রবিবার, এপ্রিল ২২, ২০১৮

সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামীদের মনোনয়ন পেশের সুযোগ দিতেই কি মুখ্যমন্ত্রী হাইকোর্টের রায় মেনে নিলেন?



মোল্লা জসিমউদ্দিন



হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিমকোর্ট,  সবজায়গাতেই পঞ্চায়েত মামলার মূল এজেন্ডা ছিল - মনোনয়ন পেশের সময়সীমা বাড়ানো।গত ১০ এপ্রিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নের সময়বৃদ্ধি বিজ্ঞপ্তি নিয়েই যত জটলা।রাজ্যসরকার,  নির্বাচন কমিশন এবং শাসকদল প্রথম থেকেই সুপ্রিমকোর্ট,  হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ, এবং সিঙ্গল বেঞ্চে অনমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করে গিয়েছে।তাদের মূল বক্তব্য ছিল - ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে দেশের কোন আদালতই নির্বাচনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা।দেশের সংবিধান সেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়েছে।কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে,  নির্বাচন কমিশন কোন ভূল করলে, সেটা শোধরাবে কে? সাধারণ মানুষের স্বার্থে তাই হস্তক্ষেপ জরুরী। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চে রাজ্যসরকার, নির্বাচন কমিশন এবং তৃনমূল চরমভাবে সমালোচিত হয়েও মুখ্যমন্ত্রী এই মনোনয়ন পেশের সময়সীমা বাড়ানো রায়দান কে স্বাগত জানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের অভিমত - যদি স্বাগতই জানালেন, তাহলে ৯ এপ্রিল রাতে জারি করা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পেশের অতিরিক্ত দিন ধার্য বিজ্ঞপ্তি টি কে অবৈধ দাবি করে আইনজীবী ও তৃনমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইমেল কেন করতে গেলেন? আবার সেই রাতেই নির্বাচন কমিশনারের বাড়ীতেই কেন রাজ্যের তিন মন্ত্রী তড়িঘড়ি গেলেন? এছাড়া পঞ্চায়েত মামলা গ্রহন থেকে গতকাল অর্থাৎ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কেনই বা চরম বিরোধিতার পথে আদালতে দেখা গেল রাজ্যসরকার কে? এইবিধ নানান প্রশ্নমালার মধ্যে সবথেকে অবাক ব্যাপার যে, মনোনয়ন পেশের সময় বাড়ানোর রায়দান কে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শাসকদলের যাবতীয় মনোনয়ন পর্ব  শেষ হয়েছে গত ৯ এপ্রিলই।এখন যা মনোনয়ন জমা পড়বে, তা সবই বিরোধীদলের হয়ে।তাহলে কেন মুখ্যমন্ত্রীর এহেন স্বাগতসম্ভাষণ!  ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, গত ৯ এপ্রিল ( মনোনয়ন পেশের প্রথম পর্বের শেষ দিন) মঙ্গলকোট বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মনোনীত ৩৪ জনের মধ্যে কোন ব্যক্তি মনোনয়ন জমা তো দূর অস্ত, মনোনয়নের কোন ফর্মই তুলতে পারেনি।পুলিশের এবং শাসকদলের একাংশের সন্ত্রাসের জন্য বিডিও অফিস তো বটেই মহকুমাশাসক অফিসেও ঢুকতে পারেনি।সর্বোপরি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়েও মনোনয়ন তুলবার কোন সুযোগ পাননি।এই ধরনের পেক্ষাপটের শিকার হয়ে ১০ এপ্রিলের পর থেকেই তিনি সরকারী গাড়ী, নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দিয়ে তৃনমূলের সাথে সরাসরি সংঘাতে নামেন। এরপরে রাজভবন সহ বিকাশভবন না গিয়ে চরম ক্ষোভের বাতাবরণ তৈরি করেন।এমনকি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসেন।যা তৃনমূল জমানায় কোন মন্ত্রী এখনও পর্যন্ত দেখানোর সাহস দেখায়নি মন্ত্রিত্ব চলে যাবার ভয়ে।এই পরিস্থিতিতে তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কে সিদ্দিকুল্লাহ বার্তা দেন যে, প্রয়োজনে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতেও রাজি।এহেন রাজনৈতিক ঝুঁকি অত্যন্ত সর্তকতার সাথেই নেন সিদ্দিকুল্লাহ।তিনি খুব ভালো করেই জানেন - সারা বাংলায় যেভাবে বিজেপি উগ্র হিন্দুত্বের পথে হাটছে, সেখানে তৃনমূলের পক্ষে একাধারে উগ্র হিন্দুত্ব বজায় রাখা এবং অন্যাধারে  সংখ্যালঘুদের মানভাজন করা সম্ভব নয়।ইতিপূর্বে রামনবমী এবং হনুমান জয়ন্তী পালনে যেভাবে বিজেপির সাথে পাল্লা দিয়ে রাস্তায় নেমেছে তৃনমূল। তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্বিথাভক্ত তাদের অবস্থানে।বর্তমানে তৃনমূল সরকারে একমাত্র সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ছাড়া অন্যকোন গ্রহণযোগ্য সংখ্যালঘু নেতা / মন্ত্রী নেই।যারা আছেন তাদের পরিধি তাঁদের কেন্দ্র অবধিই, তাও তৃনমূলের বাইরে কোন ক্যারিশ্মা নেই।সেইজায়গায় দাঁড়িয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃনমূলের বাইরে 'জমিয়ত উলেমা হিন্দের' রাজ্যসভাপতি।এই জমিয়তের পঞ্চাশ লক্ষের বেশি কর্মী সমর্থক রয়েছেন বাংলায়।আবার হাজারের বেশি মাদ্রসার নিয়ন্ত্রক হলেন সিদ্দিকুল্লাহ।তার উপর অতীতে সিঙ্গুর - নন্দীগ্রাম - মাখড়া - খাগড়াগড় প্রভৃতি প্রতিবাদ আন্দ্রোলনে স্বতন্ত্র ধারা রেখেছেন তিনি।তাই তৃনমূলের সঙ্গ ছাড়লে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মন্ত্রিত্ব যাওয়া ছাড়া আর কোন ক্ষতি হবেনা।সেক্ষেত্রে তৃনমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে ধস নেমে যাবে সিদ্দিকুল্লাহ গেলে।আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন স্বামী অসীমানন্দ কে প্রচারে আনা হচ্ছে।এই অসীমানন্দ সারাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, ট্রেন বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত। যদিও নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়েছেন। তৃনমূল বিজেপির এহেন উগ্র হিন্দুত্বের নীতি কে সমানে সমানে টেক্কা দিলেও, সংখ্যালঘু ভোট ঠিক রাখতে সিদ্দিকুল্লাহের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়দানের দুদিন পূর্বে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে সিদ্দিকুল্লাহেএ বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, মঙ্গলকোটে ৩৪ টি আসনে অনুব্রত তাঁর অনুগামীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিবেন এবং বিধায়ক তাঁর অনুগামীদের ওইসব আসনে নিজ প্রার্থী দেবেন।যেখানে গত বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর তরফে ফিরহাদ হাকিম বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল কে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।সেখানে শুক্রবার ( দুদিন পর) কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের পঞ্চায়েত মামলায় মনোনয়ন পেশের বাড়তি সময়সীমা রায়দান কে মুখ্যমন্ত্রী কেন স্বাগত জানালেন, তা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ইস্যুটি পর্যালোচনা করলে পরিস্কার হওয়া যায়।

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER