মোল্লা জসিমউদ্দিন,
অবশেষে পুলিশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে তৎপরতা দেখালো পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলায় অতিরিক্ত জেলা পুলিশসুপার রাজনারায়ণ মুখার্জীর জরুরী রিপোর্টে পুলিশসুপার ভাস্কর মুখার্জী সাসপেন্ডের নির্দেশিকা জারী করলেন পূর্বস্থলী থানার এএসআই তথা ওই থানার ডাকমাস্টার কবিরুদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। শুধু সাসপেন্ড নয়। তাঁকে খাঁকি পোশাক সহ সরকারী সমস্ত জিনিশ অত্যন্ত দ্রুত জমা দিতে বলা হয়েছে। এহেন পদক্ষেপে আপাতত খুশি পূর্বস্থলীর সেই লিখিত অভিযোগ পাঠানো প্রতিবাদী যুবক। যে গত ২ নভেম্বর আইজি (পার্সোনাল) , ডিজি, হোম সেক্রেটারি তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে পূর্বস্থলী থানার কালিপুজোর নামে তোলাবাজির অভিযোগ তথ্যপ্রমাণ সহ পাঠিয়ে ছিলেন । এহেন অভিযোগে নড়েচড়ে বসে রাজ্যের সদর প্রশাসনিক দপ্তর নবান্ন। এরপরেই চলতি মাসের ৬ তারিখে পুলিশসুপার নিজে এসে ঘটনার সিরিয়াস তদন্ত চালান। তদন্ত চলাকালীন পূর্বস্থলীর এক সাব ইনস্পেকটর কালনা আদালতের এক আইনজীবী কে সাথে নিয়ে অভিযোগকারীর বাড়ী যান অভিযোগ আইনিভাবে তুলে নেবার জন্য বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ । এছাড়া এক পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী অভিযোগকারীকে বারবার মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। বাড়ীর সামনে বহিরাগত সশস্ত্র বাহিনীর নজরদারি চলায় প্রাণহানির আশংকায় ভোগে মুখ্যমন্ত্রী কে অভিযোগ জানানো এই সংখ্যালঘু যুবক। কোনক্রমে বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ( গ্রামীন) রাজ নারায়ণ মুখার্জী কে পুলিশের অতি সক্রিয়তার পাশাপাশি ওই পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীর হুমকির বিষয়টি জানান। এরপরেই এএসপি ( রুরাল) সাথে সাথেই এসপি কে জানান। তখনি এসপি সাহেব ওই এএসআই এর সাসপেন্ড সহ খাঁকি পোশাক দ্রুত জমা দেওয়ার নির্দেশিকা জারী করেন। এছাড়া বিভাগীয় তদন্ত আরও নুতন অভিযোগগুলি সংযুক্ত করার নির্দেশও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আইসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষেত্রে আইজি (পার্সোনাল) পুরো বিষয়টি দেখেন। তাই পুলিশের এক সুত্র জানাচ্ছে, আগামী সোমবার বিকেলের মধ্যেই পূর্বস্থলীর আইসি সোমনাথ দাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারী হতে পারে। কেননা জেলা পুলিশ মহল মনে করছে - যেকোন থানার ওসি কিংবা আইসির অঙ্গুলহেলন ছাড়া সেই থানার কোন পুলিশ কর্মীর কোন কিছু করতে পারেনা। ঠিক এইরকম ক্ষেত্রে, যেখানে 'সেফ ড্রাইভের ' লোগো সেঁটে থানার আরজি পার্টির নামে ক্রমিক সংখ্যাহীন অর্থাৎ বেহিসেবি বিলবই ছেপে তাও থানার এক আধিকারিকের নাম দিয়ে চাঁদার নামে তোলা আদায় চলছিল। সেখানে আইসির ভূমিকা টায় বড়। তাও প্রথমে টাকা দিতে অস্বীকার করা ওই যুবক কে আবার আইসির নাম্বারে কথা বলিয়ে গাঁজা মামলার চমকানি পর্যন্ত দিয়েছেন ওই আইসি। সর্বপরি পুলিশসুপারের মনিটরিং এর মাধ্যমে তদন্ত চলাকালীন এক আইনজীবী কে সাথে নিয়ে থানার এক সাব ইনস্পেকটর হাজির হচ্ছেন আইনিভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করানো নিয়ে। পুলিশ পেটোয়া এক পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী আবার হুমকি প্রত্যাহার করা নিয়ে বারবার মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। শুধু হুমকি নয় বহিরাগত সশস্ত্র দুস্কৃতিদের দিয়ে টহলদারি চলছে। সেখানে আইস তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। উল্লেখ্য ওই হুমকি দেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীর সৌজন্যে এক রক্তদান শিবিরের নাম করে মোটা অংকের তোলা না দেওয়া এক পরিবারের নাবলক কে রাতে তুলে এনে পূর্বস্থলী থানার লকআপে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সেখানে পুলিশের বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও মানিবাধিকার কমিশন হস্তক্ষেপ করেছিল। এখন দেখার পুলিশ তাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফেরাতে শুধুমাত্র এএসআই কে সাময়িক বরখাস্ত করে থেমে থাকে কিনা? এছাড়া ওই পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীর বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসকদল কোন দলীয় ব্যবস্থা নেয় কিনা?