মোল্লা জসিমউদ্দিন,
লোকসভা নির্বাচনের দামামা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। এবার বাংলার দিকে 'পাখির চোখ' করে রেখেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।অপরদিকে তৃনমূল শুধু এই রাজ্যে ৪২ এর ৪২ করা শুধু নয়, অন্য রাজ্য থেকেও আসন জিতে কেন্দ্রের নির্ণায়ক দল হিসাবে প্রতিস্টা পেতে অত্যন্ত তৎপর। কেন্দ্রের শাসকদল এবং রাজ্যের শাসকদলের ভোট অঙ্কে বাংলার ত্রিশভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে সবাই ভীষন আগ্রহী। কেননা বাংলার রাজনীতিতে লোকসভার বেশিরভাগ আসনে জেতা - হারার হিসেব পাল্টে দেয় এই সংখ্যালঘু মানুষজন। তাই কট্টর হিন্দুত্বে বিশ্বাসী বিজেপি কে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু দরদি হতে দেখা যাচ্ছে। বিদ্রোহী কবি কাঁজি নজরুল ইসলাম কে অন্য মোড়কে ব্যবহার করতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিজেপির মধ্যে। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের বিজেপির আহবায়ক মুকুল রায় ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের নেতা সহ পীরসাহেব - আলেম - উলেমাদের সাথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন বলে প্রকাশ । আর এতেই রাতের ঘুম ছুটেছে শীর্ষ তৃনমূল নেতাদের। যদিও তারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বিগত বাম জমানায় মাদ্রাসা সহ ওয়াকফ জনিত আন্দ্রোলন গুলিতে তৃনমূলের একদা সেনাপতি মুকুল রায় কে দেখা যেত ম্যানেজ করতে । ফুরফুরা শরীফ সহ বিভিন্ন জায়গায় অন্দরমহলে তাঁর অবাধ যাতায়াত। এই মুহূর্তে তৃনমূলের যারা সংখ্যালঘু নেতা রয়েছেন, তাদের মধ্যে একমাত্র সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ছাড়া কারও সারারাজ্য ব্যাপি বিস্তার নেই। রেজ্জাক মোল্লা - আবু আয়েষ মন্ডলদের মত যারা বাম প্রন্থী ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরের নাম লিখিয়েছেন, তাদেরও মুসলিম সমাজে প্রভাব নেই বললেই চলে। জমিয়ত উলেমা হিন্দের এই রাজ্যের সর্বাধিনায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে নিয়ে সমস্যা রয়েছে তৃনমূলের অন্দরে। যেভাবে শীর্ষ তৃনমূলের অলিখিত নির্দেশে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে পুলিশি সন্ত্রাসে 'রাজনৈতিক সন্ন্যাসী' হয়েছেন সিদ্দিকুল্লাহ। তাতে তৃনমূল আসন্ন লোকসভায় এই সংখ্যালঘু নেতা কে কতটা আন্তরিকভাবে পাশে ভাবে তাতে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষত মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া ১ নং অঞ্চল সভাপতি ডালিম সেখ খুনে মূল অভিযুক্ত হিসাবে সিদ্দিকুল্লাহের ভাই রহমতুল্লা চৌধুরী রয়েছে। সিআইডি তদন্তে গত দেড় বছর ধরে 'আন্ডারগ্রাউন্ড' মন্ত্রীর ভাই। সুতোর পুতুলের মত গত পঞ্চায়েত ভোটে এই মামলার জেরে কার্যত হাত গুটিয়ে থাকতে হয়েছে একদা সিঙুর - নন্দীগ্রাম - মাখড়ার লড়াকু সিদ্দিকুল্লাহ কে। ঘনিষ্টমহলে সিদ্দিকুল্লাহ নাকি জানিয়েছেন - " ২০১৬ সালেব বিধানসভা নির্বাচনে নবান্নে চা বিস্কুট খেয়ে মাত্র ২ টি আসনে যে সমঝোতা করেছিলেন, তা ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে সেই ভূল করবেন না। অন্তত ৩ থেকে ৪ টি আসন চাইবেন দিদির কাছে "। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বেশ কিছু মুসলিম সংগঠন একাধারে কেন্দ্রের শাসকদলের সংখ্যালঘুপ্রীতি এবং অন্যাধারে রাজ্যের শাসকদলের অন্দরে মুসলিমদের গুরত্ব অনুধাবন করে পথে নেমেছে। সম্প্রতি রাজ্যসরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়নে ভাঁওতাবাজি অভিযোগ তুলে কলকাতার রাজপথে হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষদের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে দেখা যায়। তারা দাবি তোলে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৪ টি আসনে মুসলিম ব্যক্তিদের দাঁড় করাতে হবে। একতৃতীয়াংশের এই অংক টা এসেছে সেই ত্রিশভাগ মুসলিম জনসংখ্যার অধ্যায় থেকে। তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই আসনরফা নিয়ে উচ্চবাচ্য না করলেও, ইতিমধ্যেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে বেশি বেশি যোগ্য ব্যক্তিদের দাঁড় করাতে চায় ঘোষণা করেছে। আর এতেই বঙ্গ রাজনীতিতে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের কর্মকর্তারা বিজেপির অন্য নেতাদের সাথে যোগাযোগ না করলেও মুকুল রায়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। আসলে মুসলিমদের একাংশে বিজেপির অন্য নেতাদের থেকে মুকুল রায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি। পদ্মফুল আর জোড়াফুলের দড়ি টানাটানির মধ্যে বেশকিছু মুসলিম সংগঠন তৃনমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে আবার পরেরদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ' বিজেপি কে একটি ভোটও নয়' বার্তা দিতেও দেখা যাচ্ছে। তবে যাদের নিয়ে এক ব্লাকমেল রাজনীতি করে লোকসভা নির্বাচনের দাড়াবার স্বপ্ন দেখছেন সংখ্যালঘু নেতারা। সেইসব সাধারণ মুসলিম মানুষদের অনেকেই জানাচ্ছেন - "কারা কতটা উন্নয়ন করেছে, তা আমরা জানি। কাকে ভোট দিতে হবে, সেটা কোন কোন সংখ্যালঘু নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নয়। "