মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
ধর্মীয় বিভাজন রাজনীতিতে সরগরম ভারতীয় রাজনৈতিক বলয়। বিশেষত প্রতিটি ভোটের প্রাক্কালে সাম্প্রদায়িক অস্ত্রে শান দেয় বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তখনি ধর্মীয় অসিহষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত করতে এগিয়ে আসে নানান অরাজনৈতিক সংগঠন। ঠিক এইরূপ এক সংগঠন অর্থাৎ 'হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অরগনাইজেশন' চলতি সপ্তাহে অর্থাৎ গত মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার ওয়েলিংটন মোড় সংলগ্ন সূর্বনবণিক সমাজ ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে। এই আলোচনাসভায় যোগ দেন বিভিন্ন পেশার গুনী ব্যক্তিত্বরা। 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ফেডারেশন অফ ইউনাইটেড নেশনস এসোসিয়েশন ' এর রাজ্য সভাপতি মিস্টার সিতারাম শর্মা ছিলেন প্রধান অতিথি। মূল বক্তা হিসাবে এসেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষা প্রতিস্টানের কর্মকর্তা স্বামী কৃপাকারানন্দ মহারাজজি। কলকাতা হাইকোর্ট এর দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল এবং প্রসূন দত্তের পাশাপাশি ডক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন উক্ত সেমিনার টি তে। ভারতবর্ষের মাটি অখণ্ডতার প্রতীক বলে সব বক্তায় সাম্প্রতিক সম্প্রীতির পক্ষে জোর সওয়াল করেন। তাঁরা বলেন - দেশে যেভাবে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে তথ্য বিকৃত করে ধর্মীয় বিভাজনের সুড়সুড়ি দিচ্ছে, তা দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি অবনতির মুখে। যার ফলে দেশের মধ্যে দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন একে অপরকে অবিশ্বাস করছে। কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনসার মন্ডল বলেন - "মুঘল সম্রাট ঔরংজেব কে হিন্দু বিরোধী শাসক হিসাবে তুলে ধরা হয়, অথচ তাঁর আমলেই বহু মন্দির গড়া হয়েছে এদেশে। পাঠান - মুঘলদের বহিরাগত লুটেরা বলা হলেও তাঁরা এদেশ কে অন্তরের ভালোবাসায় এদেশেই তাঁরা রয়ে গেছে মৃত্যুর পরেও"। আনসার বাবু ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হিসাবে অতীতে অভিজ্ঞতার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন - বেলুড় মঠের গেটের কাছেই এখনও জ্বলজ্বল করছে একটি পীরের মাজার শরিফ সহ মসজিদ। জনশ্রুতি যে, মা সারদামনি কে সেসময় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা এই মসজিদ সরিয়ে দেওয়ার তীব্র দাবি তুলেছিল। কিন্তু পরমহংসদেব রামকৃষ্ণ এবং স্বামী বিবেকানন্দ সেই দাবির কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। যারফলে বেলুড় মঠের পেছন গেটের কুড়ি মিটারের মধ্যে থাকা পীরের মাজার শরিফ এখনও অনুগামীদের আসাযাওয়ায় গমগম করে উঠে। যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মজবুত করতে এক বিরল দৃস্টান্ত বলা যায়। এইরূপ নানান তথ্য ঘটনা তুলে প্রায় বক্তা তাঁদের বক্তব্যপেশে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সওয়াল করেন।