মোল্লা জসিমউদ্দিন,
গতবছর সব চেস্টা করেও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলকোটের বুকে জেলা গ্রন্থাগার মেলা করতে পারেননি। তাঁর নির্বাচনী বিধানসভা কেন্দ্র মঙ্গলকোটে না হয়ে হয়েছিল পাশ্ববর্তী মন্তেশ্বরে। এতদিন জেলার কিংবা মহকুমার সদরে হত এই ধরনের বইমেলা , তবে মফস্বলে করার উদ্যোগ সেবারেই প্রথম দেখা গিয়েছিল। রাজনীতির বেড়াজালে মঙ্গলকোটে গতবছর চুড়ান্ত প্রস্তাবনায় থাকলেও পুলিশ - প্রশাসনের রিপোর্টে তা হয়নি। এই বিষয়ক সংবাদ 'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর নড়েচড়ে বসে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ও সেইসাথে তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ ছিল, মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু হামিদ বাঙালি, বৈষ্ণব কবি লোচনদাস , পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক, বিদ্রোহী কবি কাঁজি নজরুল ইসলামের স্মৃতিভূমি মঙ্গলকোটে জেলা গ্রন্থাগার মেলা না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক কবি সাহিত্যিক সহ সাংস্কৃতিকপ্রেমীদের কাছে। সুত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আসরে নামেন সুব্রত বকসী। তিনি এই কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডল এবং এই কেন্দ্রের বিধায়ক তথা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহের সাথে আলাদাভাবে কথা বলে নেন। উল্লেখ্য ২০১৬ এর বিধানসভা ভোট পরবর্তী কয়েকমাসের মধ্যেই সিদ্দিকুল্লাহের সাথে অনুব্রতের বিবাদ চরমে উঠে। সেখানে মঙ্গলকোটে শাসকদলের দুই গ্রুপের মধ্যে হানাহানি বাড়ে। সাম্প্রতিকতম পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রতীক নিয়ে দূরত্ব আরও প্রকট হয়। মঙ্গলকোটের ক্ষমতাসীন গ্রুপের কাছে সিদ্দিকুল্লাহ একপ্রকার ব্রাত বলা যায়। পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসন, থানা সর্বত্রই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে অলিখিতভাবে বয়কটের শিকার হতে হয় বলে বিধায়ক শিবিরের দাবি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলার ত্রিশটি পাঠাগার কর্তৃপক্ষ কে নিয়ে মঙ্গলকোটের নুতনহাট মিলন পাঠাগারের গ্রন্থাগার মেলার প্রস্তুতি নিয়ে সভা হয়। মন্ত্রীর মঙ্গলকোটের 'শেষ আশ্রয়' বলা যায় এই পাঠাগার । শারদীয়ার বস্ত্রবিলি থেকে ইদের জামাকাপড় বিতরণ সবকিছু এখান থেকেই করেন সিদ্দিকুল্লাহ। তাই এবারেও জেলা গ্রন্থাগার মেলার জায়গা হিসাবে পাঠাগার চত্বর কে ভাবা হচ্ছিল। এই চত্বরের যারা জমির মালিক তাদের কাছে জায়গার সাময়িক ছাড়পত্র নিতে গেলে ব্যর্থ হয় মন্ত্রীর প্রতিনিধিরা। উল্টে বিধায়ক বিরোধী গ্রুপের নেতারা দলীয় অফিসে ডেকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সেখানে অশ্লীল নাচের লেটো সহ জুয়া খেলার মেলা টানা দশদিন চালাবার ফরমানও দেওয়া হয়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সুব্রত বকসী দুই বিবাদমান গ্রুপের নেতা অনুব্রত ও সিদ্দিকুল্লাহের সাথে কথা বলে জেলা গ্রন্থাগার মেলাটি মঙ্গলকোটেই হবে বলে জানিয়ে দেন। সেইমত আজ অর্থাৎ রবিবার দুপুরে মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে দ্বিতলায় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের দেখা যায় গ্রন্থাগার মন্ত্রীর সাথে। জেলা প্রশাসনের তরফে ছিলেন এডিএম, মহকুমাশাসক, বিডিও। পুলিশের তরফে ওসি সহ বেশকিছু পুলিশ আধিকারিক। যে ওসি প্রসেনজিত দত্ত কে গত দুবছরে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রীর কোন বৈঠকেই দেখা যায়নি। সে রুগি কল্যাণ সমিতির বৈঠক কিংবা প্রশাসনিক সভা। সেই ওসি কেও এদিন দেখা যায়। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, গতবারে মঙ্গলকোটে জেলা গ্রন্থাগার মেলা না হওয়ার পেছনে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। এবছর মেলা হওয়ার কারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘু নিয়ে বেকায়দায় পড়া তৃনমূলের আগামী লোকসভা নির্বাচন। অর্থাৎ গতবছরে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে মঙ্গলকোটে গ্রন্থাগার মেলা হলে রাজনৈতিক মাইলেজ পেতেন সিদ্দিকুল্লাহ। তাতে তাঁর অনুগামীরা উজ্জীবিত হয়ে বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটে কাঁটা হতে পারতো। আর এবছরে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে 'মণিহারা ফণী' র মতন অবস্থা সিদ্দিকুল্লাহের। তাই স্থানীয় রাজনীতিতে কোন প্রভাব পড়বেনা। তবে আগামী লোকসভায় মুসলিম ভোট কে অটুট রাখতে সংখ্যালঘু নেতা সিদ্দিকুল্লাহের পাশে দাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। এইরুপ মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাই তারই ফলস্বরূপ আজকের বৈঠকে দেখা গেলো সিদ্দিকুল্লাহের মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে বেশকিছু পথের কাঁটা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের। তবে রাজনৈতিক অংক যাইহোক, খুশি এলাকার মানুষজন। 'কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটি ' সহ এলাকার সাংস্কৃতিকপ্রেমীরা আসন্ন বইমেলা ঘিরে দারুণ উৎমাদনায় রয়েছে। জানা গেছে, সুফি সাধক হামিদ বাঙালি এবং পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের স্মরণে দুটি তোরণ হবে। সেইসাথে প্রত্যেকদিন মনিষীদের নামে মঞ্চ গড়া হবে। শতাধিক স্টল থাকবে এই বইমেলায়।