বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯

মৌলালীর মামলায় বেকসুর খালাস বঙ্গ সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতে ২০ নং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে এক পুলিশি মামলায় অব্যাহতি পেলেন বঙ্গ সিপিএমের হেভিওয়েট নেতৃত্ব। এদিন তালতলা থানার স্বতঃস্ফূর্ত করা মামলায় ব্যাংকশাল আদালতে সশরীরের হাজির ছিলেন এই রাজ্যের বামেদের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, অনাদি সাহু, মানব মুখোপাধ্যায়, শ্যামল চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন ব্যাংকশাল আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মায়া চক্রবর্তীর এজলাসে। এই মামলায় অভিযুক্ত ক্ষিতি গোস্বামী সম্প্রতি মারা গেছেন।এদিন এগারোজন  অভিযুক্তদের খালাসদানে ম্যাজিস্ট্রেটের পর্যবেক্ষণ - " এই মামলায় দোষী প্রমাণে উপযুক্ত তথ্য ও প্রমাণ কলকাতা পুলিশ দেখাতে পারেনি, যে তথ্য প্রমাণ পেশ হয়েছে, তা যথেষ্ট নয় অভিযুক্তদের বিপক্ষে"। এই মামলায় ১১ জন পুলিশ কর্মী সাক্ষ্যদান করেছেন। যারা অভিযোগকারী তারা কিভাবে সাক্ষী হয় অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণে?  এহেন প্রশ্ন উঠেছে এই মামলায়। আদালত সুত্রে প্রকাশ, ২০১৮ সালে মে মাসে শিয়ালদহ সংলগ্ন মৌলালী মোড়ে বামেদের এক প্রতিবাদ মিছিল ঘিরে সংশ্লিষ্ট থানা  অর্থাৎ তালতলা থানা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মামলা দাখিল করে। বিভিন্ন সড়কমোড়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং এগারোজন পুলিশ কর্মীর সাক্ষ্যে রাস্তা আটকে বেআইনী জমায়েত, আইনশৃঙ্খলা অবনতি বিষয়ক তথ্য উঠে আসে চার্জশিট দাখিলে। প্রায় দেড় বছর পর ব্যাংকশাল আদালতে এই মামলায় দশজন শীর্ষ  বাম নেতৃত্ব  এই মামলায় খালাস পেলেন।                                                                                               

খুনের মামলায় রক্ষাকবচ পেলেও মুকুলের বীরভূমে যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা


মোল্লা জসিমউদ্দিন
   
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে লাভপুরের খুনের মামলায় মুকুলের আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানি চলে। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ তদন্তে সহযোগিতার শর্তে বিজেপি নেতা মুকুল রায় কে ৮ ফেব্রুয়ারি অবধি আইনী রক্ষাকবচ দিললো। তবে বীরভূম জেলায় লাভপুর বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন থানায় যাওয়ার ব্যাপারে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর এই মামলায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৪ ডিসেম্বর লাভপুরের তিন ভাই খুনে বীরভূম জেলা পুলিশের সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দাখিলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম উঠে আসে। খুনের প্ররোচনায় ধারায় চার্জশিটটি পেশ হয়েছে। ৩০২ এর মত খুনের ধারায় চার্জশিট দাখিল বিষয়টি গুরত্ব অনুভব করেই তড়িঘড়ি কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের পিটিশন টি করেন মুকুল রায়। প্রথমে ত্রুটিপূর্ণ আবেদনের জন্য আগাম জামিনের আবেদন বাতিল হয়।দ্বিতীয় পযার্য়ের শুনানি হয় আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে। মুকুল শিবিরের দাবি - "২০১০ সালে বীরভূমের লাভপুরের খুনের সময় মূল অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম তখন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন। তখন মুকুল রায় তৃণমূলের দু নাম্বার ব্যক্তি। রাজ্যসরকারে শাসক দল হিসাবে ছিল বামেরা। তৃনমূল তখন মূল প্রতিপক্ষ। তাই তৎকালীন বাম বিধায়ক কে তৃনমূল নেতা মুকুল রায়ের প্ররোচিত করার কোন ভূমিকা থাকতে পারেনা"? লাভপুরের খুনের মামলায় একদা তৃনমূল বিধায়ক তথা অধুনা গেরুয়া নেতা মনিরুল ইসলামের নাম চার্জশিটে আসাটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম আসবে তা রাজনৈতিক মহলে অপ্রত্যাশিত ছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের লাভপুরে এলাকার খুনের এক মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ৯ বছর পূর্বে এই মামলার যিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মামলার পুনরায় তদন্তের। তবে বীরভূমের পুলিশসুপারের নজরদারিতে তিনমাসের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে ভীষন চাপে পড়ে যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কেননা এই মামলায় তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন। মামলার তদন্তে প্রথমভাগে এই স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। সেসময় লাভপুর বিধায়ক শাসকদলের প্রভাবশালী বিধায়ক হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি 'ঘরপোড়া গরু'র মত রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণ করছেন। দিল্লি গিয়ে দলবদল করলেও বিজেপিতে অচ্ছুৎ অবস্থায় আছেন। তাই রাজ্য পুলিশের তদন্তে দলত্যাগী তৃনমূল বিধায়ক কে নিয়ে নানান জল্পনা জেলা রাজনীতিমহলে। আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে লাভপুরে একই পরিবারে ৩ ভাই খুন হয়েছিলেন।নিহতেরা হল ধানু সেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক সেখ।  এই খুনে অভিযোগকারী এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।মামলার প্রথম পয্যায়ে পুলিশি তদন্তে চার্জশিট পেশে দেখা যায়,  বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন কে তাদের বিরুদ্ধে উঠা খুনের অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে। এহেন পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা আদালতে মামলাকারী পুনরায় তদন্তের জন্য পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশন গ্রহণ না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় নিহতের পরিবার। এরপর, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি মধুমতী মিত্রের বেঞ্চ    জানিয়ে দেয় - ২০১০ সালের এই খুনের মামলায় পুনরায় তদন্ত করবেন আগেকার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। পুলিশসুপারের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে। এবং তা শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যেই। সেইসাথে ২০১৮ সালের সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প আইনে মামলাকারী এবং নিহতের পরিবার কে পুলিশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।  ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা  উচ্চ আদালতের  নির্দেশে ফের লাভপুর হত্যা মামলার চার্জশিট জমা পড়ল। আর সেই চার্জশিটে স্বাভাবিক ভাবেই নাম উঠে এল বিজেপি নেতা মণিরুল ইসলামের নাম। এছাড়া আরেকটি  গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এল দ্বিতীয় পয্যায়ের চার্জশিটে । প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এর নাম উঠে এল   ।  প্ররোচনার দায়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। চলতি ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে ২০১০ সালের ঘটনার পুনর্তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। চার্জশিট গৃহীত হয় আদালতের তরফে  ।জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন -  "হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিট গৃহীত হয়েছে ।" বালিরঘাটের দখলদারির দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা ডেকেছিলে সেসময়কার দাপুটে  নেতা   মণিরুল ইসলাম । তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন । সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে । মণিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় । ঘটনার পরে পরে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৃণমূলে যোগ দান করেন তিনি বলে অভিযোগ । পরে লাভপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ীও  হন । ২০১১ সালে সাঁইথিয়ার একটি জনসভা থেকে "তিনজনকে পা দিয়ে পিষে মেরে  দিয়েছি" বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মণিরুল ইসলাম। ২০১৫  সালে এই মামলায় পুলিশ বোলপুর আদালতে ৩০ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । সেই চার্জশিটে নাম বাদ যায় এই মণিরুলের। তখন অবশ্য শাসক দলের বিধায়ক  ছিলেন তিনি।  নিহতের পরিবার তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন । এই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ।  ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মণিরুল।  দিল্লিতে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের মাধ্যমে বিজেপিতে যোগ দান করেন মণিরুল।সেখানেও তাঁকে নিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ে। তাই  তাঁকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। হাইকোর্টের  নির্দেশে ফের তদন্ত শুরু করে বীরভূম পুলিশ ।গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মণিরুল ইসলামের । ২০১০ সালে ঘটনার সময় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ছিলেন মুকুল রায় । প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিটে স্থান পেয়েছে মুকুল রায়ের নাম।তবে মুকুল বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন - "বিগত বাম আমলে শেষের দিকে সিপিএম যেমন পুলিশ নির্ভর ছিল, এখন তৃনমূল সেই ভূমিকাটা নিয়েছে। এহেন মিথ্যা মামলার  ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আদালতেই সুবিচার পাব"।মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চে মুকুল রায়ের আগাম জামিনের মামলায় শুনানিতে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত পুলিশ কোন কড়া পদক্ষেপ ( গ্রেপ্তার) করতে পারবেনা বলে নির্দেশিকাজারী হয়। তবে তদন্তের পূর্ন সহযোগিতার শর্তে এবং বীরভূমের তিনটি থানা এলাকায় যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞাজারীও হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চের তর।                  

ক্যাব নিয়ে রাজপথে নামলো তৃণমূল লিগ্যাল সেল

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

মঙ্গলবার দুপুরে  কলকাতা হাইকোর্টের এফ গেট থেকে রাজভবন ভায়া সিটি সিভিল আদালতের গেট অবধি এনআরসি এবং ক্যাব  আইনের বিরুদ্ধে মিছিল করলো তৃনমূল লিগ্যাল সেল। লিগ্যাল সেলের চেয়ারম্যান ভাস্কর বৈশ্য জানান - "দলনেত্রীর নির্দেশে আজ আমরা প্রতিবাদ মিছিল করলাম "।                          

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জরুরি রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ক্যাব পরবর্তী বাংলায় হিংস্বার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে রাজ্যের কাছ থেকে। আগামী বুধবার সবিস্তারে তা হলফনামা আকারে জমা দেওয়ার নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। উল্লেখ্য, গত চারদিনে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ কলকাতার একাংশে ক্যাব বিরোধী আন্দ্রোলনকারীদের হাতে একের পর এক হিংস্বাত্মক ঘটনা ঘটে। এইসব আন্দ্রোলনকারীদের নিদিষ্ট কোন সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলের পতাকা সেসময় ছিলনা বলে প্রকাশ। ইতিমধ্যেই ৩৮ টি সরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টি সরকারি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুরুপভাবে ৬০ টির মত বেসরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এবং পূর্ব রেলের প্রায় ১০০ কোটি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে ক্যাব আন্দ্রোলন ঘিরে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন এফআইআর  দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে, সোমবার সকাল দশটা নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধানবিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এক বিজেপি কর্মী সুরজিত সাহার পক্ষে আইনজীবী সুরজিত রায় চৌধুরী দ্রুত শুনানির আর্জি নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলা দাখিল করেন।পিটিশনের শুনানি গ্রহণ করে এদিন বেলা  দুটো নাগাদ মামলাকারী এবং সরকার পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব চলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারীর দাবি - পশ্চিমবাংলা সরকারের  লোগো ব্যবহার করে রাজ্যের প্রধান অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় আইন মানবেন না বলে বিজ্ঞাপন চালাছেন, তা অসাংবিধানিক। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করছেন। তাও বেআইনী।মুখ্যমন্ত্রীর এই কেন্দ্র বিরোধী অবস্থানের জন্যই রাজ্যজুড়ে হিংস্বাত্মক ঘটনাগুলি ঘটছে"।প্রসঙ্গত বিজেপির এহেন সূর পাওয়া গেছে রাজ্যপালের গলাতেও! সোমবার এই মামলার শুনানি শুনে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আইনজীবী কে আগামী বুধবারের মধ্যেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রিপোর্ট তলব করে। এখনও অবধি কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাও জানতে চাওয়া হয়েছে এই নির্দেশে। অপরদিকে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সাম্প্রতিক সময়ে সোশাল মিডিয়ায় এক বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দাখিল করা হয়েছে। সুমন ভট্টাচার্য নামে এক মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী তরুনজ্যোতি তেওয়ারী এই মামলাটি করেছেন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করলেও আজ অবশ্য কোন শুনানি হয়নি। চলতি সপ্তাহে শুনানি হতে পারে। ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্যর পরিপেক্ষিতে এই মামলা।                                                                                                                                                                     

সোমবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯

ডের্থ সার্টিফিকেট পেতে অচল রেশন কার্ড চায়, আজব ফরমান মঙ্গলকোটে


মোল্লা জসিমউদ্দিন  

 সাধারণ মানুষের  প্রশাসনিক হয়রানি কমাতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন জনহিতকর উদ্যোগ নিয়েছে। কখনো রাতে প্রত্যন্ত গ্রামে নিশিযাপন করছেন জেলাপ্রশাসনের আধিকারিকরা। আবার কখনো বা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সংযোগ পেতে অভাব-অভিযোগ শুনতে 'দিদি কে বলো' কর্মসূচি চলছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে চরম প্রশাসনিক হয়রানির অভিযোগ উঠলো মঙ্গলকোটে।গত ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলকোট বিডিও অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে এই প্রশাসনিক হয়রানি নিয়ে। সেইসাথে মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে অচল রেশন কার্ড এর   আবশ্যিকতা কিনা সেই বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা আছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। অচল রেশন কার্ড এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে  যা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে সদুত্তর মেলেনি, এমনকি কলকাতা  আইনজীবীদের একাংশের কাছে যেটা বেআইনী  বলে দাবি করা  হয়েছে।  হ্যাঁ, কখনো শুনেছেন কোন সরকারি পরিষেবা পেতে গেলে অচল রেশন কার্ড এর আবশ্যিক প্রয়োজনীতা আছে?  কেননা সচল রেশন কার্ডই তো কোন কিছু সরকারি ক্ষেত্রে দরকার পড়ে। সবথেকে বড় ব্যাপার, অচল রেশন কার্ড না দিলে চালু (সচল) রেশন কার্ড মেলেনা। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের অদ্ভুত নিয়মাবলি নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন দেখা গেছে মঙ্গলকোটে। তবে মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে  কোন সরকারি গাইডলাইন (অচল রেশনকার্ড এর আবশ্যিকতা)  আছে কিনা, সেই প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছ থেকে। স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ, গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলকোটের গোতিস্টা গ্রামে নিজ বাসভবনে বয়সজনিত কারণে মারা যান পার্বতীচরণ ঘোষ মহাশয়। মৃত্যুর সাতদিন পর অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর মৃতের পুত্র সুকান্ত ঘোষ প্রয়াত বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে লিখিত আবেদনপত্র নিয়ে যান সংশ্লিষ্ট গোতিস্টা পঞ্চায়েতের অফিসে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ শংসাপত্র পেতে নিদিষ্ট ফর্ম দেয় আবেদনকারী কে।যেখানে রেশন কার্ড জমা দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এতটা অবধি সব ঠিকঠাক ছিল।আবেদনকারীর অভিযোগ - "প্রয়াত বাবার পুরাতন রেশন কার্ড না দিলে মৃত্যুর শংসাপত্র মিলবেনা বলে জানিয়ে দেন গ্রাম প্রধান"। এরপরে এই আবেদনকারী স্থানীয় রেশন ডিলারের কাছে যান এইরুপ রেশন কার্ডের নিয়মাবলি জানতে। ওই রেশন ডিলার জানিয়েছেন - " সরকারি রেশন ভর্তুকিতে দূর্নীতি রুখতে সচল অর্থাৎ বর্তমান রেশন কার্ড টি জমা দিতে হয় আবেদনকারী কে, এর বাইরে কিছুই জানিনা "। গত ৯ ডিসেম্বর ওই আবেদনকারী মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসনের ফুড ইন্সপেক্টরের কাছে যান মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে অচল রেশন কার্ড লাগে কিনা, তা জানতে। মঙ্গলকোট ফুড ইন্সপেক্টর সরকারি কোন আদেশনামা দেখাতে না পারলেও বলে দেন -  লাগবেই লাগবে পুরাতন রেশন কার্ড টি,সেইসাথে পুরাতন রেশন কার্ড হারিয়ে গেছে বলে স্থানীয় থানায় জেনারেল ডাইরি করার পরামর্শ দেন  । রাজ্য খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান - " আমরা যখন নুতন রেশন কার্ড দিই গ্রাহকদের, তখন পুরাতন রেশন কার্ডটি বাজেয়াপ্ত করে নেয় স্থানীয় খাদ্য দপ্তরের লোকজন। তাছাড়া মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে সচল রেশন কার্ডই লাগে, পুরাতন টি নয় "। মঙ্গলকোট বিডিও মুস্তাক আহমেদ বলেন - " এই বিষয়ে আমার জানা নেই, স্থানীয় খাদ্য দপ্তর বলতে পারবে বিষয়টি "। অনুরূপভাবে কাটোয়া মহকুমাশাসক সৌমেন পাল জানান - " মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে অচল রেশন কার্ড লাগে কি লাগেনা সেটা ফুড ডিপার্টমেন্ট ভালো বলতে পারবে "। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল জানান - " মৃত্যু ব্যক্তির রেশন সামগ্রী কেউ নিতে না পারে, সেজন্য নুতন রেশন কার্ড লাগে। বাতিল রেশন কার্ড চাওয়া টা একপর্যায়ে প্রশাসনিক হয়রানি "। গত ১১ ডিসেম্বর পঞ্চায়েত প্রধান থেকে রেশন ডিলার। আবার ব্লক খাদ্য দপ্তর থেকে বিডিও অফিস অবধি প্রশাসনিক হয়রানি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন মঙ্গলকোটের গোতিস্টা গ্রামে সুকান্ত ঘোষ নামে এক বাসিন্দা। জানা গেছে, অভিযোগকারী পেশায় স্থানীয় এক পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক, তাঁর প্রকাশিত খবরে রুস্ট স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের একাংশ। তাই এইরুপ হয়রানি বলে এলাকাবাসীদের অভিযোগ।মঙ্গলকোট ব্লক অফিসের মূল গেটে হেল্ফ ডেস্কে জ্বলজ্বল করছে - জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে সপ্তাহের প্রতি সোমবার এবং বুধবার আবেদন জানান!                                                                                                                                                                                                                             

রবিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

সম্প্রতি সৌহার্দ্য বাড়াতে একতার বার্তা সিয়ামত আলির

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

  গাইঘাটায় বিশ্ব নবী দিবসে সর্ব ধর্ম সম্মেলনে সম্প্রীতির আহ্বান জানানো হল ।উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা ব্লকের শিমুলিয়া দক্ষিণ পাড়ায় জলসা কমিটির উদ্যোগে এক সর্বধর্ম সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।দুদিন  দিনব্যাপী বিভিন্ন ইসলামিক সাংস্কৃতিক মূলক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন সম্পন্ন হয়। উপস্থিত 'প্রগ্রেসিভ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনে'র রাজ্য সভাপতি সিয়ামত আলী বলেন - "বর্তমান এদেশের এই সর্ব ধর্ম সম্মেলন এর বিশেষ প্রয়োজন। সারা ভারতবর্ষ ব্যাপী যেভাবে ক্যাব ও এনআরসির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের গণআন্দোলন পরিস্ফুটিত হচ্ছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে আজ দেশের অবস্থা কোন জায়গায় অবস্থান করছে, সংবিধানবিরোধী মানবতাবিরোধী যে অপকর্ম চলছে ।তার বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলা তথা ভারত বর্ষ সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে। যারা এটাকে কলুষিত করার চেষ্টা করবে তাদের উদ্দেশ্য কোন মতেই সফল হবে না"। জোয়েফ কর্ণধর পীরজাদা মোহেব্বুল্লাহ হোসাইনী বলেন   "সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের এক অস্থিরতা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশের শান্তিকামী মানুষ গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সমস্ত কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হবে"। স্বামী সত্যরূপনন্দ মহারাজ বলেন - " মানবপ্রেমের মধ্য দিয়েই সমস্ত কল্যাণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এটা কি শেষ  করার অপচেষ্টা যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। মানবতাবিরোধী ও সংবিধান বিরোধী এমন কোন কার্যাবলি আমরা এই ভারতবর্ষের নাগরিক হিসেবে কখনোই সেটা সমর্থন করতে পারি না"। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী আব্দুল কাদির, পি ওয়াই এফ এর রাজ্য কমিটির কোষাধ্যক্ষ কাজী তৈয়ে বললা, পি ওয়াই এফ দক্ষিণ 24 পরগনা জেলা সভাপতি জাকির হোসেন, ডি ওয়াই এফ এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব মাওলানা আবুল কালাম, বিশিষ্ট শিক্ষিকা তনুজা কাদরিয়া প্রমুুখ। পুরো অনুষ্ঠানটির আয়োজক জহির উদ্দিন মন্ডল ছিলেন ।

শনিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯

মুকুলের গলার স্বর নথিভুক্তিকরণ নির্দেশ বহাল রাখলো কলকাতা হাইকোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে বড়বাজার আর্থিক দুর্নীতির মামলায় মুকুল রায়ের গলার স্বর নথিভুক্তিকরণের নির্দেশিকাজারী হয়। আগামী ১০ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট আদালতে অর্থাৎ ব্যাংকশাল আদালতের আডিশনাল  চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই গলার স্বর নথিভুক্তিকরণ ( ফরেন্সিক) টি হওয়ার আদেশনামা রয়েছে। তবে এই গলার স্বর রেকর্ড টি মুখবন্ধ খামে থাকবে। তা মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারও দেখতে পাবেন না হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া। যদিও আজ এই মামলার পরবর্তী শুনানি টি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। প্রধান বিচারপতিই ঠিক করবেন পরবর্তী শুনানি কোন বেঞ্চে হবে তা নিয়ে । কেননা মুকুল রায়ের আইনজীবী শুভাশিস দাশগুপ্ত এদিন এজলাসে প্রশ্ন তুলেছেন - বড়বাজার আর্থিক দুর্নীতি মামলায় মুকুল রায় একজন সাক্ষী মাত্র, অভিযুক্ত নন। তাই একজন সাক্ষী কিভাবে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদান করবেন? " উল্লেখ্য, ব্যাংকশাল আদালতে আডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুকুল রায়ের গলার স্বর নথিভুক্তিকরণ এর নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল করেন। আজ এই মামলার শুনানিতে নিম্ন আদালতের নির্দেশ কে বহাল রাখলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। তবে সেইসাথে মামলাটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ৩১ জুলাই  কলকাতা পুলিশ বড়বাজার এলাকায় কল্যাণ রায় বর্মন নামে এক সরকারি কর্মীর কাছে নগদ ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে থাকে। ধৃত কে জেরা করে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নাম পায় বলে কলকাতা পুলিশের দাবি। এই টাকা উদ্ধারের আগে নাকি মুকুল রায়ের সাথে কথপোকথন হয় ধৃতের। ২০১৮ সালে ডিসেম্বর মাসে ১৬০ ধারায় মুকুল রায় কে সাক্ষী হিসাবে তলব করেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। এরপর বেশ কয়েকটি নোটিশ অগ্রাহ্য করায় মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী হয় ব্যাংকশাল আদালতে। এমনকি ব্যাংকশাল আদালতের সংশ্লিষ্ট এজলাসের বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য একমাস সময়সীমাও বেঁধে দেন।  মুকুলের আইনজীবী দিল্লীর ভোটার কার্ড কে সামনে রেখে ওয়ারেন্ট এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা দাখিল করেন দিল্লির হাইকোর্টে।দিল্লি হাইকোর্ট ব্যাংকশাল আদালতের ওয়ারেন্ট খারিজ করে দশদিনের মধ্যে মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কে দিল্লীর ঠিকানায় জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের এক প্রতিনিধিদল দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাসভবনে জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। এরপর চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকশাল আদালতে 'সাক্ষী' মুকুল রায়ের গলার স্বর নথিভুক্তিকরণ এর আদেশনামা জারী করে থাকে। এই আদেশনামার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন বঙ্গ বিজেপির হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায়।বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নিম্ন আদালতের রায় কে বহাল রেখে আগামী ১০ জানুয়ারী মুকুল রায়ের গলার স্বর ফরেনসিক টিমের উপস্থিতিতে রেকর্ড সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন। তবে এই গলার স্বর রেকর্ডটি মুখবন্ধ খামে আদালতের হেফাজতে  থাকবে। তা দেখার এক্তিয়ার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরও থাকবেনা বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসাথে মামলায় আইনী জটিলতার কারণে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়েদেন এই বিচারপতি।                                                                                                                                                                                                                                                 

একশো ক্ষুদে পড়ুয়াদের কুমুদ সাহিত্য মেলায় উপহার দেবে 'সুসম্পর্ক'

এবার কুমুদ সাহিত্য  মেলায় 'মনন' এর পাশাপাশি পাশে থাকছে  'সুসম্পর্ক'


আগামী ৩ রা মার্চ  মঙ্গলকোটের  কোগ্রামে  পল্লিকবি  কুমুদরঞ্জন  মল্লিকের বাসভবনে কুমুদ সাহিত্য  মেলায় কলকাতার সুবিখ্যাত সাহিত্য সংগঠন 'মনন' ১২৫ জন দুস্থদের বস্ত্রবিলি করবে। সেইসাথে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় পথশিশুদের  মুখে হাসি ফোটানো সামাজিক সংগঠন 'সুসম্পর্ক'  ১০০ জন দুস্থ ক্ষুদে পড়ুয়াদের শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেবে। দুটি সংগঠনই আমাকে লিখিত প্রস্তাবনাটি দিয়েছে। ওইদিন বাংলার সাহিত্য জগতে নক্ষত্রদের সমাবেশ ঘটবে। আপনাদের সপরিবারে আসবার আমন্ত্রণ জানাই। কোন ডেলিকেট ফি লাগেনা। 

💐 মোল্লা জসিমউদ্দিন ( সম্পাদক - কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটি )

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯

নির্ভয়ার দেখানো পথে কলকাতা হাইকোর্টে বিচার চায় কামদুনি

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

হায়দ্রাবাদে পশুচিকিৎসক ধর্ষণ করে খুন কান্ডে পুলিশি  এনকাউন্টারের  উত্তাল গোটা দেশ। এরপরে 'নির্ভয়া' কান্ডে ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়ার প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বাংলায় ধর্ষণের ঘটনায় কুখ্যাত 'কামদুনি' দ্রুত বিচার চাইছে। বুধবার দুপুরে  কামদুনি গণধর্ষণ মামলার দ্রুত শুনানির দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ  হল মৃতার পরিবার।নির্ভয়াকাণ্ডে দ্রুত শুনানি এবং দোষীদের শাস্তি ঘোষণা হলে,  সমসাময়িক কামদুনি গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় বিচার পেতে কেন এত বিলম্ব হচ্ছে ? এই প্রশ্ন তুলে দ্রুত বিচার চেয়ে এবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন কামদুনির নির্যাতিতার পরিবার। বুধবার মৃতার পরিবারের লোকেরা দেখা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের  রেজিস্টার জেনারেলের সঙ্গে। জানা গেছে,  তাঁদের প্রথাগতভাবে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার ব্যাংকশাল আদালত ৮ জন দোষীদের মধ্যে ৩ জনের ফাঁসি , ৩ জনের যাবজ্জীবন এবং ২ জনকে বেকসুর খালাসের রায় দেয়। এরপর সাজাপ্রাপ্তরা নিম্ন আদলতের দেওয়া সাজা মকুবের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করেছিল। সেই সময় রাজ্য সরকার এই ফাঁসির রায়দানের সপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ।এরপর থেকেই এই মামলা একাধিক বিচারপতিদের এজলাসে ঘুরতে থাকে। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি অমিমাংসিত ভাবেই রয়েছে। এদিন মৃতার পরিবারের পক্ষে  স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় রেজিস্টার জেনারেল সাহেবের  সঙ্গে দেখা করেন।নির্ভয়াকাণ্ডের পরই ২০১৩ সালের ৭ জুন  কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধেবেলায় ওই কলেজছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ এবং তথ্য লোপাট করতে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এই ঘটনায় পর রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। ঘটনায় অভিযুক্ত মোট নয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । বিচার চলাকালীন একজন অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। বাকি ৮ জনের মধ্যে ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে  তিন জনকে ফাঁসি, তিনজনকে যাবজ্জীবন এবং দুজনকে তথ্যপ্রমানের অভাবে বেকসুর খালাস করে কলকাতার ব্যাংকশাল  আদালত।এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্তরা ব্যাংকশাল আদালতের রায় কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল করে থাকে।সেই মামলার দীর্ঘায়িত নিয়ে বিস্তর অভিযোগ মৃতার পরিবারের। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে হায়দ্রাবাদে পুলিশি এককাউন্টার এবং নির্ভয়াকান্ডে দোষীদের ফাঁসির প্রস্তুতি সুবিচারের আশা দেখিয়েছে কামদুনি কে। বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে মৃতার পরিবার দ্রুত শুনানির আবেদন জানালে, রেজিস্ট্রার জেনারেল সাহেব প্রথাগত পিটিশনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে প্রকাশ।                                  

     

পোস্টার রিলিজ হল 'একদিনের স্বাধীনতা' নামে শর্টফিল্মের

রাজকুমার দাস পরিচালিত  ছোট্ট ছবি "এক দিনের স্বাধীনতা"-র পোস্টার রিলিজ হলো

নিজস্ব প্রতিনিধি:

 গুটি গুটি করে প্রায় তিরিশ টির উপর শর্ট ফিল্ম ও তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছেন টলিউডের পরিচালক রাজকুমার দাস। তিনি সু অভিনেতা ও সাংবাদিক হিসাবে ও পরিচিত।তার নতুন শিশুদের জন্য নির্মিত শর্ট ফিল্ম "এক দিনের স্বাধীনতা"র পোস্টার সম্প্রতি  রিলিজ হয়ে গেল শহরে।
এক অনাথ শিশুর বেঁচে থাকার লড়াই এবং দেশ প্রেম কে নিয়ে ছবির গল্প এগিয়েছে।প্রায় পনেরো মিনিটের ফিল্মে সুচারু অভিনয় করেছে মাস্টার পুষ্পেন্দু মন্ডল,মাস্টার ঋক দাস,ও নীল আকাশ।
"চিত্রসাথী ফিল্মস "-এর ব্যানারে নির্মিত ছবির প্রযোজনায় শ্রীমতী মৌসুমী দাস।পরিচালক রাজকুমার দাস বরাবরই স্বতন্ত্র নির্ভেজাল ছবি করে চলেছে,এবং সেই ছবি শুধু সোশ্যাল মিডিয়া তে  রিলিজ  নয় পাশাপাশি দেশ বিদেশের বহু ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ দেখানো হচ্ছে।এই ছবিটিও ব্যাতিক্রম নয়।অনিতেশ অধিকারী র সম্পাদনায় ছবিটি ইতিমধ্যেই যাদবপুর শহীদ স্মৃতি সংঘের শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবছর অংশগ্রহণ করছে বলে জানালেন পরিচালক রাজকুমার দাস।
ছবির পোস্টার ও বেশ নজর কাড়বে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।এখন দেখার ছবিটি দর্শকরা কেমন গ্রহণ করে।"এক দিনের স্বাধীনতা"-নামটাই প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে নাড়া দেবে তা বলাই বাহুল্য।

নেপাল নাকি বিদেশ নয়, কলকাতা হাইকোর্টে বললেন বিমল গুরঙ্গের আইনজীবী

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

'নেপাল বিদেশ নয়, কেননা ওই দেশে যেতে গেলে নাগরিক ভিসার প্রয়োজন পড়েনা'। এহেন বিতর্কিত যুক্তি আদালতের এজলাসে দেখালেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিমল গুরঙ্গের আইনজীবী। ঘটনার সুত্রপাত, মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং মনোজিত মন্ডলের ডিভিশন বেঞ্চে আগাম জামিনের মামলায় এজলাসে শুনানিতে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান - "এইবিধ মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা  বিমল গুরঙ্গের মোবাইল ফোন লোকেশন ট্র্যাকিং করে  গুগল ম্যাপে  নেপালের উপস্থিতি পেয়েছেন। এছাড়া মামলাগুলির এক।সাক্ষী তথা একদা বিমল গুরঙ্গের সহযোগী তার জবানবন্দিতে নেপালে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা  বিমল গুরঙ্গের নেপালে থাকবার কথা জানিয়েছেন "।  রাজ্যের তরফে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের এহেন সওয়ালের পরেই বিমল গুরঙ্গের আইনজীবী এজলাসে তখন জানিয়েছে - " নেপাল বিদেশ নয়, কেননা ওই দেশে যেতে গেলে অন্যান্য দেশে যাওয়ার মত নাগরিক ভিসার প্রয়োজন পড়েনা। তাছাড়া বিমল গুরঙ্গ এদেশেই আছেন"। মামলার কাজে সুপ্রিম কোর্টে যাতায়াতও করেন বলে দাবি  বিমলের আইনজীবী। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে দুপক্ষকেই অতিরিক্ত হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয়। একাধারে এডভোকেট জেনারেল কে অভিযুক্ত বিমল গুরঙ্গ - রোশন গিরিদের নেপালে থাকবার প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে হলফনামায়। অপরদিকে মামলাকারীর আইনজীবী কে অভিযুক্তেরা নেপালে নেই, তার প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে হলফনামায়। কলকাতা হাইকোর্টের  শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে বলে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে।উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জুন মাসে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি মহকুমা এলাকা বিশেষত দার্জিলিং জেলার সিংহভাগ নিয়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন চলে। টানা ১০৫ দিন চলে এই হিংস্বাত্মক আন্দ্রোলন। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এমনকি এক পুলিশ অফিসার পর্যন্ত খুন হয়েছিলেন সেসময় ।  শতাধিক গাড়ী - বাড়ী ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ,লুটপাট চলে। ১৫০ এর বেশি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। বিশেষত বিমল গুরঙ্গ ও রোশন গিরি প্রতিটি জামিন অযোগ্য ধারায় চার্জশিট প্রাপ্ত হন। মাস কয়েক পূর্বে সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানাতে গেলে বিমলদের সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দেয় সংশ্লিষ্ট আদালতের দারস্থ হতে। কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে কয়েকদফা শুনানি চলে। সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি এই 'হেভিওয়েট' মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে 'রেফার' করে দেন। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচিএবং মনোজিৎ মন্ডলের এজলাসে এই মামলায় শুনানি চলে। মূলত বিমলদের নেপালে থাকা - না থাকা নিয়ে সওয়াল-জবাব চলে। তখনি বিমলের আইনজীবী দাবি করেন - "নেপাল বিদেশ নয় কেননা ওইদেশে যেতে গেলে নাগরিক ভিসা লাগেনা"।  ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য দু-পক্ষকেই নেপালে থাকা ও না থাকা নিয়ে প্রমাণ সহ হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলায় পরবর্তী শুনানি কলকাতা হাইকোর্টের শীতকালীন ছুটি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের পর।                                                                                                                                                                                            

বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯

বীরভূমে খুনের মামলায় সাপ্লিমেন্ট চার্জশিটপ্রাপ্ত মুকুল রায়ের আগাম জামিন খারিজ

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের তিন খুনে সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট প্রাপ্ত অভিযুক্ত বিজেপি নেতা  মুকুল রায়ের আগাম জামিনের আবেদন বিষয়ক মামলার শুনানি চলে। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ মুকুল রায়ের দাখিল করা পিটিশন টি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় আগাম জামিনের আবেদন টি খারিজ করে দেয়। তবে আবেদনকারী পুনরায় আগাম জামিনের আবেদন জানাতে পারে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একাধারে সরশুনা প্রতারণা মামলায় তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের জরুরি তলব অপরদিকে লাভপুরের খুনের মামলায় আগাম জামিনের আবেদন খারিজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায় কে আরও আইনী জটে ফেলে দিল বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। গত রবিবার (৪ ডিসেম্বর) লাভপুরের তিন ভাই খুনে বীরভূম জেলা পুলিশের সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দাখিলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম উঠে আসে। খুনের প্ররোচনায় ধারায় চার্জশিটটি পেশ হয়েছে। ৩০২ এর মত খুনের ধারায় চার্জশিট দাখিল বিষয়টি গুরত্ব অনুভব করেই তড়িঘড়ি অর্থাৎ গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে চার্জশিটে নাম বাতিলের পিটিশন টি করেছিলেন মুকুল রায়। মঙ্গলবার দুপুরে এই পিটিশনের শুনানিতে আবেদন টি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় আগাম জামিন টি স্বভাবতই খারিজ হয়। তবে এই এজলাসেই পুনরায় আগাম জামিনের আবেদন জানাতে পারে আবেদনকারী, তাও স্পষ্ট করেছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।লাভপুরের খুনের মামলায় একদা তৃনমূল বিধায়ক তথা অধুনা গেরুয়া নেতা মনিরুল ইসলামের নাম চার্জশিটে আসাটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম আসবে তা রাজনৈতিক মহলে অপ্রত্যাশিত ছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের লাভপুরে এলাকার তিনভাই খুনের মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ জারি করে থাকে । ৯ বছর পূর্বে এই মামলার যিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মামলার পুনরায় তদন্তের। তবে বীরভূমের পুলিশসুপারের নজরদারিতে তিনমাসের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে হাইকোর্টের আদেশনামায় উল্লেখ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে ভীষন চাপে পড়ে যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কেননা এই মামলায় তিনিই মূল অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন। মামলার তদন্তে প্রথমভাগে এই স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। সেসময় লাভপুর বিধায়ক শাসকদলের প্রভাবশালী বিধায়ক হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি 'ঘরপোড়া গরু'র মত রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণ করছেন। দিল্লি গিয়ে দলবদল করলেও বিজেপিতে 'অচ্ছুৎ' অবস্থায় আছেন। তাই রাজ্য পুলিশের তদন্তে দলত্যাগী তৃনমূল বিধায়ক কে নিয়ে নানান জল্পনা জেলা রাজনীতিমহলে। আদালত সুত্রে জানা প্রকাশ, ২০১০ সালে লাভপুরে একই পরিবারে ৩ ভাই খুন হয়েছিলেন।নিহতেরা হল ধানু সেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক সেখ।  এই খুনে অভিযোগকারী এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় থানায় ।মামলার প্রথম পয্যায়ে পুলিশি তদন্তে চার্জশিট পেশে দেখা যায়,  বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন কে তাদের বিরুদ্ধে উঠা খুনের অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে। এহেন পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা আদালতে মামলাকারী পুনরায় তদন্তের জন্য পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশন গ্রহণ না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় নিহতের পরিবার। এরপর, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি মধুমতী মিত্রের বেঞ্চ   জানিয়ে দেয় - ২০১০ সালের এই খুনের মামলায় পুনরায় তদন্ত করবেন আগেকার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। পুলিশসুপারের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে। এবং তা শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যেই। সেইসাথে ২০১৮ সালের 'সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প 'আইনে মামলাকারী এবং নিহতের পরিবার কে পুলিশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।  ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা  উচ্চ আদালতের  নির্দেশে ফের লাভপুর হত্যা মামলার চার্জশিট জমা পড়ল। আর সেই চার্জশিটে স্বাভাবিক ভাবেই নাম উঠে এল বিজেপি নেতা মণিরুল ইসলামের নাম। এছাড়া আরেকটি  গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এল দ্বিতীয় পয্যায়ের চার্জশিটে । প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এর নাম উঠে এল ।  খুনের প্ররোচনার দায়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে । চলতি ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে ২০১০ সালের ঘটনার পুনর্তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয় জেলাপুলিশ। গত রবিবার চার্জশিট গৃহীত হয় আদালতের তরফে  ।জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন -  "হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিট গৃহীত হয়েছে ।" বালিরঘাটের দখলদারির দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা ডেকেছিলে সেসময়কার দাপুটে  নেতা   মণিরুল ইসলাম । তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন । সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে । মণিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় নিহতের পরিবারের পক্ষে । ঘটনার পরে পরে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে মনিরুল ইসলাম সদবলে তৃণমূলে যোগ দান করেন বলে অভিযোগ । পরে লাভপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ীও  হন । ২০১১ সালে সাঁইথিয়ার একটি জনসভা থেকে "তিনজনকে পা দিয়ে পিষে মেরে  দিয়েছি" বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মণিরুল ইসলাম। ২০১৫  সালে এই মামলায় পুলিশ বোলপুর আদালতে ৩০ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । সেই চার্জশিটে নাম বাদ যায় এই মণিরুলের, সাথে আরও ২২ জনের। তখন অবশ্য শাসকদলের বিধায়ক  ছিলেন তিনি।  নিহতের পরিবার তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন । এই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ।  ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মণিরুল।  দিল্লিতে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের মাধ্যমে বিজেপিতে যোগ দান করেন মণিরুল।সেখানেও তাঁকে নিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ে। তাই  তাঁকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। হাইকোর্টের  নির্দেশে ফের তদন্ত শুরু করে বীরভূম পুলিশ ।গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মণিরুল ইসলামের । ২০১০ সালে ঘটনার সময় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ছিলেন মুকুল রায় । প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিটে স্থান পেয়েছে মুকুল রায়ের নাম।তবে মুকুল বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন - "বিগত বাম আমলে শেষের দিকে সিপিএম যেমন পুলিশ নির্ভর ছিল, এখন তৃনমূল সেই ভূমিকাটা নিয়েছে। এহেন মিথ্যা মামলার  ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আদালতেই সুবিচার পাব"। বীরভূমের এই খুনের মামলায় এফআইআর কপিতে নাম ছিল না মুকুল রায়ের। এমনকি চার্জশিট দাখিলেও ছিলনা মুকুল রায়ের না।সাপ্লিমেন্ট চার্জশিটে খুনের প্ররোচিত করার (৩০২) মত জামিন অযোগ্য ধারা আনা হয়। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু হয়েছে বলে প্রকাশ । ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টে মঙ্গলবার দুপুরে মুকুল রায়ের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় আরও আইনীভাবে কোনঠাসা হলেন মুকুল রায়। তবে আগাম জামিনের আবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার জন্য হয়েছে, মামলার মেরিট হিসাবে নয়। যদিও আগাম জামিনের আবেদনকারী পুনরায় পিটিশন করতে পারে তাও জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।            

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯

পার্ক স্ট্রিট মামলায় নিম্ন আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ নয়, জানালো কলকাতা হাইকোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে পার্ক স্ট্রিট গনধর্ষন মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় দ্রুত শুনানি চাওয়া এক পিটিশনের শুনানি চলে। সেখানে দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করে   কলকাতা হাইকোর্ট পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয় - 'নিম্ন আদালত অর্থাৎ সিটি সেশন কোর্টে যেমন বিচার প্রক্রিয়া চলছে, ঠিক তেমনিই চলবে। নিম্ন আদালতে শুনানিতে কোন অনিয়ম নেই '। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট পার্ক স্ট্রিট গনধর্ষন মামলায় নিম্ন আদালত কে তিন মাসের মধ্যে মামলা নিস্পত্তি করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তিন মাস তো বটেই আটমাস কেটে যাওয়ায় এখনো এই মামলার নিস্পত্তি ঘটেনি। তাই অভিযুক্তদের পক্ষে দ্রুত শুনানির আবেদন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেন মামলাকারীর আইনজীবী। সোমবার দুপুরে এই পিটিশনের শুনানিতে বিচারপতি পার্ক স্ট্রিট গনধর্ষন মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় কোন হস্তক্ষেপ করতে রাজী নয় বলে জানিয়ে দেন। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ৯ ফেব্রুয়ারির পার্ক স্ট্রিট গনধর্ষন মামলায় প্রথম পয্যায়ে দুজনের দশ বছরের কারাবাসের রায়দান ঘটে। দ্বিতীয় পয্যায়ে বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে  দুজন গ্রেপ্তার হয়। গনধর্ষন কান্ডে নির্যাতিতা ২০১৫ সালে ১৩ মার্চ মশাবাহিত রোগে মারা যান। ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া এক সন্ধ্যায় পার্কস্ট্রিটে একটি মারুতি ভ্যান এর মধ্যে গণধর্ষণ করা হয় এক মহিলাকে। সেই গণধর্ষণ মামলায় নিম্ন আদালতে দুজন  অভিযুক্ত কে দশবছরেের সাজা দিলেও পরবর্তী পর্যায়ে আরো দুই অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও তাদের মামলা এখনো পর্যন্ত নিম্নআদালতে ঝুলে রয়েছে। শাস্তি কবে পাবে সে বিষয়ে নিয়ে  দীর্ঘ প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে।মামলার আবেদনকারির পক্ষের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জানিয়েছেন - "  ২০১২ সালে ৯ ফেব্রুয়ারিতে একটি মারুতি ভ্যান এর মধ্যে  এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণা করে কলকাতা নগর দায়রা আদালত। এই পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় আরো দুই অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ফেরার ছিল।২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আজাহার আলী  সহ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৪ শে নভেম্বর ২০১৬ সালে গণধর্ষণ মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিট দেয় পুলিশ। ১৭ ই ডিসেম্বর ২০১৬ সালে কলকাতা নগর দায়রা আদালতে শুরু হয় এই মামলার শুনানি। ২০  এপ্রিল ২০১৮ সালে পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় পর্বের সার্চ ফ্রেম হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এই দুই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের ফৌজদারি ধারা ৩৭৬( ২) জি,১২০ বি,৫০৬,৩৪ নম্বর ধারায় মামলার শুনানি শুরু হয়।২০১৯ সালে ৩ রা মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল ৩ মাসের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হবে। দীর্ঘ আট মাস কেটে গেলেও মামলা শুনানি দূর অস্ত এখন পর্যন্ত সাক্ষীদের বয়ান সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেনি পুলিশ। মামলার শুনানি শেষ কবে হবে সেইটাও পরিষ্কার নয়। চলতি বছরের ২২ শে ডিসেম্বর কলকাতা নগর দায়রা আদালতের   এই পাক স্টিট গণধর্ষণ মামলার বিচারক অবসর নেবেন, স্বাভাবিকভাবেই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।এই অনিশ্চয়তা কাটাতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় অভিযুক্ত আজাহার আলী ওরফে আলী খান। আইনজীবীর মাধ্যমে দ্রুত শুনানির আবেদন চেয়ে মামলা দাখিল হয়। সোমবার দুপুরে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি নিম্ন আদালতে এই মামলার সমস্ত কাগজপত্র দেখে জানিয়ে দেন - নিম্ন আদালতে শুনানিতে কোন অনিয়ম নেই, যেমন ভাবে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে তেমনই চলবে। মামলার বিষয়ে কোন হস্তক্ষেপ করতে রাজী নয় তা জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।                                

বীরভূমের তিনভাই খুনের মামলায় আজ কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে লাভপুরের খুনের মামলায় সাপ্লিমেন্ট চার্জশিটে মুকুল রায়ের নাম বাতিলের পিটিশনে শুনানি হতে পারে। গত রবিবার লাভপুরের তিন ভাই খুনে বীরভূম জেলা পুলিশের সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দাখিলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম উঠে আসে। খুনের প্ররোচনায় ধারায় চার্জশিটটি পেশ হয়েছে। ৩০২ এর মত খুনের ধারায় চার্জশিট দাখিল বিষয়টি গুরত্ব অনুভব করেই তড়িঘড়ি অর্থাৎ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীর মাধ্যমে চার্জশিটে নাম বাতিলের পিটিশন টি করেন মুকুল রায়। মুকুল শিবিরের দাবি - "২০১০ সালে বীরভূমের লাভপুরের খুনের সময় মূল অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম তখন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন। তখন মুকুল রায় তৃণমূলের দু নাম্বার ব্যক্তি। রাজ্যসরকারে শাসক দল হিসাবে ছিল বামেরা। তৃনমূল তখন মূল প্রতিপক্ষ। তাই তৎকালীন বাম বিধায়ক কে তৃনমূল নেতা মুকুল রায়ের প্ররোচিত করার কোন ভূমিকা থাকতে পারে"? লাভপুরের খুনের মামলায় একদা তৃনমূল বিধায়ক তথা অধুনা গেরুয়া নেতা মনিরুল ইসলামের নাম চার্জশিটে আসাটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম আসবে তা রাজনৈতিক মহলে অপ্রত্যাশিত ছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের লাভপুরে এলাকার খুনের এক মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ৯ বছর পূর্বে এই মামলার যিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মামলার পুনরায় তদন্তের। তবে বীরভূমের পুলিশসুপারের নজরদারিতে তিনমাসের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে ভীষন চাপে পড়ে যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কেননা এই মামলায় তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন। মামলার তদন্তে প্রথমভাগে এই স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। সেসময় লাভপুর বিধায়ক শাসকদলের প্রভাবশালী বিধায়ক হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি 'ঘরপোড়া গরু'র মত রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণ করছেন। দিল্লি গিয়ে দলবদল করলেও বিজেপিতে অচ্ছুৎ অবস্থায় আছেন। তাই রাজ্য পুলিশের তদন্তে দলত্যাগী তৃনমূল বিধায়ক কে নিয়ে নানান জল্পনা জেলা রাজনীতিমহলে। আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে লাভপুরে একই পরিবারে ৩ ভাই খুন হয়েছিলেন।নিহতেরা হল ধানু সেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক সেখ।  এই খুনে অভিযোগকারী এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।মামলার প্রথম পয্যায়ে পুলিশি তদন্তে চার্জশিট পেশে দেখা যায়,  বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন কে তাদের বিরুদ্ধে উঠা খুনের অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে। এহেন পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা আদালতে মামলাকারী পুনরায় তদন্তের জন্য পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশন গ্রহণ না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় নিহতের পরিবার। এরপর, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি মধুমতী মিত্রের বেঞ্চ    জানিয়ে দেয় - ২০১০ সালের এই খুনের মামলায় পুনরায় তদন্ত করবেন আগেকার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। পুলিশসুপারের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে। এবং তা শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যেই। সেইসাথে ২০১৮ সালের সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প আইনে মামলাকারী এবং নিহতের পরিবার কে পুলিশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।  ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা  উচ্চ আদালতের  নির্দেশে ফের লাভপুর হত্যা মামলার চার্জশিট জমা পড়ল। আর সেই চার্জশিটে স্বাভাবিক ভাবেই নাম উঠে এল বিজেপি নেতা মণিরুল ইসলামের নাম। এছাড়া আরেকটি  গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এল দ্বিতীয় পয্যায়ের চার্জশিটে । প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এর নাম উঠে এল   ।  প্ররোচনার দায়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। চলতি ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে ২০১০ সালের ঘটনার পুনর্তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। রবিবার চার্জশিট গৃহীত হয় আদাালতের তরফে  ।জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন -  "হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিট গৃহীত হয়েছে ।" বালিরঘাটের দখলদারির দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা ডেকেছিলে সেসময়কার দাপুটে  নেতা   মণিরুল ইসলাম । তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন । সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে । মণিরুল ইসলাম সহ ৫২ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় । ঘটনার পরে পরে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৃণমূলে যোগ দান করেন তিনি বলে অভিযোগ । পরে লাভপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ীও  হন । ২০১১ সালে সাঁইথিয়ার একটি জনসভা থেকে "তিনজনকে পা দিয়ে পিষে মেরে  দিয়েছি" বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মণিরুল ইসলাম। ২০১৫  সালে এই মামলায় পুলিশ বোলপুর আদালতে ৩০ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । সেই চার্জশিটে নাম বাদ যায় এই মণিরুলের। তখন অবশ্য শাসক দলের বিধায়ক  ছিলেন তিনি। 
 নিহতের পরিবার তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন । এই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ।  ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মণিরুল।  দিল্লিতে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের মাধ্যমে বিজেপিতে যোগ দান করেন মণিরুল।সেখানেও তাঁকে নিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ে। তাই  তাঁকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। হাইকোর্টের  নির্দেশে ফের তদন্ত শুরু করে বীরভূম পুলিশ ।গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মণিরুল ইসলামের । ২০১০ সালে ঘটনার সময় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ছিলেন মুকুল রায় । প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিটে স্থান পেয়েছে মুকুল রায়ের নাম।তবে মুকুল বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন - বিগত বাম আমলে শেষের দিকে সিপিএম যেমন পুলিশ নির্ভর ছিল, এখন তৃনমূল সেই ভূমিকাটা নিয়েছে। এহেন মিথ্যা মামলার  ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আদালতেই সুবিচার পাব।                 

সোমবার, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯

রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলায় জটিলতা, পুনরায় শুনানি ৮ জানুয়ারি

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

সোমবার দুপুরে বিধাননগরে স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনালে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলার শুনানি চলে। কোন নির্দেশজারী না হলেও স্যাটের বেঞ্চ জানিয়ে দেয় - একাধারে গত ২৬ জুলাইয়ের এই বেঞ্চের রায়ের উপর রাজ্যের পূন বিবেচনার আবেদন (আপিল) চলবে। ঠিক তেমনি স্যাটের রায় কার্যকর না করার জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননারও শুনানি চলবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৮ জানুয়ারি রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই স্যাটের ডিএ মামলার রায়দানে একমাসের মধ্যে রাজ্য কে পদক্ষেপ নিতে বলেছিল স্যাটের এই বেঞ্চ। তা কার্যকর করেনি রাজ্য সরকার। তাই রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে মামলা করে মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন।২০১১ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। রাজ্যে পালাবদল হলেও সেই বঞ্চনা যেন দিন কে দিন বেড়েই চলছিল। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের কর্মী সংগঠনের তরফে ডিএ নিয়ে মামলা দাখিল হয়। স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত থেকে   কলকাতা হাইকোর্ট, আবার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত। এইসবের মাঝেই এগারো মাসের শুনানির পর গত ২৬ জুলাই বিধাননগরে অবস্থিত স্যাট ( স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালত)  ডিএ মামলার নিস্পত্তি ঘটেছিল। সেই রায়ে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল - কেন্দ্রীয় হারে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা ডিএ পাবেন। আগামী তিনমাসের মধ্যে ডিএ এর বর্ধিত অর্থ পাওয়া নিয়ে  আইন করতে হবে এবং সেটা আগামী ছয়মাসের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। সেইসাথে কর্মীদের নগদে কিংবা পিএফ একাউন্টে জমা করতে হবে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা। ষষ্ঠ পে কমিশনের রিপোর্ট আগে হলে সেটা আগে কার্যকর করতে হবে। রিপোর্ট না এলে আগামী একবছরের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে।  সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য মেনে এই নির্দেশ। এইমুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ডিএ পান বেশি আর এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা পান কম। অর্থাৎ ফারাক রয়েছে বেতন পরিকাঠামোয়। বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা এক বছরের মধ্যেই মিটিয়ে দিতে বলেছিলেন স্যাটের বিচারবিষয়ক বিচারক রঞ্জীত বাগ এবং প্রশাসনিক বিষয়ক বিচারক সুবেশ কুমার দাসের ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও স্যাটের রায় ঘোষণা পরবর্তী মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন - সব দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি এই রাজ্যের বিভিন্ন পরিষেবামূলক কর বৃদ্ধি না করার সাথে ডিএ এর বর্ধিত অর্থ না বাড়ানোর যুক্তি দেখিয়েছেন। রাজ্যের পক্ষে সরকারি আইনজীবীদের মধ্যে বিশ্বপ্রিয় রায় বলেন -  "সরকারের বকেয়া মহার্ঘভাতা দেওয়া সদিচ্ছা আছে, তবে অর্থাভাবে সবটা দেওয়া সম্ভব নয়    "।  উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল অবধি বিগত বাম সরকার রাজ্য সরকারের কর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা মুদ্রাস্ফীতি হারে সামঞ্জস্য রেখে বাড়িয়ে ছিল। এর পরে তৃণমূল জমানায় রাজ্য সরকারের কর্মীদের মহার্ঘ্য ভাতা কেন্দ্রীয় হারে বাড়েনি  তবে দিল্লী - চেন্নাইতে কর্মরত সরকারি কর্মীদের ডিএ কেন্দ্রীয় অনুপাতে বাড়ছিল। একাধারে সর্বভারতীয় ক্রেতা মূল্য মেনে সরকারি কর্মীদের বেতনের মহার্ঘ্য ভাতা যেমন বাড়েনি, ঠিক তেমনি দিল্লি - চেন্নাইতে কর্মরত সরকারি কর্মীদের বেতন পরিকাঠামোয় এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বেতন বৈষম্য কেন?  কেননা রাজ্য সরকার তো একটায় উভয় সরকারি কর্মীদের। কংগ্রেস প্রভাবিত রাজ্য সরকারের কর্মী সংগঠনের তরফে ডিএ নিয়ে মামলা দাখিল করেন মলয় মুখোপাধ্যায়। মামলাকারীর আইনজীবী হিসাবে অন্যতম আইনজীবী রয়েছেন সর্দার আমজাদ আলী। স্যাটে মামলা গ্রহণের প্রথম পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয় - কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা রাজ্যের সরকারি কর্মীদের অধিকার নয়, রাজ্যের দয়ার দান হল মহার্ঘভাতা। এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যান মামলাকারীরা। তখন ডিভিশন বেঞ্চ জানায় - বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা পাওয়া রাজ্য সরকারের কর্মীদের আইনসিদ্ধ অধিকার। তাই পুনরায় বিবেচনার জন্য স্টেট এডমিনিস্ট্রেট ট্রাইবুনাল আদালতে মূল মামলাটি পাঠায়। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন আদেশনামার বিরুদ্ধে রাজ্যের পক্ষে সরকারি আইনজীবীরা স্থগিতাদেশ চাইলে   তা খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ২৬ জুলাই স্যাট জানিয়েছিল - কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা পাবেন এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। আগামী এক বছরের মধ্যেই মিটিয়ে দিতে হবে।তবে এর আগে ষষ্ঠ পে কমিশন লাগু হলে সেটায় গ্রাহ্য হবে। যদি পে কমিশন লাগু না হয় তাহলে     প্রথম তিনমাসের মধ্যে ডিএ নিয়ে  আইন গঠন,পরের তিন মাসে তা কার্যকর করা। বকেয়া মহার্ঘ্যভাতাটি নগদে কিংবা পিএফ একাউন্টে জমা করতে হবে। মামলায় আবেদনকারীর দের বক্তব্য - "অল ইন্ডিয়া কনজুমার  প্রাইস ইন্ডেক্স   মেনে স্যাটের এই নির্দেশজারী হয়েছিল । রাজ্য সরকার তাদের একই কর্মীদের দু ধরনের বেতন বৈষম্য রেখেছে। যারা ভিন রাজ্যে কর্মরত তাদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা আর এই রাজ্যের সরকারি কর্মীদের জন্য নেই কোন মহার্ঘভাতা, এটা তো বেআইনি। " ।  উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অধীনে থাকা কর্মীদের জন্য বছরে দুবার মহার্ঘভাতা দেয়। এইমুমুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা বেশি পান মহার্ঘভাতা। সেখানে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা পান কম। বেতন পরিকাঠামোয় তা কম। এখন দেখার রাজ্য সরকার স্যাটের নির্দেশ অনুযায়ী   একবছরের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা দেয় কিনা। নাকি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যায়।  ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্যের তরফে স্যাটের ডিএ মামলার রায় আপিল করার আবেদন জমা পড়েছিল। তা আদালত গ্রহণ করে থাকে। আবার তিনমাসের মধ্যে এই রায় কার্যকর না করার জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলাও গ্রহণ করা হয়। আগামী ৮ জানুয়ারি এই মামলায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে।                                                                                                                                                                                                                                                                                      


লাভপুরে তিনভাই খুনে সাপ্লিমেন্ট চার্জশিট দাখিলে এল মুকুল রায়ের নাম

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

লাভপুরের খুনের মামলায় একদা তৃনমূল বিধায়ক তথা অধুনা গেরুয়া নেতা মনিরুল ইসলামের নাম চার্জশিটে আসাটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপর কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের নাম আসবে তা অপ্রত্যাশিত ছিল। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে হইচই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে বীরভূমের লাভপুরে এলাকার খুনের এক মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ৯ বছর পূর্বে এই মামলার যিনি তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মামলার পুনরায় তদন্তের। তবে বীরভূমের পুলিশসুপারের নজরদারিতে তিনমাসের মধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে বলে আদেশনামায় উল্লেখ ছিল। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে ভীষন চাপে পড়ে যান লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কেননা এই মামলায় তিনি মূল অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন। মামলার তদন্তে প্রথমভাগে এই স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন অভিযুক্তদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। সেসময় লাভপুর বিধায়ক শাসকদলের প্রভাবশালী বিধায়ক হিসাবে ছিলেন। বর্তমানে তিনি 'ঘরপোড়া গরু'র মত রাজনৈতিক ময়দানে বিচরণ করছেন। দিল্লি গিয়ে দলবদল করলেও বিজেপিতে অচ্ছুৎ অবস্থায় আছেন। তাই রাজ্য পুলিশের তদন্তে দলত্যাগী তৃনমূল বিধায়ক কে নিয়ে নানান জল্পনা জেলা রাজনীতিমহলে। আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে লাভপুরে ৩ জন খুন হয়েছিলেন।নিহতেরা হল ধানু সেখ, কাটুন সেখ এবং তুরুক সেখ।  এই খুনে অভিযোগকারী এলাকার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।মামলার প্রথম পয্যায়ে পুলিশি তদন্তে চার্জশিট পেশে দেখা যায়,  বিধায়ক মনিরুল ইসলাম সহ ২২ জন কে তাদের বিরুদ্ধে উঠা খুনের অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেওয়া হয়েছে। এহেন পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা আদালতে মামলাকারী পুনরায় তদন্তের জন্য পিটিশন দাখিল করেন। সেই পিটিশন গ্রহণ না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় নিহতের পরিবার। এরপর, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি মধুমতী মিত্রের বেঞ্চ    জানিয়ে দেয় - ২০১০ সালের এই খুনের মামলায় পুনরায় তদন্ত করবেন আগেকার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। পুলিশসুপারের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে। এবং তা শেষ করতে হবে তিনমাসের মধ্যেই। সেইসাথে ২০১৮ সালের সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প আইনে মামলাকারী এবং নিহতের পরিবার কে পুলিশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।  ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা  উচ্চ আদালতের  নির্দেশে ফের লাভপুর হত্যা মামলার চার্জশিট জমা পড়ল। আর সেই চার্জশিটে স্বাভাবিক ভাবেই নাম উঠে এল বিজেপি নেতা মণিরুল ইসলামের নাম। এছাড়া আরেকটি  গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এল দ্বিতীয় পয্যায়ের চার্জশিটে । প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায় এর নাম উঠে এল   ।  প্ররোচনার দায়ে তাঁর নাম জড়িয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ। চলতি ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে ২০১০ সালের ঘটনার পুনর্তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। আজ সেই চার্জশিট গৃহীত হয় আদাালতের তরফে  ।জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন -  "হাইকোর্টের নির্দেশে ফের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেই চার্জশিট গৃহীত হয়েছে ।" বালিরঘাটের দখলদারির দ্বন্দ্ব মেটাতে ২০১০ সালের ৪ জুন লাভপুরের নবগ্রামে নিজের বাড়ির উঠানে সালিশি সভা ডেকেছিলে সেসময়কার দাপুটে  নেতা     মণিরুল ইসলাম । তখন তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন । সেই সালিশি সভায় বচসার জেরে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে কটুন শেখ, ধানু শেখ ও তরুক শেখকে । মণিরুল ইসলাম সহ ৫৫ জনের নামে লাভপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় । ঘটনার পরে পরে আইনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তৃণমূলে যোগ দান করেন তিনি বলে অভিযোগ । পরে লাভপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয়ীও  হন । ২০১১ সালে সাঁইথিয়ার একটি জনসভা থেকে "তিনজনকে পা দিয়ে পিষে মেরে  দিয়েছি" বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মণিরুল ইসলাম। ২০১৫  সালে এই মামলায় পুলিশ বোলপুর আদালতে ৩০ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় । সেই চার্জশিটে নাম বাদ যায় এই মণিরুলের। তখন অবশ্য শাসক দলের বিধায়ক  ছিলেন তিনি। 
 নিহতের পরিবার তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন । এই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ।  ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন মণিরুল।  দিল্লিতে গিয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়ের মাধ্যমে বিজেপিতে যোগ দান করেন মণিরুল।সেখানেও তাঁকে নিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ে। তাই  তাঁকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। হাইকোর্টের  নির্দেশে ফের তদন্ত শুরু করে বীরভূম পুলিশ ।গত ৪ ডিসেম্বর বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ । জানা গিয়েছে, এই চার্জশিটে নাম রয়েছে মণিরুল ইসলামের । ২০১০ সালে ঘটনার সময় তৃণমূলের অন্যতম নেতা ছিলেন মুকুল রায় । প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে চার্জশিটে স্থান পেয়েছে মুকুল রায়ের নাম।তবে মুকুল বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন - রাজ্য সরকারের এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হবেন।          

মাথায় হেলমেট থাকলে মিলবে এক কেজি পেঁয়াজ

সানি প্রসাদ
 
হেলমেট পড়লেই হাতে এক কেজি পেঁয়াজ। অগ্নিমূল্যের বাজারে মহার্ঘ পেঁয়াজ। 

ট্রাফিক নিয়ম মেনে হেলমেট পড়ে গেলেই ১ কেজি পেঁয়াজ উপহার বাইক চালকদের।  রবিবাসরীয় সকালে পথ সচেতনতার অভিনব উদ্যোগ পূর্ব বর্ধমানের মেমারীতে।এদিন মেমারির পাল্লা পল্লিমঙ্গল সমিতি সকাল  থেকে দুপুর পর্যন্ত পাল্লা রোডে হেলমেট পড়ে যাওয়া বাইক চালকদের ১ কেজি করে পেঁয়াজ উপহার দেয়।  এই দুর্মূল্যে বাজারে বাইক নিয়ে হেলমেট পড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে সচেতনতার বিনিময়ে পেঁয়াজ পেয়ে খুশি বাইক চালকরাও। সেব ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে সরকারি বা বেসরকারী ভাবে এত প্রচার।তবু এদিন দুর্ভাগ্যের বিষয় মাত্র ৩২ জন হেলমেট পড়ে বাইক আরোহী মহার্ঘ পেঁয়াজ উপহার পান।ওই রাস্তায় দু'শোর উপরে বাইক চালক বিনা হেলমেট গিয়ে এদিন বড় আফসোস করছেন। উদ্যোক্তা রা বলেন  হেলমেট ছাড়া রাস্তায় বেড়িয়ে আফশোসে কপাল চাপড়াচ্ছেন। পিয়াঁজ না পেয়ে কপাল চাপড়াচ্ছেন বটে কিন্তু হেলমেট না পড়লে আপনার জীবনের জন্য আপনার পরিবারকে কপাল চাপড়াতে হবে। তাই পেঁয়াজের জন্য নয়, নিজের জীবনের গ্যারেন্টির জন্য হেলমেটটা দয়া করে পড়ুন। এই রকম পথ সচেতনায় পেঁয়াজ বিলির সারপ্রাইস ইভেন্টে  দুর্মূল্যের বাজারে বিনাপয়সায় পেঁয়াজ পেতে পথ নিরাপত্তা মেনে হেলমেট পড়ে বেড়ুলে ক্ষতি কি ! পিয়াঁজের সঙ্গে উপরি পাওনা নিজের জীবনের সুরক্ষার গ্যারান্টিও।

রবিবার, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯

কালনায় ইনসান মল্লিক খুনে উঠছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন

মোল্লা জসিমউদ্দিন   

 রাতের অন্ধকারে দুস্কৃতিদের গুলিতে খুন হলেন কালনা ১ নং ব্লকের জনপ্রিয় তৃনমূল নেতা তথা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির   কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিক (৪৪)। শুক্রবার রাত নটার এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য দেখা গেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা এলাকায়। শনিবার দফায় দফায় ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পথ অবরোধ চলেছে কালনা কাটোয়া সড়করুটে । পুলিশি নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শাসক দলের নিচুস্তরের কর্মীরা। কেননা খুনের ঘটনাস্থলে নিহত নেতার উপর মাস আটেক আগেও এইরুপ প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিলো সশস্ত্র দুস্কৃতিরা। যদি পুরাতন ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত স্থানীয় কালনা থানার পুলিশ করতো, তাহলে শুক্রবার রাতে এইভাবে প্রাণ দিতে হত না ইনসান মল্লিক কে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের  । যদিও শনিবার থেকে ইনসান মল্লিক খুনে দোষীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি সক্রিয়তা চোখে পড়েছে। অর্থাৎ ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহর ক্ষেত্রে । এলাকাসুত্রে প্রকাশ, শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে কালনার বেগমপুর অঞ্চলের নারায়নপুর এলাকায় দলীয় অফিস থেকে মোটরসাইকেল করে বাড়ী ফিরছিলেন কালনা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিক। নারায়নপুর এলাকায় এক মিলের সামনে অপেক্ষারত কয়েকজন সশস্ত্র দুস্কৃতি ইনসান মল্লিক কে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে,এরপরে মোটরসাইকেল চেপে তারা পালিয়ে যায়। যারমধ্যে একটি গুলি এফোড়ওফোড় হয়ে যায়, আরেকটি গুলি লাগে শরীরে। সেসময় আহত অবস্থায় আনা হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে।গুলিবিদ্ধ নেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা কলকাতা রেফার করে দেন। রাত্রি দশটা নাগাদ কালনা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে হুগলির বৈচিতে মারা যান এই নেতা। পান্ডুয়া হাসপাতালে চিকিৎসকরা সরকারি ভাবে মৃত ঘোষণা করেন। পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির তৃনমূল কর্মী খুনের পর কালনার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ খুনে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা গেছে শাসক শিবিরের মধ্যে। দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশি নিস্ক্রিয়তা নিয়ে সরব নিহতদের পরিবার। যদিও জেলা পুলিশের পক্ষে দাবি করা হয়েছে -অভিযুক্তরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে।কালনার নিহত তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিক ভোট করানো বিষয়ে অত্যন্ত সংগঠক ছিলেন বলে দলীয় সুত্রে প্রকাশ। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে কালনা পুরভোট সবেতেই শাসক দলের লিড আনাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুপরিকল্পিতভাবে এই নেতা কে সরিয়ে ফেলা হল কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আবার আরেক সুত্রে প্রকাশ, নিহত ইনসান মল্লিক ক্রমশ গোপনে বিজেপির ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তাই দলীয় অন্তর্ঘাতে খুন হতে পারেন তিনি। কেননা এইরুপ কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পদাধিকারীদের গতিবিধি জানা সম্ভব ঘনিষ্ঠবলয়েই। শুক্রবার রাতে দলীয় অফিসে কারা ছিলেন?  খুনের আগে নিহত নেতার ফোনে কললিস্ট ও লোকেশন ট্র্যাকিং করলে খুনে জড়িতদের বিষয়ে পুলিশ তথ্য ও সুত্র পেতে পারে বলে পুলিশের একাংশের মত। এখন দেখার পুলিশ তদন্তের অভিমুখ কোন দিকে নিয়ে যায়?                                                                                                                                                     

শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯

এবার সিবিআইয়ের তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট নারদা মামলায় সিবিআই তদন্তে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন তুললো। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। মামলা রুজু করার চার বছরে সিবিআই এই মামলায় কি কি করেছে তা সবিস্তার জানতে চায় হাইকোর্ট । যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন এজলাসে জানিয়েছেন - এই মামলায় অভিযুক্ত চার জন সাংসদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় অনুমতি লোকসভার স্পিকারের কাছে চেয়েছে তারা। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্ট জানতে চায় - নারদা স্টিং অপারেশনে ব্যবহৃত মোবাইল আপেল সংস্থার রিপোর্ট চার বছরেরও কেন এলনা?  আমেরিকার সদর অফিস থেকে আসতে এত সময় লাগে? মামলার দীর্ঘায়িত নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলেন বিচারপতি। উল্লেখ, এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অভিযুক্ত সাংসদ, আইপিএস, নেতাদের ভয়েস রেকর্ড সংগ্রহ করেছে শুধুমাত্র। আইপিএস সৈয়দ হোসেন আলী মির্জা কে গ্রেপ্তার করলেও বর্তমানে ওই আইপিএস জামিনে মুক্ত রয়েছেন। আর কেউ এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়নি। ধৃত থাকাকালীন মির্জা কে নিয়ে মূল অভিযুক্ত মুকুল রায়ের সাথে মুখোমুখি জেরা সহ মুকুলের এলগিন রোডে বাড়ীতে ভিডিওগ্রাফি করেছে সিবিআই। এরপরই অজ্ঞাত কারনে এই মামলা থমকে যায় বলে অভিযোগ।যদিও মির্জা সিবিআই হেফাজতের থাকাকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে তথ্য সূত্র তুলে দিয়েছেন বলে প্রকাশ। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্ট নারদা মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলায় অন্য মাত্রা এল এই মামলায়।                                                                                              

রেল প্রতারণা মামলায় নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তী জামিন মুকুলের


মোল্লা জসিমউদ্দিন  

বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে সরশুনা প্রতারণা মামলায় শুনানি চলে। সেখানে রাজ্যের তরফে আইনজীবী আর্থিক প্রতারণা মামলায় বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের জামিনের বিরুদ্ধে কড়া সওয়াল চালান। তাঁর যুক্তি -" এই মামলায় ধৃত রাহুল সাউ এর ব্যাংক লেনদেনে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে। উত্তরপ্রদেশ - বিহার - ঝাড়খণ্ড রাজ্যগুলিতে রেলের চাকরি - সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার নামে এক সিন্ডিকেটের হদিস মিলেছে। এমনকি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এক আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে। তাই মুকুল রায় জামিন পেলে এই মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে "। অপরদিকে মুকুল রায়ের আইনজীবী এইসব অভিযোগ ভিক্তিহীন দাবি করে রাজনৈতিক প্রতিশোধের যুক্তি দেখিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে নির্দেশ দেয় - 'এই মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পযন্ত মুকুল রায়ের অন্তবর্তী জামিন বহাল থাকবে'।আগামী ১৪ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।  ইতিমধ্যেই দিল্লিতে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী এক দল মুকুল রায় কে জেরা চালিয়েছে। আবার সম্প্রতি বেহালায় কলকাতা পুলিশের এক অফিসে ডেকে মুকুল রায় কে জেরা চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। কলকাতা হাইকোর্টে এই আর্থিক প্রতারণা মামলায় আইনী রক্ষাকবচের মেয়াদ ছিল ৩ ডিসেম্বর  পর্যন্ত।  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি পুনরায় উঠে। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে - 'তদন্তে পূর্ন সহযোগিতার শর্তে মামলার নিস্পত্তি না হওয়া  পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ মুকুল রায় কে গ্রেপ্তার করতে পারবে না'। আগেকার শর্তাবলি গুলি এবারেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ পুলিশের তরফে মুকুল রায় কে জেরা করতে গেলে তিনদিন আগে মুকুল রায় কে আগাম নোটিশ করে জানাতে হবে। এই মামলায় পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ জানুয়ারি। ইতিপূর্বে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল পুলিশের তদন্তপ্রক্রিয়ার উপর - জানুয়ারি তে অভিযোগগ্রহণ হওয়ার পর কেন এতদিন পর সক্রিয়তা নিয়ে ?  অভিযোগগ্রহণের প্রায় সাত মাস পর পুলিশ এই মামলায় তৎপরতা দেখায়।  এই মামলায় অভিযুক্ত   বাবান ঘোষ কে গত ২১ শে আগস্ট গ্রেপ্তারের পর কলকাতার বাবুঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের আরেক ঘনিষ্ঠ বলয়ে থাকা সাদ্দাম আলী কে।একসময় ধৃত বাবান ঘোষ কে জেরা করে নাম উঠে আসে সাদ্দাম আলীর নাম। তাই সাদ্দাম আলী কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থাকে বাবুঘাট এলাকা থেকে। সরশুনা ঘুষকান্ডে দুজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় ক্রমশ চাপে ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। পুলিশি সুত্রে প্রকাশ, এই মামলায় বাবান ঘোষের পাশাপাশি নাম রয়েছে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। তাই গ্রেপ্তারির আশংকা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন মুকুল রায়। জানা গেছে, আর্থিক প্রতারণা (৪২০ ধারা) , এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (১২০ বি)  এর জামিন অযোগ্য ধারা গুলি রয়েছে এফআইআর কপিতে।বেহালার সরশুনার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন - গড়িয়াহাটের বাসিন্দা তথা বিজেপির মজদুর ইউনিয়নের নেতা বাবান ঘোষ ২০১৫ সালে রেলের স্থায়ী কমিটির পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে ৪৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সেসময় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরেশ প্রভু। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে যোগাযোগ ভালো আছে বোঝানোর জন্য সংসদ ভবনে এই বাবান ঘোষ বেহালার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় কে নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি। রেলমন্ত্রকের নানা কাগজপত্র নাকি দিয়েছিল অভিযুক্ত বাবান ঘোষ। এই কাগজপত্রের সততা জানতে পূর্ব রেলের সদর দপ্তর কলকাতার ফেয়ারলি প্লেসে গিয়েছিলেন অভিযোগকারী। আর সেখানেই জানতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। যদিও বাবান ঘোষ শিবিরের দাবি - 'সম্প্রতি টালিগঞ্জের একঝাঁক শিল্পীদের তৃনমূল থেকে বিজেপিতে নাম লেখানোর কাজে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে ছিলেন বাবান ঘোষ। এই রাজনৈতিক শত্রুতা থেকেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু এবং গ্রেপ্তার সে'।প্রশ্ন উঠে ২০১৫ সালের বিষয়টি কেন প্রায় চার বছরের মাথায় তুললেন অভিযোগকারী এবং রেলের স্থায়ী কমিটিতে পদ পেতে কেন এত টাকা দিতেও গেলেন সেই বিষয়েও উঠেছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন ?                                                                                                                                                                                                                                                                                                    


OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER