মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
দীপঙ্কর চক্রবর্তী ,
"বর্তমান রাজনীতিতে সততার খুবই অভাব,মানুষের সেবার জন্য রাজনীতি কদাচিৎ নেতা নেত্রীই করেন।হয়তো তরুন প্রজন্ম তাই রাজনীতির ধারে কাছে আসতে চায় না"।এইবিধ নানান অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে পঞ্চাশ বছর রাজনীতিতে কাটানো এক রাজনীতিবিদের উপসংহার এটি । একের পর এক দলবদল করে জেলা রাজনৈতিক মহলে বিতর্কিত থেকেছেন বরাবর। পূর্বস্থলীর ৮৪ বছরের তেলিনিওপাড়ার বাসিন্দা বিনোদ বিহারী দেবনাথ মহাশয়ের রাজনৈতিক জীবন শুনলে অবাক লাগবে । ১৯৬২ সালে প্রথম রাজনীতি শুরু করেন প্রজা স্যোসালিষ্ট পার্টি(psp)তে।১৯৬৭ সালে পূর্বস্থলী বিধানসভায় এই দলের হয়ে দাঁড়ান।এর পর ছয় বার বিধানসভায় দাঁড়িয়েছেন তিনি।কিন্তু মতানৈক্যের কারনে দল বদল করেছেন পাঁচ বার।দ্বিতীয় দল সংযুক্ত স্যোসালিষ্ট পার্টি(ssp)।পরে এই দলটি জনতা দলের সাথে মিশে যায়।তৃতীয় দল জনতা দল করেন।চতুর্থ দল সমাজবাদী পার্টি।পঞ্চম দল স্যোসালিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া।বর্তমানে এই দলেই তিনি এখনও রয়েছেন।এখনও তিনি দুই বর্ধমানের জেলা সভাপতি এবং রাজ্যের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।পূর্বস্থলী বিধান সভায় ২০১৪ সালে তিনি শেষ বার দাড়িয়েছিলেন।প্রতি পঞ্চায়েত ভোটে সারা জেলার তার দলের টিকিটে প্রার্থী দাঁড় করাতেন।কোনবারের ভোটেই বিনোদ বাবু বা তার দলের পঞ্চায়েত প্রার্থীরা তেমন সারা জাগানো ভোট হয়তো পায় নি।তবুও এত বছরের রাজনীতিতে সাধারন মানুষের পাশেতাদের আপদে বিপদে ছিলেন।পূর্বস্হলীর বন্যার সময় বা অন্য কোন দূর্যোগে ভিন রাজ্য থেকে ত্রান,ওষধ,খাবার,পোষাক,ত্রিপল এনে ওই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।বর্তমানে বার্ধক্য জনিত কারনে বিনোদ বাবু খুবই অসুস্হ।হাটা চলা বন্ধ।সবসময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়।সোমবারও শুয়ে শয়েই বললেন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কথা। বিশ্বরম্ভা বিদ্যাপীঠে ৩৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন।১৯৬২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত পূর্বস্হলীতে একটি সাপ্তাহিক কাগজ 'লোকবার্তা' পত্রিকা চালিয়েছেন।বর্তমানে কাগজটি বন্ধ।এখন তিনি বিছানায় শুয়ে রাজনীতির জেলা,রাজ্য,কেন্দ্রের বিভিন্ন ঘটনা দেখেন।কিন্তু আর শরীর চলেনা, কোন মতামতও আর জানাতে পারেন না। তেমন কেউ আসেও না তার কাছে। তিনি বলে চলেন চন্দ্রশেখর,দাশরথী তা,কিরন্ময় নন্দ,লীলা রায়,সমর গুহ,সুনীল দাস,রমনী মোহন চক্রবর্তীর সাথে বিভিন্ন সময় একসাথে রাজনীতি করেছেন।আবার আদর্শে অমিলও হয়েছে কারো সাথে।এখন বিছানায় শুয়ে দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনীতি, ৩৪ বছরের শিক্ষকতা,আর সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি রোমন্থন করে চলেছেন।কারন আর কিছু তার পক্ষে করা বা বলা সম্ভব নয়।বিনোদ বাবুর স্ত্রী নিলীমা দেবনাথ বলেন - আমাদের দুই ছেলে,তারা বেকার।উনি এত বছর রাজনীতি
করেছেন, ভোটে দাঁড়য়েছেন।পঞ্চায়েত ভোটে অন্য কর্মীদের দাঁড় করিয়েছেন।মাঝে মাঝে কর্মীদের আর্থিক সাহায্য, এই সব কিছু খরচ উনি নিজের টাকা খরচ করে গেছেন।এখন ওনার খুবই দূর্দশা চলছে শরীরে এবং আর্থিকভাবে অসহায়ও।বর্তমান রাজনীতিতে নেতা নেত্রীদের বিপুল আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি মাঝেও বিনোদ বিহারি দেবনাথদের মত ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে সততার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান সমাজের বুকে।