শনিবার, নভেম্বর ১০, ২০১৮

খন্ডঘোষ থেকে পূর্বস্থলী, পুলিশের ভুমিকায় প্রশ্ন উঠেছে

 মোল্লা জসিমউদ্দিন  , 

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের আচার আচরণ নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ তথা নবান্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তদাপি পুলিশ সম্পর্কে এলাকাবাসীদের ধারণা পাল্টাচ্ছে। ঘটনা - এক,  নভেম্বর মাসের ১ তারিখে পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানার ওসি সুদীপ দাসের বিরুদ্ধে গুরতর অভিযোগ উঠলো। তাতে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। এক মহিলার ইভিটিজিং অভিযোগে অতি তৎপরতা দেখান ওসি। অভিযুক্ত চার যুবক কে উলঙ্গ করে বিচুটি পাতা ঘসে, সেই নগ্ন ছবি ফেসবুকে আপলোডের হুমকি দেন ওসি। যার জেরে দুই যুবক আত্মহত্যার চেস্টা করে।একজন গলায় দড়ি দিয়ে, অপরজন বিষ খেয়ে। হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন একজন। এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে আইনজীবীরা মনে করেন। অভিযোগের  ভিক্তিতে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে চার্জশীট আদালতে পেশ করতে পারতো ওই অভিযুক্ত ওসি। তারপরে বিচারকের বিচারে অভিযোগের গভীরতা মিলতো। 

ঘটনা - দুই,  ৩ নভেম্বর সকাল নাগাদ রণক্ষেত্রের রুপ নেয় কাটোয়া শহর। হাজার খানেক এলাকাবাসী কাটোয়ার ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে তোলাবাজির অভিযোগে সরগরম হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় তৃনমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা কে শান্ত করেন। অভিযোগ গাড়ীর কাগজপত্র পরীক্ষার নামে তোলাবাজি চালাচ্ছে কাটোয়ার  ট্রাফিক পুলিশ। এই অভিযোগের মূল হোতা এক সেনা কর্মী কে অবশ্য পুলিশের তরফে 'সরকারী কাজে বাধাদান' ধারায় মামলা রুজু হয়।   কাটোয়া মহকুমা আদালতে এসিজেম এজলাসে পেশ করা হলে ধৃতের পুলিশি হেফাজত হয়। এরপরে পূর্ব বর্ধমানের গ্রামীন পুলিশসুপার রাজনারায়াণ মুখার্জি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ীর কাগজপত্র পরীক্ষা করা অভিযানে নেতৃত্ব দেন। সেফ ড্রাইভ  কর্মসূচিতে এই অভিযান বাধ্যতামূলক। তবে পুলিশের একাংশের গাড়ী চালকের কাছে  মামলার বদলে নগদ টাকা দাবি অনৈতিক।  কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন মোড়, গোয়েন্দা মোড়, পুরসভা মোড় সর্বপরি ফেরিঘাট এবং শ্বশানঘাট গুলিতে পুলিশের কেউ কেউ নিয়মিত তোলা তুলেন বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। 

ঘটনা - তিন,  কালিপুজোয় আরজি পার্টির হাজার হাজার কূপন ধরিয়ে গড়ে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা চাঁদার নামে তোলাবাজি করার   অভিযোগে সরগরম পূর্বস্থলী থানা। বিল বইতে সাক্ষর করা এএসআই তথা থানার ডাকমাস্টার কবিরুদ্দিন খান এবং আইসি সোমনাথ দাসের বিরুদ্ধে এক এলাকাবাসী গত ২ নভেম্বর  আইজি (পার্সোনাল) , ডিজি, হোম সেক্রেটারি তথা মুখ্যমন্ত্রী কে লিখিত অভিযোগ জানান। ৬ নভেম্বর পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশসুপার ভাস্কর মুখার্জী নিজে কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা পুলিশসুপারের অফিসে এসে এই অভিযোগের সিরিয়াস তদন্ত চালান। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ায় অভিযোগকারীর বয়ান সহ আরও দুজন অভিযোগদাতা কে খুজে পান জেলা পুলিশের কর্তারা। দাবি,  আইসি সোমনাথ দাস এলাকার ৯০ জন রেশন ডিলার, ৪২ জন ইটভাটা মালিক, ৬৫০ জন লরি মালিক, ৭০০ জন ট্রাক্টর মালিক, পেট্রল পাম্প মালিক সহ যারা এলাকায় দীর্ঘদিন আর্মস, নরকঙ্কাল, গাঁজার ব্যবসায় যুক্ত।তাদের কাছে কালিপুজোর চাঁদার নামে কোটির কাছাকাছি তোলাবাজি চালিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, আগামী সোমবার প্রাথমিকভাবে ওই দুই পুলিশ আধিকারিক কে পূর্বস্থলী থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। 

ঘটনা - চার,  ৭ নভেম্বর কালনা মহকুমা আদালতে জিআরও  সেকশনে 'হাজতবাবু' সাবির আলী মন্ডল ( এএসআই)  এক অনুগত কনস্টেবল কে নিয়ে কর্মরত অবস্থায় মদ্যপান করছিলেন। শুধু মদ্যপান নয়,  ধৃতদের আদালতের বিভিন্ন এজলাসে পেশ করার সময় কিংবা আদালত থেকে সংশোধনগার পাঠানোর সময় ধৃতদের পরিবারগুলির সাথে অশ্লীল গালমন্দ পাশাপাশি রণং দেহী মেজাজে চাঞ্চল্য পড়ে যায় আদালিত চত্বর এলাকা। বিচারকদের কানে বিষয়টি পৌছাতেই কালনা আদালতের জিআরও  ( কোর্ট ইনস্পেক্টর)  তাপস কুমার দাস অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার কে স্থানীয় থানার হাতে তুলে দেন। মহকুমা হাসপাতালে মদ্যপানের প্রমাণ রাখতে পরীক্ষানিরীক্ষা হয়। 

তাহলে দেখা যাচ্ছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানা , কাটোয়া ট্রাফিক , পূর্বস্থলী থানা   এবং  কালনা আদালতের পুলিশের জিআরও  বিভাগ নিয়ে তুলকালাম ঘটনা ঘটে। কখনও খন্ডঘোষ ওসি চার যুবক কে উলঙ্গ করে বিচুটি পাতা ঘষে ফেসবুকে ছবি ভাইরাল করার হুমকি দিচ্ছেন। আবার কখনও বা পূর্বস্থলী আইসি সোমনাথ দাস কালিপুজোয় চাঁদার নামে এলাকার ব্যবসায়ী সহ এলাকাবাসীদের কাছে মোটা অংকের টাকা তুলছেন। আবার কখনও বা কাটোয়া শহরে ট্রাফিক পুলিশের গাড়ীর কাগজপত্র পরীক্ষার নামে তোলাবাজির অভিযোগে হাজার খানেক স্থানীয় বাসিন্দা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আবার কখনও বা কালনা আদালতে প্রকাশ্যে এক' হাজতবাবু' মাতলামি করছেন। এইবিধ নানান ঘটনা জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি কে কালিমাক্ত করছে। তবে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে,  প্রতিটি ঘটনারই তদন্ত হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে।                                                                                                                                                        

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER