মোল্লা জসিমউদ্দিন,
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানা ঘিরে নানান অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে। কখনও বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ভাগীরথীর উপকূলে রমরমিয়ে নরকঙ্কাল ব্যবসা মদত দেওয়া। আবার কখনও বা গাঁজা পাচারের অবাধ মুক্তাঞ্চল হিসাবে পূর্বস্থলী কে নিরাপদ করিডর বানানো । সম্প্রতি শাসকদলের এক ব্লক নেতার কথা শোনে এক নাবালক কে থানার লকয়াপে মারধর করা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে উঠেছিল । নাবালক কে মারধরের ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনে তদন্ত পর্যন্ত হয়েছিল। এমনকি 'নাপসন্দ' সংবাদ পরিবেশনের জন্য আইনবহির্ভূত ভাবে এক ওয়েবপোর্টাল নিউজ কর্তপক্ষকেও পুলিশি মামলার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। একটু কানপাতলেই এলাকাবাসীদের কাছে শোনা যায় এই থানার আইসির এক কুকুর নিয়ে এলাকাজুড়ে তটরস্থ করার কথা। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কালিপুজোর তোলাবাজিতে নাম জড়ালো পূর্বস্থলী থানার নাম। ওই থানার খড়দত্তপাড়ার এক যুবক চাঁদার রশিদ সহ লিখিত অভিযোগ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ ডিজি সাহেব কে পাঠিয়েছিলেন। নবান্নের নির্দেশে গত মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান পুলিশসুপার কাটোয়ায় এসে অতিরিক্ত জেলা পুলিশসুপার (গ্রামীন) কে দিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এলাকাসুত্রে জানা গেছে, পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ার এক যুবকের কাছ থেকে কবিরুদ্দিন খান নামে এক এএসআই কালিপুজোর চাঁদা হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা নেন। অভিযোগ প্রথমে টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই এএসআই তাঁর মোবাইল থেকে আইসি কে ফোন করে কথা বলিয়ে দেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করা ওই যুবক কে আইসি গাঁজার মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এক্ষেত্রে টাইম লোকেশন ধরে ওই দুই পুলিশ অফিসারের মোবাইল কলরেকর্ড দেখলে প্রমাণ মিলবে বলে দাবি উঠছে। পূর্বস্থলীর ওই প্রতিবাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয় নবান্ন। সেখানে গুরত্ব সহকারে পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশসুপার কে রিপোর্ট চাওয়া হয়। এহেন নির্দেশ পেয়েই পুলিশসুপার গত মঙ্গলবার কাটোয়ায় অতিরিক্ত জেলা পুলিশসুপার রাজ নারায়ণ মুখার্জীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়েন। যদিও পুলিশসুপার এই বিভাগীয় তদন্তের মাথায় আছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের জেলা কর্তারা অভিযোগের ঘটনাস্থল পূর্বস্থলীর খড়দত্তপাড়ায় হাজির হন অভিযোগকারীর বয়ান সহ আরও অভিযোগের বিষয় আছে কিনা তা জানতে। প্রতিবাদী যুবকের ভাই ও বন্ধু তারাও পূর্বস্থলী থানার তোলাবাজি চাঁদার রশিদ তুলে দেন এবং স্থানীয় থানার পুলিশ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। এলাকা সুত্রে আরও জানা গেছে, এই থানা এলাকার ৯০ জন রেশন ডিলার, ৪২ টি ইটভাটা মালিক, ৭০০ এর কাছাকাছি ট্রাক্টর মালিক, ৬৫০ টির মত লরি মালিক সহ পেট্রলপাম্প মালিকদের কাছ থেকে নুন্যতম পাঁচ হাজার থেকে দশহাজার কূপন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোটামুটি হিসাব করলে কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ চলে আসে। এছাড়া নরকঙ্কাল ব্যবসায় সিন্ডিকেট এবং শিলিগুড়িতে থাকা পূর্বস্থলীর গাঁজা ব্যবসার গডফাদারদের কাছে মোটা অংকের পুজোর নামে অনুদান কালিপুজোর চাঁদার নামে পুলিশি তোলাবাজি কে আরও প্রশস্ত করেছে বলে ওয়াকিবহালমহল মনে করছে। যদিও সংবাদমাধ্যম কে পুলিশসুপার জানিয়েছেন - এইরুপ গুরতর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।