মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০১৯

অনুব্রত মন্ডলের সাথে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর বিবাদের অন্তরালে?


মোল্লা জসিমউদ্দিন,

অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেস্ট মোড়ল এই নামটি শুধু রাজ্য রাজনীতিতে নয় জাতীয় রাজনীতিতেও বহু আলোচিত। রাজনৈতিক ময়দানে তিনি 'পিঞ্চ হিটার' বক্তা হিসাবে পরিচিত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে শুধু বীরভূম - পূর্ব বর্ধমান জেলা নয়, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী প্রচারে মঞ্চে 'হায়ার' করে নিয়ে গেছে শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের এই নেতা শুধু বীরভূম জেলার দলীয় সভাপতি নন, সেইসাথে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম - কাটোয়া - মঙ্গলকোটের দলীয় পর্যবেক্ষকও বটে। একদা কাটোয়ার কং বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়ের সাথে সাপেনেউলে সম্পক ছিল অনুব্রতর। সেই রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় ববর্তমানে শাসকদলে নাম লিখিয়েছেন। আবার কেতুগ্রাম বিধায়ক সেখ শাহনওয়াজের সাথেও সম্পর্ক ভালো ছিল না একদা অনুব্রতর। কেননা বীরভূম জেলাজুড়ে দাপট দেখালেও নানুরে কেস্ট দাওয়াই 'ফেল'!  সৌজন্যে কেতুগ্রাম বিধায়ক সেখ শাহনয়াজের ভাই কাজল সেখ। বর্তমানে অবশ্য কেতুগ্রাম বিধায়ক ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠেছেন অনুব্রতের কাছে। সিউড়ির প্রাক্তন বিধায়ক স্বপনক্রান্তি ঘোষের সাথে সম্পর্ক ভালো নয় অনুব্রত বাবুর। তবে রাজনৈতিক জীবন থেকে সন্ন্যাস নিয়েছেন স্বপন বাবু। একদা অধ্যাপক তথা বিধায়ক আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত বিপক্ষ শিবিরে বিচরণ করতেন। বর্তমানে তিনি কৃষিমন্ত্রী হয়ে অনুব্রত বাবুর ঘনিষ্ঠমহলে প্রবেশ করেছেন। এত কিছুর মাঝে ব্যতিক্রমী মঙ্গলকোট বিধায়ক তথা রাজ্যের তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মহাশয়।২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের  আগে বীরভূমে পুলিশি সন্ত্রাস এবং শাসকদলের সন্ত্রাস নিয়ে অনুব্রত মন্ডলের কাছে 'ত্রাস' হয়েছিলেন রাজ্য জমিয়ত উলেমা হিন্দের নেতা মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। মাখড়া সহ ইলামবাজারের বিভিন্ন অংশে শাসক বিরোধী সংগঠন গড়ে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ। সেইথেকে অনুব্রত বনাম সিদ্দিকুল্লাহের ঠান্ডা লড়াই  শুরু। গত  বিধানসভা নির্বাচনে একশো আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবার ঘোষণায় সিদ্দিকুল্লাহ কে নবান্নে মমতার কাছাকাছি আনে বলে মত রাজনীতি কারবারিদের। অনুব্রতর মন্ডলের আগাম ঘোষণা সত্বেও তৃনমূল নেত্রী মমতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে মঙ্গলকোটে দলীয় প্রতীক দেন। প্রসঙ্গত ২০১১ এর পরাজিত তৃনমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরীই ছিলেন অনুব্রতর ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষিত প্রার্থী। কেস্টর অনুরোধ থাকা সত্বেও নাছোড়বান্দা সিদ্দিকুল্লাহ মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক বলয়ে নেমে পড়েন। আর এতেই রাজনীতিতে সম্মুখসমরে এসে পড়ে কেস্ট বনাম সিদ্দিকুল্লাহ। ২০১৪ সালের লোকসভায় ২৪ হাজারের বেশি লিড থাকা সত্বেও সিদ্দিকুল্লাহ জেতে ১২ হাজার ভোটে। যে দলীয় অন্তর্ঘাতে ২০১১ সালে বিধানসভায় অপূর্ব চৌধুরী হেরেছিলেন মাত্র ১২৭ ভোটে। অনুরুপ দলীয় অন্তর্ঘাতে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জেতার ব্যবধান কমলো ১২ হাজারের বেশি!  এহেন দলের স্থানীয় নেতাদের অবস্থানে স্বতন্ত্র বলয় গড়ার চেস্টা চালালেন সিদ্দিকুল্লাহ৷ কেস্টর সাথে সাপেনেউলে সম্পক থাকা তৎকালীন বোলপুর সাংসদ  অনুপম হাঁজরা কে নিয়ে বড় বড় সভা করতে লাগলেন। অপরদিকে রাজনীতিতে নিস্ব হওয়া ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী কে স্থানীয় থানার 'নাগরিক কমিটির ' সম্পাদক এবং ব্লক প্রশাসনের আইসিডিএস নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।সেইসাথে পুলিশি নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। যদিও পুলিশের তরফে জানানো হয় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার জেরে মঙ্গলকোটে বেশকিছু নেতা কে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছে। তবে উক্ত মামলা গুলির এফআইআর, চার্জশিট, ফাইনাল রিপোর্ট সহ সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখলে বোঝা যাবে পুলিশ কায়দা করে কেমন ভাবে সাজিয়েছে মামলা গুলি?  এইরুপ দাবি বিরোধী দলগুলির৷২০১৬ সালে বিধানসভার নির্বাচনের পর আড়াই বছরের মধ্যে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে ক্রমশ কোনঠাসা হয়েছেন সিদ্দিকুল্লাহ। রাজ্যের মন্ত্রী বলে নয়, নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে ঘুরাফেরা বন্ধ করে দেয় স্থানীয় ক্ষমতাসীন লবি। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিস, থানা থেকে দলীয় অফিস সবজায়গায় 'নো এন্ট্রি' সিদ্দিকুল্লাহের। কালো পতাকা দেখেছেন, কখনো অশ্রাব্য গালি শুনেছেন, আবার ঝাটা জুতোও দেখেছেন দলেরই একাংশের সৌজন্যে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ থাকা সত্বেও কোন মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেনি বিধায়ক শিবির। কুড়ির কাছাকাছি অনুগামী গাঁজার মামলা খেয়েছে বলে অভিযোগ। বিধায়কের একদা অফিস বেশ কয়েকবার সশস্ত্র হামলাও হয়েছে। অভিযোগ অনুব্রত অনুগামীরা স্থানীয় পুলিশের সাথে সেটিং ফিটিংস করে সব ব্যবস্থা করেছিল। যদিও পুলিশ ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন লবি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশসুপার অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছে সিদ্দিকুল্লাহর জমিয়ত উলেমা হিন্দের জেলা নেতারা। এখনো দুই শিবিরের দুই মুখ অনুব্রত মন্ডল এবং সিদ্দিকুল্লাহের মতভেদ কমেনি। উল্টে বেড়েছে বহুগুণ। লোকসভা নির্বাচনে সমগ্র বীরভূম জেলা সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা এলাকায় কোন প্রচারের মঞ্চে সিদ্দিকুল্লাহ কে তৃনমূলের মঞ্চে পাওয়া যায়নি। গতকাল অর্থাৎ ২০ এপ্রিল কাটোয়াতেও তৃনমূলের নাম্বার টু খ্যাত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলেও সেখানে দেখা যায়নি সিদ্দিকুল্লাহ কে। এমনকি সিদ্দিকুল্লাহ এর নির্বাচনী ক্ষেত্র মঙ্গলকোটেও প্রচারে ব্রাত সিদ্দিকুল্লাহ। অর্থাৎ কেস্টর গড়ে অচ্ছুৎ হয়েই রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বঙ্গ জমিয়ত উলেমা হিন্দের সর্বময় কর্তা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।                                                                                                                                                                                                                                                                                        

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER