পারিজাত মোল্লা,
রাজ্যের অতি ব্যস্ত রুট ৭ নং রাজ্য সড়কের উপর থাকা পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলার সংযোগকারী মঙ্গলকোটের অজয় নদের লোচনদাস সেতু ক্রমশ বিপদজনক হয়ে উঠছে।মূলত পিলার গুলি অনেকাংশে বসে গেছে। সেইসাথে সেতুর পিচের মধ্যে তৈরি হয়েছে ছোটবড় গর্ত। ভারী যানবাহন যাতায়াত করলেই মৃদু কম্পন তৈরি হয়। সেতুর এখানে বেশকিছু প্রাণঘাতী পথদুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে। এই সেতুর উপর প্রত্যেহ হাজারের কাছাকাছি যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। মূলত দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গে যাবার শর্টকার্ট সড়ক রুট এটি। ভাতাড় পূর্ত দপ্তরের অধীনে থাকা এই সেতুর পরিকাঠামো দ্রুত পূন নির্মাণের জন্য ৮৫ লক্ষ অনুদান চাওয়ার প্রস্তাবনা গত মাসে নবান্ন অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসনিক সুত্রে প্রকাশ। পূর্ত দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন - "দ্রুত মেরামতি না হলে এই সেতু বিপদজনক হয়ে উঠবে যানবাহন চালকদের কাছে "। এবারে প্রশ্ন উঠছে মাত্র আঠারো বছর আগে তৈরি করা প্রায় এক কিমি লম্বা এই সেতু কেন এত তাড়াতাড়ি বেহাল হয়ে পড়লো? যার জন্য কোটির কাছাকাছি অর্থ খরচ করতে হবে! এলাকা সুত্রে জানা গেছে, ভুমি সংস্কার দপ্তরের আইন কে তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর সেতুর পিলারের একশো মিটারের মধ্যেই জেসিপি মেশিন দিয়ে যততত্র বালি তোলা হয়েছে। এখনও দিনের পাশাপাশি রাতের বেলায় আলো জ্বালিয়ে বালি তোলা হয় জনসম্মুখে । এরফলে অজয় নদের স্বাভাবিক গতিপথ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটেছে। সেইসাথে বড় বড় চোরাবালি তৈরি হওয়ায় নদীর জোয়ারভাঁটায় পিলার বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্ষাকালে নদীর দুরন্ত স্রোত ক্রমশ বিপদজনক করে তুলেছে অজয়ের গর্ভে থাকা লোচনদাস সেতুর পিলারগুলি কে। এই বেআইনি বালিঘাট গুলির মূল নিয়ন্ত্রক বীরভূম জেলাপরিষদের এক পদাধিকারী বলে অভিযোগ। তাই অতীতে বাম আমলে ডাবলু আনসারী কে যেমন পুলিশ প্রশাসন সেতুর নিচে থাকা বালিঘাট নিস্ক্রিয় করতে ব্যবস্থা নেয়নি। অনুরূপভাবে বীরভূমের বাসাপাড়ার ওই প্রভাবশালী নেতার তদারকিতে থাকা অজয় নদের লোচনদাস সেতুর নিচে বালিঘাট বন্ধে তৎপর নয় বলে অভিযোগ । তবে এজন্য রাজ্য সরকার কে কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে সেতুর মেরামতিতে। যে অর্থ বালির রাজস্ব থেকে এইখানে নূন্যতমও মেলেনা! সেতুর নিচে বালিঘাট গুলি অবস্থানের পাশাপাশি সেতুর উপর প্রতিনিয়ত শয়ে শয়ে অত্যাধিক বালি ও মহম্মদবাজারথেকে পাথর বোঝাই গাড়িগুলি যাতায়াত করায় সেতুর এই বেহাল অবস্থা দিন কে দিন বাড়ছে। পালিতপুর মোড়ে প্রতিদিন কয়েকশো ডাম্পার, লরি, ট্রাক্টর অত্যাধিক বালি বোঝাই করে এই সেতুর উপর দিয়ে কলকাতা - রাজারহাট প্রভৃতি গন্তব্যে যায়। সর্বপরি বীরভূমের পাঁচামি - মহম্মদবাজারে পাথরখাদান গুলি থেকে পাথর বোঝাই করে গাড়িগুলি এই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। বেশিরভাগই অতিরিক্ত বোঝাই করা গাড়িগুলিতে । বীরভূমের নানুর থানা এবং পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার পুলিশ গাড়ী গুলি ধরপাকড় অভিযান করলে আজ এই লোচনদাস সেতুর এই করুন পরিণতি হত না বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । এবং রাজ্য সরকারকেও সেতু মেরামতিতে কোটি টাকার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাবনা আসত না।মঙ্গলকোটের নুতনহাটে লোচনদাস সেতুতে ৮৫ লক্ষ খরচের প্রস্তাবনার পাশাপাশি কাটোয়ার সিঙ্গি রুটে গৌড়ডাঙ্গা সেতুটি তেও ৭৫ লক্ষ অনুদান চাওয়ার চিঠি পাঠানো হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পূর্ত দপ্তরের তরফে। কাটোয়ার এই সেতুটি কে বেআইনি বালি পাচারকারীরা 'সেফ করিডর' হিসাবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করছে। কাটোয়া সদর থানার নজর এড়াতে বীরভূমের পাথর বোঝাই গাড়িগুলি এবং পূর্ব বর্ধমানের অজয় নদের বালি বোঝাই করা গাড়িগুলি কৈচর থেকে করুই কৈথন মোড় থেকে সিঙ্গির এই গৌড়ডাঙ্গা সেতুর উপর দিয়ে কলকাতা যাবার পুরাতন রুট (ভায়া মেমারি) ব্যবহার করছে। এরফলে অতি বিপদজনক সেতু হয়ে গেছে এটি। পূর্ত দপ্তর থেকে নোটিশ বোর্ড রয়েছে সেতুর মুখেই। কাটোয়া মহকুমার দুটি সেতু মেরামতিতে দেড় কোটির উপর অর্থ চাওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের নবান্ন অফিস থেকে। এখন প্রশ্ন পুলিশ প্রশাসন সেতুর নিচে বে আইনি বালিঘাট এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ীগুলি কে ধরপাকর না চালালে সেখানে সরকারের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ ক্রমশ বাড়বে।