সোমবার, এপ্রিল ২৩, ২০১৮

প্রশাসনের সাহায্যে এবার পড়াশোনা চালাবে দুই বোন


মানস দাস, মালদা

মাস ছয়েক আগেও নিয়মিত স্কুল যেত দুই বোন ৷ কিন্তু হঠাৎ করে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় তারা ৷ স্কুলের শিক্ষকরা ভেবেছিলেন, হয়তো অসুস্থতার জন্য দুই বোন স্কুলে আসতে পারছে না ৷ দিন পেরিয়ে যায় ৷ কিন্তু আর স্কুলে দেখা যায়নি ওই দুই বোনকে ৷ খোঁজখবর নিতে শুরু করেন স্কুলের শিক্ষকরা ৷ তখনই উঠে আসে করুন এক তথ্য ৷ শুধুমাত্র আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে দুই কন্যাশ্রী ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসে ৷ এদিন দুপুরে বিডিও, থানার আইসি ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সটান হাজির হন ওই দুই বোনের পিসির বাড়িতে ৷ তাঁরা দুই বোনের পড়াশোনার জন্য সমস্ত ধরনের সরকারি ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন ৷ দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে দুই বোনকে স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়েছেন অভিভাবকরা ৷বছর দেড়েক আগেই সাংসারিক ঝড়ে মাথার উপর থেকে ছাউনি উড়ে গিয়েছিল চিন্তামণি আর শিউলির ৷ বাবা সোনারাম কোল মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগে ৷ তারা ৪ বোন ৷ দেড় বছর আগে মা শ্রীমতী কোল ছোটো মেয়েকে নিয়ে অন্য এক পুরুষের হাত ধরে নতুন ঘর বাঁধতে চলে যান ৷ বাবা-মা’র অবর্তমানে চিন্তামণি আর শিউলি তাদের বিধবা পিসির বাড়িতে আশ্রয় নেয় ৷ তাদের সঙ্গে পিসির ঘরে ওঠে তাদের দিদি মৌসুমিও ৷ অভাবের জন্য দশম শ্রেণিতে পড়াকালীনই মৌসুমির বিয়ে দিয়ে দেন তাদের পিসি ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের ধুমাদিঘি গ্রামের রায়পাড়ায় সেই পিসির বাড়ি ৷ অবশ্য তাদের বাড়িও একই গ্রামে ছিল ৷ পিসি লক্ষ্মী কোল স্থানীয় এক ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন ৷ সেই উপার্জনেই নিজের ছেলেমেয়ে সহ ভাইয়ের দুই মেয়ের গ্রাসাচ্ছদন চলে ৷এত কিছুর পরেও ১৫ বছরের চিন্তামণি কোল স্থানীয় রাম মার্ডি হাইস্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল ৷ সে এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে ৷ এক বছরের ছোটো শিউলি কোল একই স্কুলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে ৷ কিন্তু অভাবকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি তারা ৷ স্কুলে যাওয়ার থেকে তাদের কাছে বড়ো হয়ে দেখা দেয় পিসির বাড়ির কাজ কিংবা পোষা গোরু-ছাগলের দেখভাল ৷ তাই ৬ মাস ধরে স্কুলের রাস্তায় আর হাঁটতে দেখা যায়নি তাদের ৷ সেকথা জেনে ফেলে স্কুল কর্তৃপক্ষও ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সব ঘটনা শুনে এদিন দুপুরে আদিবাসী অধ্যুষিত ধুমাদিঘি গ্রামে লক্ষ্মী কোলের বাড়িতে সটান চলে যান পুরাতন মালদার বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস ৷ সঙ্গে ছিলেন মালদা থানার আইসি মানবেন্দ্র সাহা ও রাম মার্ডি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র দাস ৷ বিডিও জানান, কিছুদিন আগে জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি এই গ্রামে এসেছিলেন ৷ তখনই তাঁরা জানতে পারেন, গ্রামের একটি মেয়ে স্কুলে পড়তে পড়তে পড়া ছেড়ে দিয়েছে ৷ তার নাম চিন্তামণি কোল ৷ পরে তাঁরা রাম মার্ডি হাইস্কুলের তরফ থেকে চিন্তামণির বিষয়ে জানতে পারেন ৷ এদিন গ্রামে এসে দেখেন, শুধু চিন্তামণি নয়, তার বোন শিউলি কোলও অভাবের তাড়নায় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷ তারা পিসির বাড়িতে থাকে ৷ পিসি কাজে চলে গেলে তারা বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনা করে ৷ এদিন তাঁরা চিন্তামণি ও শিউলি সহ তাদের অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন ৷ লক্ষ্মীদেবী ও দিদি মৌসুমি তাদের ফের স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়েছেন ৷ রাম মার্ডি হাইস্কুলেই কস্তুরবা গান্ধি হস্টেল রয়েছে ৷ শিউলিকে তাঁরা এখনই সেখানে রাখার বন্দোবস্ত করছেন ৷ চিন্তামণিকেও সেখানে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা ৷ কোনওভাবেই এই দুটি মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেবেন না তাঁরা ৷ প্রধান শিক্ষক বলেন, প্রথমে মৌসুমি ও লক্ষ্মীদেবী চিন্তামণি ও শিউলিকে স্কুলে পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন ৷ অনেক বোঝানোর পর তাঁরা শেষ পর্যন্ত তাদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়েছেন ৷
ফের পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ায় চোখে যেন ঝিলিক খেলে গিয়েছে চিন্তামণির ৷ সে বলে, পিসির অবর্তমানে ঘরের কাজ করার জন্য তারা স্কুলে যেতে পারছিল না ৷ এদিন স্যাররা তাঁদের বাড়িতে এসেছেন ৷ তাঁদের ফের স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন ৷ কন্যাশ্রীর চোখে এখন আরেক উড়ানের স্বপ্ন ৷

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER