মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
বাংলায় লোকসভা নির্বাচন জমে উঠেছে, অন্তত নির্বাচনী প্রচারে। দুই ফুলের ( জোড়াফুল, পদ্মফুল) নেতানেত্রীদের ভাষণে সরগরম বঙ্গ রাজনীতির বলয়। মোদি বনাম মমতা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় নানান কৌতুক রঙ্গ তৈরিও হয়েছে ভোটের মুখে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অর্থাৎ তৃতীয় দফার ভোটের চব্বিশ ঘন্টার আগে পূর্ব বর্ধমানের নির্বাচনী প্রচারে এসে তৃণমূল নেত্রী তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য পেশের মাঝেই নরেন্দ্র মোদী কে গালে থাপ্পড় মারার হুশিয়ারি দেন, তবে অত্যন্ত কায়দায় তাঁর এহেন হুশিয়ারি। পূর্বস্থলীর জামালপুরে নির্বাচনী প্রচারে মমতা মঞ্চের সামনে মা বোনেদের উদ্দেশ্য বলেন - দুস্ট বাচ্ছারা বেশি দুস্টুমি করলে আপনারা কি করেন? গালে কি যেন হাতে করে দেন, যাতে বাচ্ছারা চুপ হয়ে যায়। হ্যা আপনারা যেদিন ভোট দিতে যাবেন, সেদিন ইভিএমে জোড়াফুল টিপে বিজেপি কে থাপ্পড় দেবেন। মোদী চুপচাপ হয়ে যাবেন।সোমবার দুপুর একটা নাগাদ পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর জামালপুর এলাকায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মঞ্চে মূল বক্তা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, এই আসনের লোকসভার প্রার্থী সুনীল মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন জেলার বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে । গ্রামীন বর্ধমানের কৃষি বলয়ে থাকা পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার এই এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী মূলত উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন।জেলাতেই সর্বপ্রথম মাটি মেলা পরবর্তীতে মাটি উৎসব করে এই রাজ্যসরকার। চাষীরা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের অনুদান পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান - দীর্ঘদিনের ভাগীরথী নদের উপর সেতু নির্মাণ দাবি পূরণ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই এগারোশো কোটি বরাদ্দকৃত হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের কালনা এবং নদীয়ার শান্তিপুর এলাকার যোগাযোগকারী সেতু হিসাবে পরিচিত হতে চলেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদা থেকে হুগলি জেলা হয়ে মঙ্গলকোটের নুতনহাটের উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার ফোরলেন রাস্তা হচ্ছে। সেইসাথে দক্ষিণবঙ্গের দামোদর - ভাগীরথী নদ নদীগুলির উপত্যকায় বন্যা রোধে স্থায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এই সরকার। এইবিধ নানান উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিজেপি সর্বপরি প্রধানমন্ত্রী কে তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ করেন তৃনমূল নেত্রী। তিনি বলেন - গত পাঁচ বছরে মোদী শুধুই বিদেশ ঘুরেছে, নুতন করে কর্মসংস্থান তো হয়নি। উলটে বেকারত্ব বেড়েছে সারাদেশ জুড়ে । দু একজন কে দিয়ে রাজ্যে সামন্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের সাথে আলোচনা না করে হুটহাট করে অফিসারদের বদলী করে দেওয়া হচ্ছে নির্বাচনের সময় । কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তো গত ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনেও ছিল। সেবার তো দুর্দান্ত ফল করেছিল তৃণমূল। এবারেও ফল আরও ভালো হবে বলে আশাবাদী মমতা। সোমবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় তিনটি প্রচারসভা সারেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর ১ টায় পূর্বস্থলীর জামালপুর, দুপুর ২ টোয় দেওয়ানদিঘী এবং ৩ টেয় সেহেরাবাজার। এই তিনটি বিধানসভা এলাকাতে সিপিএম সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং শাসকদলের অন্তদ্বন্ধ এলাকা হিসাবে পরিচিত। জামালপুর এলাকাটি পড়ছে পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার মধ্যে। যেটি সিপিএম গত বিধানসভায় জিতেছে। এছাড়া বর্ধমান উত্তর ( দেওয়ানদিঘী) , রায়না (সেহেরাবাজার) বিধানসভা এলাকাগুলিতে সিপিএম অন্যতম বিরোধী দল হিসাবে পরিচিত। তবে বাম ছেড়ে রাম শিবিরে নাম লিখিয়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি বর্ধমান পুর চেয়ারম্যান পদে একদা থাকা সিপিএমের দাপুটে নেতা হাজার খানেক কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দল বদল করেছেন। এছাড়া বালি, পঞ্চায়েতে দুর্নীতি নিয়ে শাসকদলের খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে। নিহতদের তালিকায় পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারী রয়েছে। তাই একাধারে সিপিএমের ভোটব্যাংক বিজেপির অনুকূলে যাওয়া রুখতে এবং দলীয় বিবাদ আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের অধীনে এই তিনটি বিধানসভা এলাকা বেছে নিলেন বলে রাজনৈতিক ওয়াকিবহালমহল মনে করছে।