রবিবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৮

মঙ্গলকোটে রাজ্যসরকারের কোটি কোটি অর্থ চুরি, পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকায় প্রশ্ন



মোল্লা জসিমউদ্দিন,

হিংস্বা হানাহানিতে রক্তাক্ত মঙ্গলকোটে নবতম সংযোজন কোটি কোটি সরকারি অর্থ চুরি। তবে নগদ নয়, ঘুরপথে চুরি। চলতি আর্থিক বর্ষে মঙ্গলকোটের নুতনহাট সাব স্টেশন হতে ২২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার মত বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে বলে দপ্তরের হিসাবে উঠে এসেছে। আবার মঙ্গলকোটে অজয় নদে বালির রাজস্ব বাবদ ২০ কোটির বেশি অর্থ আদায় হলেও সেটি   আদৌও ঠিক থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা যারা বালিঘাটের জন্য অগ্রিম অর্থ দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহন করেছিল। তাদের সেইসব বালিঘাট গুলি বেশিরভাগই চালু হয়নি। উল্টে সেইসব ঘাটে স্থানীয় পুলিশের একাংশের মদতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালির ঘাট দখল করে বসে আছেন!  এইরুপ নানান অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলকোটে। শুধু বিদ্যুৎ কিংবা বালি নয়, নুতনহাটে গাড়ী চুরি, বুইচির মোড়ে দোকানে চুরি, পশ্চিম মঙ্গলকোটে সাইকেল কিংবা সাবমারসেবল পাম্প চুরি। এমনকি থানার পাশে থাকা পদিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জল তোলার পাম্প মেশিন পর্যন্ত চুরি হয়েছে। এককথায় বলা যায় চোরেদের অবাধ মুক্তাঙ্গন হিসাবে মঙ্গলকোট ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে জেলার অন্য থানা এলাকা থেকে। জরুরি পরিষেবা প্রদানে বিদ্যুৎ বিভাগ হল অন্যতম। চলতি আর্থিক বর্ষে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২০০ কোটির কাছাকাছি বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে। বিদ্যুৎ চুরিতে প্রথমসারিতে   চলে এসেছে মঙ্গলকোট। ২৩ কোটির বিদ্যুৎ হাপিস হয়ে গেছে এই ব্লকে। তাও আউশগ্রামের গুসকারা সাবস্টেশন থেকে পশ্চিম মঙ্গলকোটের চারটি অঞ্চল অর্থাৎ পঞ্চাশের কাছাকাছি গ্রাম   নুতনহাট সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা পায়না। তাহলে বিদ্যুৎ চুরিতে আরও অতিরিক্ত ১০ কোটি যোগ হত মঙ্গলকোটের সাথে!  কেন এত বিপুল পরিমানের বিদ্যুৎ চুরি মঙ্গলকোটে?  নুতনহাট সাব স্টেশনের কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মী বলেন - " শুধুমাত্র বাড়ীতে বিদ্যুৎ চুরি করে এত কোটি কোটি টাকা যায়না, এটা বিভিন্ন মাঠের সাবমারসেবল, বিভিন্ন বাজারে তেলকল, আইসক্রিম  ফাক্টরি,   ইটভাঁটা,    প্রভৃতি জায়গায় চুরি বেশি হয় "। তাহলে অভিযান কেন নয়?  এই প্রশ্ন করতেই ওই বিদ্যুৎ কর্মীদের অভিযোগ - পুলিশ ছাড়া এইসব অভিযানে গেলে মারধর খেতে হয়, পুলিশের একাংশের সাথে ওদের যা সম্পর্ক সেখানে আমরা সাহস পায়না অভিযানে "। জানা গেছে, পঞ্চায়েত সমিতির এক বিদায়ী পদাধিকারী নিগন এলাকায় বেশকয়েকটি মৌজায় নামে বেনামে দশের বেশি সাবমারসেবল চালায় সারা বছর ধরে। সেগুলি বেশিরভাগই অবৈধ বলে স্থানীয়দের দাবি। শুধু নিগন নয় মঙ্গলকোট ব্লকজুড়ে হাজারের বেশি সাবমারসেবল আছে এইধরনের। যেগুলি সাময়িক অনুমতি নিয়ে সারাবছর চলে। কৈচর এলাকায় শাসকদলের ব্লক নেতার অনুগামী হিসাবে পরিচিতদের গ্রিল ফাক্টরি রয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ চুরি চলে বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে তৎকালীন জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনার পরিণতি হিসাবে প্রকাশ্যে এসেছিল   নিগন এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ চুরির অভিযান  ।    বাড়ীগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ মিটার ঠিকঠাক আছে কিনা , তার থেকে বেশি বিভিন্ন মাঠের সাবমারসেবলগুলির বৈধতা, সময়সীমা দেখা উচিত। সেইসাথে বিভিন্ন ইটভাটায় বিদ্যুতের ব্যবহার পরখ করলেই বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই রোখা যাবে।    এখন প্রশ্ন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?  কেননা বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটে শাসকদলের অনুগামীদের কাছে অভিযান চালানো দুস্কর স্থানীয় অফিসের কাছে। কোন সক্রিয়তা দেখাতে গেলে অফিস ভাঙ্গচুরের পাশাপাশি দপ্তর কর্মীদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে। ২৩ কোটি অর্থের বিদ্যুৎ চুরির অর্থ হয়তো আর উঠে আসবেনা। তবে জেলাস্তরে বিদ্যুৎ দপ্তর  কড়া ভূমিকা নিলে ভবিষ্যতে কোটি কোটি অর্থ চুরি রোধে  বাঁচবে, এটা বলা যায়। অপরদিকে বিদ্যুতের পাশাপাশি বালিচুরিতেও এগিয়ে মঙ্গলকোট। চলতি আর্থিক বর্ষে ২০ কোটি সরকারী রাজস্ব আদায় হয়েছে অজয় নদের বালিঘাট ঘিরে। মূলত বিভিন্ন ঘাটগুলির টেন্ডারে অগ্রিম লিজ নেওয়া এই অর্থরাশি। যারা ঘাট পেয়েছে, তাদের সিংহভাগই তাদের বালিঘাটে 'পজিশন' পাইনি বলে অভিযোগ। উল্টে মঙ্গলকোট থানার পুলিশের একাংশের মদতে বেশকিছু প্রভাবশালী নেতা বালিঘাটগুলি জবরদখল করে বসে আছে, তাও সশস্ত্র বাহিনী পাহাড়া দিয়ে।মঙ্গলকোট  থানায় এবেলা ওবেলা  যাওয়া মঙ্গলকোট সদর এলাকার এক উঠতি নেতা কোগ্রাম ও সাগিরার মাঝামাঝি একটি বালিঘাট যেমন দখল করে রয়েছেন। ভূমি সংস্কার দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে ক্রমশ মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে বিষয়টি।হাইকোর্টের এক আইনজীবী জানান - যারা সরকারিভাবে টেন্ডারে অংশগ্রহন করে লিজ বাবদ টাকা জমা দিয়েছেন বালিঘাটের জন্য, তারা যদি বালিঘাটে দখল না পান তাহলে মামলা করলে ভুমি সংস্কার দপ্তর ওই অর্থ সুদসহ দিতে বাধ্য "।  শুধু বিদ্যুৎ কিংবা বালি চুরি নয়। গাড়ী চুরি, দোকানে চুরি, বিদ্যালয়ে পাম্প মেশিন চুরি  সবেতেই এগিয়ে মঙ্গলকোট। উল্লেখ্য কাটোয়া মহকুমা আদালতে আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সম্পাদক সুশোভন মুখার্জির মোটরবাইক কৈচর বাজারে দিনেদুপুরে মাসকয়েক পূর্বে চুরি হয়েছিল। তার কিনারা পুলিশ এখনও করতে পারেনি। উল্টে অনেক চুরি যাওয়া জিনিশের মালিক থানায় জিডি করতে গেলে হয়রানি এমনকি অভিযোগপত্র গ্রহণ না নেওয়ার  অভিযোগ এনেছেন। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।                                                                                           

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৩০, ২০১৮

মঙ্গলকোটে বিদ্যুৎ চুরি ২৩ কোটি!

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

উন্নয়নের স্বর্গরাজ্য মঙ্গলকোটে বিদ্যুৎ চুরি প্রায় ২৩ কোটি!কেন এত বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে, উন্নয়নের কান্ডারীরা থাকতে? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, শাসকদলের বেশকিছু নেতার নামে বেনামে অনেকগুলি সাবমারসেবল, চালকল, তেলকল রয়েছে। যেগুলি বেশিরভাগই অবৈধ বলে অভিযোগ।   এগুলিতে অভিযান চালাতেও ভয় পান বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা। জেলা পুলিশের একাংশের সাথে মাখামাখি ছাড়াও সশস্ত্র লোকেদের নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন এরা। এখন প্রশ্ন রাজ্যসরকারের ২৩ কোটি বিদ্যুৎ চুরিতে শাসকদলের স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কতটা তৎপর হয় শীর্ষ তৃনমূল নেতৃত্ব?           

রবিবার, আগস্ট ১৯, ২০১৮

পূর্ব বর্ধমানের আদি তৃনমূলীরা ক্রমশ গেরুয়ামুখি



মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের আগে পূর্ব বর্ধমান জেলায় কালনা মহকুমার বেশকিছু অঞ্চল ছাড়া গেরুয়া শিবিরের অস্তিত্ব ছিলনা।  চারিদিকে দলবদলের হিড়িক শাসকদলের দিকে ভীড়লেও,  পূর্ব বর্ধমান জেলায় ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে গেরুয়া  শিবির। ইতিমধ্যেই জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিস সহ আরেকজন সদস্য রুবি ধীবর বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। সাংগঠনিকস্তরে দুজন নেতা অশোক মালাকার, শিবনাথ সিং এসেছেন। এছাড়া তৃনমূলের প্রতীকে মঙ্গলকোটে একদা লড়াকু প্রার্থী চন্দ্রনাথ মুখার্জি  এসেছেন পূর্ব বর্ধমানের গেরুয়া বলয়ে। আরও জানা যাচ্ছে, রাজ্যের পালাবদলের আগে ২০১০ সালে বামদূর্গ চুরমার করে দেওয়া তৃনমূল নেতা এবং সেসময়কার গুসকারা পুরচেয়ারম্যান চঞ্চল গড়াই যোগ দিতে চলেছেন বিজেপিতে। ইতিমধ্যেই তাঁর মেয়ে গতমাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির পতাকা ধরেছেন। আগামী  গুসকারা পুরভোটের     আগেই    চঞ্চল গড়াই   সদলবলে আসবেন বলে প্রকাশ। কেননা তিনি রাজ্যের এক বড় নেতার    সৌজন্যে  দলের অন্দরে  গুরত্বহীন এবং মিথ্যা পুলিশ কেসে জেল খেটেছেন বলে অভিযোগ। শুধু চঞ্চল গড়াই নয় জেলাপরিষদের আরেক বিদায়ী সদস্য তথা বামজামানায় মঙ্গলকোটের তৃনমূলের আরেক মুখ বিকাশ চৌধুরীও বিজেপিতে নাম লেখাতে পারেন। বর্তমানে তিনি দলীয় কর্মী ডালিম সেখ খুনে বিচারধীন বন্দি।তাঁর এহেন পরিণতিতে দলের ক্ষমতাসীন গ্রুপ দায়ী বলে অনুগামীদের জানিয়েছেন। একদা সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে মূল অভিযুক্ত হলেও সেসময় তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কে এই বিকাশ চৌধুরীর নিরপরাধ প্রমাণে থানার সামনে সহ মঙ্গলকোটের বিভিন্ন জায়গায় সভা করতে দেখা গেছে।      রায়নার বামাপদ মন্ডল, কাটোয়ার পুর কাউন্সিলর জঙ্গল সেখ সহ মন্তেশ্বর পূর্বস্থলীর অনেক আদি তৃনমূল নেতাদের দলবদলে গেরুয়া শিবিরে দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদিও জেলা তৃনমূল নেতৃত্ব এদের দলবদলে চিন্তিত নয় বলে দাবি করেছে। তবে গোলাম জার্জিস, রুবি ধীবর, অশোক মালাকার, শিবু সিং, চন্দ্রনাথ মুখার্জি, যারা ইতিমধ্যে তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। কিংবা চঞ্চল গড়াই, বামাপদ মন্ডল, জঙ্গল সেখ প্রমুখরা বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছে।এইবিধ একদা তৃনমূলের আদি নেতারা দলে দলে গেরুয়া শিবিরে যাওয়াতে তৃনমূলের ক্ষতি হচ্ছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা রাজনীতিবিদরা। বাম জামানায় যাদের উপর ভর করে জেলায় সাফল্য পেয়েছিল তৃনমূল, তাদের প্রত্যেকেরই স্বক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যাপ্তি রয়েছে।উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়,  রাজ্যে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে তৃনমূলের একক দখলে আসা গুসকারা পুরসভার কান্ডারী চঞ্চল গড়াই বামবিরোধীদের কাজে রোলমডেল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সেসময় বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে অবিভক্ত বর্ধমান সহ বীরভূম জেলার সভাগুলিতে দলনেত্রীর পাশে দেখা যেত। এইরুপ ব্যক্তি দলের অন্দরে কোনঠাসা হয়ে পুলিশি ঝামেলায় পড়ে দলত্যাগ করলে তার রেশ সেই এলাকাগুলিতে কমবেশি পড়বেই। এইরুপ দাবি রাজনীতি মহলে। একদা নড়বড়ে সংগঠন   হিসাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ছিল বিজেপি। সেখানে জেলাপরিষদের বিদায়ী সদস্যদের  , সেইসাথে তৃনমূলের প্রতীকে বিধানসভায় দাড়ানো, ব্লকস্তরের নেতা, শ্রমিক সংগঠনের জেলা নেতাদের পেয়ে উজ্জীবিত পূর্ব বর্ধমানের গেরুয়া শিবির। জানা গেছে এরা প্রত্যেকেই মুকুল রায়ের অনুগামী। সম্প্রতি জাতীয় স্তরে মুকুল রায় পদ পাওয়ায় আর অনেকে এদের মধ্যে একদা পুরপিতা সহ বেশ প্রাত্তন বিধায়ক পুজোর আগেই তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।                                                

মঙ্গলকোটে নিহত সিপিএম নেতা খুনের মামলায় 'খালাস' শাসক শিবিরের স্থানীয় নেতৃত্ব


 মোল্লা জসিমউদ্দিন   ,

কাটোয়া মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ( ফাস্ট ট্রাক)   সন্দীপ চৌধুরীর এজলাসে ফাল্গুনী খুনের মামলায় তৃনমূলের ২১ জন নেতা কর্মী বেকসুর খালাস রায়দান পেলো। উপযুক্ত প্রমাণ এবং সাক্ষীরা বিরুপ হওয়াতে এই রায়দান বলে আদালত সুত্রে প্রকাশ। গত শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ এই রায় ঘোষণা করেন বিচারক। ২০০৯ সালে ১৫ জুন মঙ্গলকোটের ধান্যরুখি গ্রামের রাস্তায় দুস্কৃতিদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৎকালীন জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ও সেইসাথে জেলা সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জি। এই খুনে তৃনমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চৌধুরী সহ ব্লক এবং অঞ্চলস্তরের নেতারা অভিযুক্ত হন। এই খুন কে কেন্দ্র করে মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম, মাঝীগ্রাম অঞ্চলগুলি সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী   হাতে রণক্ষেত্র হয়ে উঠে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, মদন মিত্র এমনকি তৃনমূল নেত্রী     মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায়  এসেছিলেন ফাল্গুনী খুন পরবর্তী অগ্নিগর্ভ মঙ্গলকোটে।  এমনকি সেইবছর ১৫ জুলাই কংগ্রেসের বিধায়ক দল এসে আক্রান্ত হয়। ধুতি পড়া মানস ভুইয়ার সেই জমির আল ধরে বিখ্যাত 'দৌড়' মঙ্গলকোট কে আলাদা পরিচিতি দিয়েছিল। ২০০৯ এর লোকসভা কিংবা ২০১৩ এর বিধানসভা নির্বাচনেও নিহত সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জির গ্রামে বামেরা অপারেজয় থেকেছে। অতীতে বসন্ত দত্ত, হরপ্রসাদ গোস্বামী, গোপেশ্বর পাল,  শিশির চ্যাটার্জির মত সিপিএম নেতা খুনের মামলার মত ফাল্গুনী খুনের মামলাতেও উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ এবং সাক্ষীদের বিরুপ বয়ানে অভিযুক্তেরা বেকসুর খালাস হল।                                

শুক্রবার, আগস্ট ১৭, ২০১৮

কাটোয়া বর্ধমান বড়রেলে ট্রেন চলে মাত্র ১ টি, যাত্রী ক্ষোভ তুঙ্গে


 মোল্লা জসিমউদ্দিন,

গত ১২ জানুয়ারি কাটোয়া থেকে বর্ধমানগামী বড়রেলে ট্রেন চালুতে যে চরম উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল চারটি জেলার একাংশ এলাকাজুড়ে। তা সময়ের ব্যবধানে যাত্রী ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। কাটোয়া থেকে বর্ধমান ৫২ কিমি রেলপথে ট্রেন চলছে মাত্র ১ টি, তাও অবেলায়। গত রবিবার কাটোয়া স্টেশন চত্বরে এই রেললাইন সহ আরেক নুতন বড়রেল আহমেদপুর কাটোয়ার নিত্যযাত্রীদের এক সংগঠন প্রতিবাদসভার আয়োজন করে থাকে। এবং সেইসাথে কাটোয়া স্টেশনমাস্টার কে ৬ জোড়া ট্রেন উভয় লাইনে চালুর দাবিতে স্মারকলিপিও দেয়। বৃটিশ আমলে গড়া কাটোয়া থেকে বর্ধমান এবং কাটোয়া থেকে আহমেদপুর   ন্যারোগেজ রেলপথ চলতি বছরে বডগেজে রুপান্তরিত হয়েছে। যদিও ২০১২ সালে কাটোয়া থেকে বর্ধমান রেলপথের   অর্ধেকটা   অর্থাৎ বলগনা থেকে বর্ধমান বড়রেলে পাঁচজোড়া ট্রেন যাতায়াত শুরু করেছে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কাটোয়া শহর সংলগ্ন শ্রীখণ্ড থেকে বর্ধমান ট্রেন চালু হয়েছিল। তবে একটিই ট্রেন সম্বল এই রেলরুটের। চলতি বছরে ১২ জানুয়ারী কাটোয়ায় বিকেল চারটেয় সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি শুরু হয়,  বর্ধমান স্টেশন পৌছায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। উল্লেখ্য এই ট্রেনটি আবার বর্ধমানে দুপুর দুটোয় ছেড়ে সাড়ে তিনটেয় পৌছায় কাটোয়ায়, বিকেল চারটেতে বর্ধমান যাবার    জন্য।    পড়ন্ত বেলায় এই অসময়ে  যাত্রীসংখ্যা হাতেগোনা। অনুরুপভাবে চলতি বছরে ২৪ মে   বীরভূমের আহমেদপুর থেকে ৫৮ কিমি রেলপথে কাটোয়াগামী বড়ট্রেন চালু হয়। সেই ট্রেন সংখ্যা মাত্র ১ টি রেখে। এই দুই শতাব্দীপ্রাচীন রেলপথ ঘিরে স্বপ্ন ছিল অনেক।নানান বিখ্যাত লোকেদের স্মৃতি  রয়েছে এই দুটি রেলপথ ঘিরে। সেই 'হাটেবাজারে'র তারাশঙ্করের কথা হোক, কিংবা পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের স্মৃতি হোক। যেদিন শেষ ন্যারোগেজ ট্রেন চলেছিল এই দুটি রেলপথে। সেদিনগুলি ট্রেনের মধ্যে -  ছাদে যাত্রীময় হয়ে উঠেছিল। রাজ্য বিচারবিভাগের রেজিস্টার ( ম্যারেজ)  মৃদূল হালদার তৎকালীন কাটোয়া  মহকুমাশাসক থাকার সময় নস্টালজিক হয়ে সেই ছোট ট্রেনে চেপেছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। রাস্তার দুধারে বিপুল জনসমাগম ঘটেছিল আবেগ কে পুজি রেখে। ঠিক এহেন রেলপথে বড় ট্রেন যাতায়াত করছে মাত্র ১ টি, তাও বিকেল বেলায়। শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া কিংবা সদর বর্ধমান মহকুমা এলাকা নয়। সীমান্তবর্তী নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের একাংশ এলাকার মানুষজন এই রেলপথে যাত্রী সুবিধা নিয়ে বিস্তর স্বপ্ন দেখেছে। কাটোয়া থেকে বর্ধমান    বাসে সময় লাগে তিনঘন্টার বেশি, আবার ভাড়াটা পঞ্চাশ টাকার মত। সেইজায়গায় ট্রেনে সময় দেড়ঘন্টা, ভাড়াটাও কম। তাই মাত্র ১ টি ট্রেন যাতায়াতে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে যাত্রীমহলে। অনুরুপ ক্ষোভ আহমেদপুর কাটোয়া রেলরুটেও, এখানেও সেই ট্রেনের সংখ্যা মাত্র ১ টি। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে গত রবিবার এই দুটি রেলরুটের নিত্যযাত্রীরা কাটোয়া রেলস্টেশন চত্বরে সভা করে স্টেশনমাস্টার ছয়জোড়া ট্রেনের দাবিতে স্মারকলিপি দেন। ৭ নং প্লাটফর্মে টিকিট কাউন্টার দাবিটিও রয়েছে সেখানে। কেননা এই দুটি রেলপথের যাত্রীদের টিকিট কাটতে গেলে স্টেশনের ওভারব্রিজ দিয়ে যেতে হয়। প্রায়শ বিনা টিকিটের যাত্রী বলে আর্থিক জরিমানা সহ হয়রানির শিকার হতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বারবার কাটোয়ার বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী কে লিখিতভাবে পাঠিয়েছেন। গত ৩ এপ্রিল অবশ্য কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল এই বিধায়ক কে অবগত করেছেন যে, বিষয়টি রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সিরিয়াস ভাবে দেখছে। এই আশ্বাসের মাঝেই শ্যামল মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ পাল, পুলকেশ ভট্টাচার্য, কবিরুল ইসলামদের মত যাত্রীদের প্রশ্ন, সাতমাস পেরিয়ে গিয়েও যদি ট্রেন সংখ্যা না বাড়ে, সেখানে রেলের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। এই রেলপথ দ্রুত চালু না যাতে না হয়, সেই ব্যাপারে নানামহল সক্রিয় ছিল বলে যাত্রীদের একাংশের দাবি। বাসমালিকদের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। এই রেলপথ পুরোদমে চালু হলে উপকৃত হবে বিভিন্ন শিল্পকাজ। কাটোয়া বর্ধমান রেলরুটের মধ্যে পড়ছে মঙ্গলকোটের বাজার বনকাপাসি। এখানকার শোলা শিল্প বিশ্বখ্যাত। বেশ কয়েকজন রাস্ট্রপ্রতি পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পুজোর কাজে ব্যবহৃত শোলার নানান নিপুণকাজ। তাই এই রেলরুটে ট্রেন বাড়লে উপকার পাবে মঙ্গলকোটের শোলাশিল্পীরাও।                                                                    

শুক্রবার, আগস্ট ১০, ২০১৮

মঙ্গলকোট নিয়ে শেষ দেখে ছাড়বেন স্থানীয় বিধায়ক

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পেশ পর্বে দু-দুবার  নিজ অনুগামীদের শতচেস্টা করেও দলীয় প্রতীক দিতে পারেননি। প্রতীক কো দূর অস্ত, ব্লক কিংবা মহকুমা অফিসে মন্ত্রীর অনুগামীরা মনোনয়নের ফর্ম তুলতে ঢুকতে পারেনি। ভাইপোর মাথা ফেটেছে,  গত বিধানসভা নির্বাচনের নির্বাচনী এজেন্ট তথা বিদায়ী জেলাপরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী ডালিম সেখ খুনের মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।  এমনকি মঙ্গলকোটের পদিমপুর বাইপাসে সেখ হায়দার আলীর বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে ভাড়া করা অফিস ঘর বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও হাল ছাড়েন নি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। দশের কাছাকাছি বিশস্ত অনুগামী গাঁজার মামলায় জেলবন্দি,  পঞ্চাশের বেশি অনুগামী ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। আবার অনেকেই গ্রামছাড়া। শাসকদলের ব্লক নেতাদের কাছে একদা ঘনিষ্ঠ অনুগামী দেবু ধারা, হারাধন মুখার্জি, জামাত আলী প্রমুখ আত্মসমর্পণ করেছে। এর মাঝেও মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক মাটি ছাড়েননি সিদ্দিকুল্লাহ। মনোনয়নপর্বের দ্বিতীয় পর্বে জেলাপুলিশের চরম অসহযোগিতায় মঙ্গলকোটে এসেও ফিরে গেছেন কলকাতায়। সময় গেছে,  তবুও নীরবে নিজস্ব সংগঠন জমিয়ত উলেমা হিন্দ কে আন্দ্রোলনমুখি করে তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সমীহ আদায় করে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি আসাম ইস্যু নিয়ে কলকাতার মহাজাতি সদনে প্রতিবাদ সভা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাই কে। পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী মঙ্গলকোটে স্বাস্থ্য বিষয়ক সভায় দর্শন মিলেছিল তাঁর। আবার ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালনে নুতনহাট মিলন পাঠাগারে মুখ্য অতিথি হিসাবে আসছেন এলাকার বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ।                                              

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ০৯, ২০১৮

গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোর ফল, 'শোলে'র গব্বার সিং হতে হল মঙ্গলকোটের সাংবাদিক কে

জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জী

এখনও গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানো দুদিন পার হয়নি। এরেই মাঝে গুলি করে খুন করবার হুমকি পেলেন মঙ্গলকোটের সাংবাদিক সুকান্ত ঘোষ। তাও 'শোলে' সিনেমার বিরুর চরিত্রে অমিতাভ বচ্চনের মুখে অডিও জালিয়াতি করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল দশটা দশে তার মোবাইলে এই ভিডিওটি গুসকারার এক দলীয় নেতা তাকে সংগৃহীত এই ভিডিওটি পাঠায়।সে আবার স্থানীয় এক আলু ব্যবসায়ীর কাছে অন্যের কাছ থেকে পেয়েছি। তাহলে দেখা যাচ্ছে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সাথে সাথেই এই হুমকি টি মিলেছে।যদিও এই সাংবাদিক তার প্রকাশিত 'কৃষি সমবায় পত্রিকা'য় আসানসোলে কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে, কখনও গুসকারায় বাম আমলের পুরচেয়ারম্যান নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন। এমনকি হাইকোর্টে রিট পিটিশন,  নিম্নকোর্টে  দুটি ফৌজদারি মামলার শিকার হয়েছিলেন সিপিএম নেতাদের সৌজন্যে। সুকান্ত ঘোষ জানান - বর্ধমান সদরে সাইবার সেলে যাব অভিযোগটি অবগত করার জন্য।                   

মঙ্গলবার, আগস্ট ০৭, ২০১৮

গ্রামীন সাংবাদিকদের প্রতি রাজ্যসরকারের অবহেলার প্রতিবাদে বিজেপিতে মঙ্গলকোটের পত্রিকা সম্পাদক

জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জী

মঙ্গলকোট তথা পূর্ব বর্ধমানের জনপ্রিয় পাক্ষিক পত্রিকা 'কৃষি সমবায় পত্রিকা'র সম্পাদক সুকান্ত ঘোষ মঙ্গলবার সরাসরি রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করলেন।এদিন তিনি মঙ্গলকোটের পশ্চিম এলাকার বিজেপি সভাপতি সমীর দাসের হাত ধরে  গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন।সুকান্ত ঘোষ জানান - "রাজ্যে পালাবদলের পরেই কিছু মুস্টিমেয় বড় কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়া মফস্বলের পত্রিকার বিকাশের জন্য কিছুই করেনি তৃনমূল সরকার।  সাপ্তাহিক /পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদকরা সরকারের সহযোগিতা না পেয়ে কাগজ বন্ধ করে দিচ্ছে।অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারাও গেছে।কোচবিহারের একজন সাংবাদিক এইরুপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। তাই  গ্রামীন সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরাসরি রাজনীতিতে এলাম "।  জানা গেছে গোতিস্টা অঞ্চলের বিশেষ দায়িত্বে এই পত্রিকার সম্পাদক কে রাখা হয়েছে।                  

OLD POSTED

আরামবাগ টিভির তিন সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিস্তারিত রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের

মোল্লা জসিমউদ্দিন   সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সেখ সফিকূল ইসলাম প্রত্যেকেই নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে পুলিশের অতি সক্রিয়তার শি...

KATWA SUB-DIVISONAL PRESS CORNER