মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে পাঁচ পুলিশ অফিসার কে তাঁদের কে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশ কে উপেক্ষা করেছে পুলিশ। উল্টে রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত নির্বাচনী আচরণবিধি চালুতে রাজ্যসরকার কোন পদক্ষেপে সক্ষম নয়, এই বার্তা দিতে গেলে কলকাতা হাইকোর্ট চরম ভাবে রাজ্যের এহেন অবস্থান কে কড়া সমালোচনা করে থাকে। গত ২০ এপ্রিল অর্থাৎ সোমবার এই মামলার শেষ শুনানির দিনে সব পক্ষের বক্তব্য শুনার পর কলকাতা হাইকোর্ট পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়,  নির্বাচনী বিধি দোহাই দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের আড়াল করার কোন চেস্টা সফল হবেনা। রাজ্যসরকার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা ঘটনা সম্পকে তাদের অভিমত জানাতে পারতো। এর পরে যদি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের পদক্ষেপ নিয়ে কোন প্রশ্নচিহ্ন তুলতো, তখন নির্বাচন কমিশন কে নির্দেশ দিতে পারতো কলকাতা হাইকোর্ট। শুনানির শেষদিনেও 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে৷ এই সংগঠন কে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়ার কথাও বলা হয় কলকাতা হাইকোর্টের তরফে৷ মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা সিটি সিভিল কোর্টের ষষ্ঠতলায় বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অফিসে বৈঠক চলে। কর্মসমিতির বৈঠকে আগামী ২৪ তারিখ পর্যন্ত পুনরায় সারারাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলবার নির্দেশিকা জারী করা হয়৷ উল্লেখ্য 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ' এর ভুমিকায় ক্ষুব্ধ জেলার বিভিন্ন আদালতের বার এসোসিয়েশন। গত সোমবার কলকাতা সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বার এসোসিয়েশন এর পদাধিকারীদের সরব হতে দেখা যায়। কোথাও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল কে মেরুদণ্ড সোজা রাখার দাবি তোলা হয়। আবার কোথাও বা শাসকদলের দলদাস বৃত্তি থেকে মুক্ত থাকার স্লোগান তোলা হয়। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের এডভোকেট জেনারেল সহ জেলার সদর এবং মহকুমা আদালতে সরকারি আইনজীবীদের গনইস্তফা দেওয়ার দাবি তোলা হয়। উল্লেখ্য হাওড়া জেলা আদালতে সিংহভাগ সরকারি আইনজীবী রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতির প্রথম পয্যায়ে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন।  ইতিমধ্যেই তিনটি পয্যায়ে কর্মবিরতি ২৭ দিন অতিক্রান্ত করেছে। এবং চতুর্থ দফায়  আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়েছে। ঘটনাক্রমে ২৪ মে থেকে ৯ জুন অবধি টানা ১৫ দিন কলকাতা হাইকোর্ট সহ দেওয়ানী আদালতগুলিতে গরমের ছুটি পড়ছে। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে আজ অর্থাৎ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চ হাওড়া কান্ডে রায়দান করতে চলেছে৷ ঘটনার দিন (২৪ এপ্রিল)  হাওড়া সিজেএম সাহেবের ফোনে হাওড়া সদর থানার ওসি কোন ব্যবস্থাগ্রহণ না করা, তারপর জেলাজাজের ফোনে হাওড়া পুলিশ কমিশনার গুরত্ব না দেওয়া। সর্বপরি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এর ডিভিশন বেঞ্চে গত ১০ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হলফনামাজমা দেওয়ার সুযোগ দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করা বিষয়গুলি একপ্রকার আদালত অবমাননার সামিল। এমনকি অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার দের প্রতি রাজ্যের অভিমত অস্বচ্ছ রাখার ঘটনাগুলি পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাগ্রহণের সুত্র হিসাবে উঠে আসছে। যেসব তথ্য রাজ্য সরকার পেশ করেছে সেগুলিও পরস্পর বিরোধী বলে শুনানিতে উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশ কেন এত বেপরোয়া এবং আদালতের প্রতি অবজ্ঞাসূচক বার্তা দিচ্ছে?  তাহলে কি রাজ্যের প্রশাসনিক তরফে গুরত্ব না দেওয়ার নির্দেশ মিলেছে!  রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে থাকা হাওড়া জেলা আদালতে সকাল পৌনে দশটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত টানা ন ঘন্টা তান্ডবলীলা চালালোর জন্য কি সুপরিকল্পিত কোন ষড়যন্ত্র ছিল?  কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিরা পুলিশ নিয়ে তির্যক মন্তব্যও ছুড়েছেন যে সেদিন কি জঙ্গিদের তাড়া করতে হাওড়া জেলা আদালতে অভিযান চালিয়েছিল..                                                                                                                                                                                                                                                                                                                       

কর্মবিরতি নিয়ে ক্ষোভ আইনজীবীদের অন্দরে


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

গত সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে। এজন্য সারা রাজ্যের প্রতিটি মহকুমা এবং জেলা আদালতের বার এসোসিয়েশনের পক্ষে গড়পিছু দশজন করে আইনজীবী প্রতিনিধিত্ব স্বরুপ এসেছিলেন। এছাড়াও ব্যাংকশাল - শিয়ালদহ - আলিপুর - সিটি সেশন এবং সিটি সিভিল কোর্টের আইনজীবীরাও ছিলেন। শ খানেক বিভিন্ন জেলার  আইনজীবীরা ' বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর মঞ্চে আন্দ্রোলন চালালেও বারবার ভেসে উঠে 'আইনজীবী গন ঐক্য' জিন্দাবাদের স্লোগান। বারবার বিভিন্ন বার এসোসিয়েশনের পদাধিকারীদের গলায় উঠে আসে - 'বার কাউন্সিল' কে দলদাস হতে দেব না, কিংবা  'বার কাউন্সিল'  এর  মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। প্রসঙ্গত প্রতিটি জেলার বার এসোসিয়েশন এর প্রতিনিধি হিসাবে বার কাউন্সিল এর সদস্য নির্বাচিত হয়। তাই বিক্ষোভ মঞ্চে বার কাউন্সিল এর পদাধিকারীরা থাকলেও কেউ উচ্চবাক্য করেননি জেলার আইনজীবীদের প্রতিবাদী রুপে। সভায় আগত আইনজীবীদের একাংশ দাবি করেন - এতদিন কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি, তাদের পেশাগত আয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এবং পড়ছে। আবার আইনজীবিদের অপর অংশ মনে করছেন যে,  আদালতের ভেতরে অনুপ্রবেশকারী পুলিশ যেভাবে তান্ডবলীলা চালিয়েছে, তাতে অভিযুক্ত পুলিশঅফিসারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে। মহকুমাস্তরে আদালতে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা যেখানে অনেক সেখানে কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁরা আশাবাদী। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অবস্থান নিয়েও একদল আইনজীবী ক্ষুব্ধ। যদিও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর এক বর্ষীয়ান আইনজীবী জানিয়েছেন - হাওড়া আদালত কান্ড নিয়ে চার থেকে পাঁচবার বৈঠক চলেছে কলকাতা হাইকোর্টে। তবে কোন সমাধান সুত্র বের হয়নি। এছাড়া রাজ্যের আইনমন্ত্রীর কাছে দুবার যাওয়া হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন নাকি। এদিন সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে আইনজীবীদের ধর্নামঞ্চে বারবার স্লোগান উঠে - 'আমরা আইনজীবী, আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাই কোনরকম রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করবো না '। সোমবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার পর কয়েকশো আইনজীবী প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলান। অপরদিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চে এদিনও শুনানি হয়। সব পক্ষের হলফনামা জমা পড়ার পর আগামী বুধবার অর্থাৎ ২২ মে রায়দান দেওয়া হবে বলে কলকাতা হাইকোর্ট সুত্রে  জানা গেছে।     আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর ঘোষিত কর্মবিরতি শেষ হচ্ছে। তাই পুনরায় কর্মবিরতি বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়ে৷ টানা ২৭ দিন কর্মবিরতি চলার পর আর কতদিন বাড়ে তার দিকে মুখিয়ে গোটা রাজ্য। এখনও অবধি রাজ্য সরকারের পক্ষে কোন হস্তক্ষেপ করা হয়নি হাওড়া কান্ডে। যদিও জানা গেছে, সমস্ত পুলিশকর্মী এখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় রয়েছে,  ব্যবস্থাগ্রহণ সম্ভবকর হয়নি। তবে যাইহোক টানা কর্মবিরতি নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ উঠে আসছে। তা আজকের কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে ফুটে উঠলো। কর্মবিরতি নিয়ে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বর্তমান সদস্য আনসার মন্ডল বলেন - "আদালতে অচলাবস্থা কাটুক সেটা আমরাও চাইছি তবে সেটা হাওড়া কান্ডে আক্রান্ত আইনজীবীদের সুবিচার পাইয়ে দিয়ে "।                                                                                                                                                                                                              

    

সোমবার, মে ২০, ২০১৯

আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে রুজিরোজগারে টান খাবারের দোকানগুলিতে


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দাবি পূরণে সাধারণত এক কিংবা দুদিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়। এইবিধ ধর্মঘটে অল্পবিস্তর ক্ষতির মুখ দেখেন ব্যবসায়ীরা।তবে গত ২৪ এপ্রিল থেকে হাওড়া জেলা আদালতে আইনজীবীর পুলিশি পীড়নের ঘটনা কে সামনে রেখে সারারাজ্য জুড়ে আইনজীবীদের যে কর্মবিরতি চলছে তাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে আদালত লাগোয়া হোটেলগুলি।টানা ২৫ দিন আদালত গুলি তে একপ্রকার বনধ চলছে। সেখানে আইনজীবি, মুহুরি, টাইপিস্ট  সর্বপরি বিচারপ্রার্থীরা নেই। তাই আদালত চত্বরে থাকা সমস্ত দোকানই প্রায় বন্ধ। কতটা ক্ষতির মুখে এইবিধ খাবারের দোকানগুলি?  মহকুমা থেকে জেলার সদর আদালত, কিংবা কলকাতার সিটি কোর্ট থেকে হাইকোর্ট সর্বত্রই সেই একই ছবি। কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতে এই প্রতিবেদক সরজমিন খতিয়ে দেখতে গেলে ফুটে উঠে নিম্নমধ্যবিত্ত হোটেলগুলির আর্থিক ক্ষতির ছবি। ব্যাংকশাল আদালতের ৩ নং গেটে এক হোটেল সহ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ সাহা জানান - "এই আদালতে প্রতিদিন গড়ে শয়ে শয়ে বিচারপ্রার্থীরা আসেন, সেইসাথে উকিলবাবু - মুহুরিরা তো আছেনই। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি-বাট্টা হয়। সেখানে প্রায় এক মাস বন্ধ বলা যায় অর্থাৎ এক লক্ষের বেশি অর্থ মাসিক ক্ষতি ধরে নেওয়া যায়। শুধু তাই নয় হোটেলে নিযুক্ত তিন থেকে চারজনের পেছনে প্রতিদিন হাজার টাকা মাইনে দিতে হয়। সেটাও মাসিক ত্রিশ হাজার টাকা বলা যায় "। তাহলে দেখা যাচ্ছে সারারাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে আদালত চত্বরে থাকা হোটেলগুলিতে মাসিক গড়ে একলক্ষ টাকা যেমন আয় হলনা, ঠিক তেমনি স্থায়ী কর্মীদের মাইনে তে ব্যয় হল ত্রিশ হাজার টাকার মত। অর্থাৎ আদালত চত্বরে চালু হোটেলগুলি একমাসের আর্থিক  ক্ষতি   দাঁড়ালো দেড়লক্ষের মত। আদালত চত্বরে থাকা হোটেলগুলির গ্রাহক বলতে বেশিরভাগই বিচারপ্রার্থীরা। কেননা এগুলি প্রায় আদালতের গেটের মধ্যেই থাকে। তাই আদালতে আসা ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কোন ধরনের খদ্দের এখানে আসেনা বললেই চলে। এটা শুধু কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতের খন্ড এক দুর্দশার ছবি নয়, এইরূপ কাটোয়া মহকুমা আদালত - আলিপুর আদালত সহ রাজ্যের সমস্ত আদালত চত্বরে থাকা হোটেলগুলির একই ছবি।  উকিলবাবুরা হয়তো কলকাতা হাইকোর্টের কাছে সুবিচার পাবেন। তারা আবার আদালতের কাজেও যোগ দেবেন। কিন্তু এই টানা কর্মবিরতি তাও রাজ্যব্যাপী কর্মবিরতির সর্বাধিক রেকর্ড সময়সীমা পার করলেন তাতে বিচারপ্রার্থীদের চরম হয়রানির পাশাপাশি খাবারের দোকানগুলিতে যে আর্থিক বিপর্যয় ঘটলো তার দায় কে নেবে?  এরা তো আর চাষীদের চাষাবাদে ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেনা....                                                                                           

পুলিশের বিরুদ্ধে রাজ্যের অবস্থান দেখে হাওড়া কান্ডে রায়দান



মোল্লা জসিমউদ্দিন,         

গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর যে পুলিশি সন্ত্রাস ঘটেছিল। তার পরিপেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে স্বতঃস্ফূর্ত মামলা রুজু হয়।এই মামলায় প্রথম পর্যায়ে অর্থ্যাৎ ৩ মে এবং ৮ মে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি ঘটে। সেইসাথে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে ১৬ মে এবং ১৭ মে পরপর দুদিন ধরে চলে এই মামলার শুনানি হয়। আজ অর্থাৎ  সোমবার দুপুরে পুনরায় এই বেঞ্চে শুনানি রয়েছে।তবে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় রায়দান দিতেও পারে বলে হাইকোর্ট সুত্রে প্রকাশ। তবে গত শুক্রবার সন্ধের মধ্যে রাজ্য কে লিখিত আকারে অভিমত জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এডভোকেট জেনারেল কে। কেননা চলতি লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের সমস্ত পুলিশ আধিকারিকরা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় রয়েছেন। তাই রাজ্যের অভিমত জেনে হাওড়া কান্ডে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কে নির্দেশ দেবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদারের ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট মনে করছে, গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া কান্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে তিন থেকে চারটি বেআইনী  কাজ করার মত ঘটনা ঘটেছে।সেদিনে পুলিশের বিনা অনুমতিতে আদালতের ভেতরে অনুপ্রবেশ, আইনজীবী সসর্বপরি মহিলা আইনজীবীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, এছাড়া টিয়ার গ্যাস চার্জ করা নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ। সেদিনের টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা নিয়ে হাওড়া পুলিশের মালখানার সঠিক হিসাব চাওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে৷ শুনানিতে বারবার আইপিএস বিশাল গর্গ, ভিএসআর অনন্ত নাগ, ভাবনা গুপ্ত, গুলাম সারওয়ার, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিন তামাঙ, রাজশ্রী দত্তদের নাম উঠে এসেছে৷ তাই এইবিধ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে রাজ্য অর্থাৎ নবান্ন কি অভিমত পোষণ করছে তা জেনে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় নির্দেশ দিতে চান।  রাজ্যের তরফে এডভোকেট   জেনারেল কিশোর দত্ত সেদিনের ঘটনায় সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত পুরোটায় বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখার দাবি তুললেও কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ তা খারিজ করে জানিয়ে দেয় যে, এই মামলাটি প্রধান বিচারপতি পুলিশের অনাধিকার প্রবেশ নিয়ে  স্বতঃস্ফূর্ত মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তাঁর বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। হাইকোর্ট প্রশাসনের তরফে আইনজীবী জয়দীপ কর অবগত করান ডিভিশন বেঞ্চ কে - সেদিন ( ২৪ এপ্রিল)  হাওড়া জেলা জজ ঘটনা জেনে দ্রুত পুলিশ কমিশনার কে তলব করেছিলেন বেলা এগারো টা পনেরো মিনিটে। জেলাজজের এহেন নির্দেশ কে মান্যতা দেননি পুলিশ কমিশনার। অথচ বিকেলে এক রাজনৈতিক নেতার সাথে আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়ান তিনি!  এই ঘটনা ঘিরে গত ২৫ এপ্রিল হাওড়া পুলিশ কমিশনার ঘটনার যে তদন্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই তদন্তের কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ। এমনকি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আক্রান্ত মহিলা আইনজীবীর সাথে ঘটনার বিবরণ শুনবার প্রয়োজন বোধ করেন নি। এইবিধ নানান প্রশ্নচিহ্ন হাওড়া পুলিশ কে ঘিরে।                    ইতিমধ্যেই হাওড়া জেলা আদালত কান্ডে পুলিশি সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গোটা রাজ্যজুড়ে আদালত গুলিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। তিনটি পর্যায়ে এই কর্মবিরতি চলবে আগামী ২১ মে অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত। যদিও আইনজীবীমহলে জানা গেছে, যেভাবে বিগত চারটি শুনানিতে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়াল চালাচ্ছেন, তাতে এই মামলা আরও জমে উঠেছে। সেখানে আবার কলকাতা হাইকোর্ট সহ সিভিল কোর্ট গুলিতে ২৪ মে থেকে ৯ জুন অবধি গরমের ছুটি পড়বে। তাই কর্মবিরতি আবার বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে প্রবল।লোকসভা নির্বাচনে পুলিশ ব্যস্ত রয়েছে, তাই ঠিকমতো উত্তর মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে  ।  তাই  এই মামলায় দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদিও কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনায় দ্রুত নিস্পত্তি চাইছে বলে জানা গেছে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে এই ঘটনার কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না অনেকেই।গত  শুক্রবার দুপুরে  হাওড়া কান্ডের  পরিপেক্ষিতে সারা রাজ্যজুড়ে আইনজীবীরা 'ব্লাক ডে' পালন  করেন৷ সেদিন কাটোয়া মহকুমা আদালতে শতাধিক আইনজীবী শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে প্রতিবাদ জানান৷ বিষয় টি নিয়ে যেমন কলকাতা হাইকোর্টে স্বতঃস্ফূর্ত মামলা রুজু হয়েছে। ঠিক তেমনি রাজ্যপাল সহ রাজ্য নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আইনজীবীরা।  হাওড়া কান্ডে কলকাতা হাইকোর্টের চারটি শুনানিতে যেসব প্রশ্নগুলি নিয়ে সওয়াল জবাব চলেছে। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল - গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ সহ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা নিয়ে কার অনুমতি নিয়েছিল পুলিশ?  কেননা জেলা আদালতে সিজেএম সর্বপরি জেলাজাজের অনুমতি না নিয়ে পুলিশ কেন আদালতের ভেতর প্রবেশ করলো?  তাও অফিসটাইমে, যখন সিংহভাগ বিচারকরা তাঁদের এজলাসেই থাকেন। কি এমন পরিস্থিতি যেখানে টিয়ার গ্যাস চার্জ করতে হল?  তাও দুপুর দশটা  থেকে সন্ধে সাতটা অর্থাৎ টানা নয় ঘন্টা কেন পুলিশের তান্ডবলীলা?  পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ ছাড়া কেন মহিলা আইনজীবীদের উপর পুলিশ শারীরিক নিগ্রহ চালালো? এছাড়া মহিলা সিভিকরা কোন আইনী অধিকারে গ্রেপ্তার / আটক করে নিয়ে যায়?   উল্লেখ্য তনুশ্রী দাস নামে এক আইনজীবী 'কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা রাস্ট্রের কর্তব্য ' বিষয়টি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বিশেষ কেস হিসাবে গ্রহণ করার আবেদন জমা দেয়। প্রধান বিচারপতি এই আবেদন গ্রহণ করলেও অন্য মামলাকারীরা যেকোনো মামলায় এটি কে রেফারেন্স হিসাবে নথিভুক্ত করতে পারবে না বলেও অর্ডারে উল্লেখ রেখেছেন।হাওড়া আদালতে সেদিনের ঘটনায় ছাব্বিশজন আইনজীবী আহত হয়েছিলেন। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন ' নবান্ন' থেকে কম দুরত্বে ( ৩ কিমির কম দুরত্ব ) থাকা হাওড়া জেলা আদালতে কেন সেদিন পুলিশ এত বেপরোয়া ছিল, তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।এই ঘটনায় আইনজীবী এবং পুলিশের তরফে ভিডিওগ্রাফি জমা পড়েছে হাইকোর্টে। চলতি লোকসভা নির্বাচন নিয়ে যখন পুলিশ এত ব্যস্ত সেখানে হাওড়া জেলা আদালতে আইনজীবীদের উপর সুপরিকল্পিত হামলা কিভাবে চালালো পুলিশ?  তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাটোয়া মহকুমা আদালতে ফৌজদারি আইনজীবী অনিন্দ চট্টরাজ সহ অনেকেই।                                                                                                                                                                                                                        

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER