মোল্লা জসিমউদ্দিন
গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ পঞ্চায়েত মামলায় রায়দানে জানিয়েছে - মনোনয়ন পেশে একদিনের অতিরিক্ত সময়সীমা দিতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কে।সেইমত দ্রুত ভোট প্রক্রিয়া করতে গেলে কমিশন কে নিদিষ্ট তারিখ জানিয়ে মনোনয়ন পেশ করাতে হবে।আজ অর্থাৎ সোমবার বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৩ টে অবধি ব্লক অফিসে চলবে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন এবং মহকুমাশাসক অফিসে হবে জেলাপরিষদের আসনের জন্য মনোনয়ন ।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর নির্দেশে মঙ্গলকোটে বিধায়ক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ৩৪ জন প্রতিনিধি পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রতীক পাবেন।সেক্ষেত্রে এই মনোনয়ন পদপ্রার্থীরা ব্লক কিংবা মহকুমাশাসক অফিসে গিয়ে মনোনয়ন আদৌও তুলতে পারবেনা কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।গত ২ এপ্রিল মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে মনোনয়নের ফর্ম তুলতে গেলে পুলিশ এবং একাংশ দলীয় নেতাদের বাহিনীর দাপটে পিছপা হন তারা।এরপরে ৯ এপ্রিল কাটোয়া মহকুমাশাসক অফিসে গেলে বিধায়ক অনুগামীদের পুলিশের একাংশ লাঠিচার্জ করে, সেইসাথে দশের বেশি বিধায়ক অনুগামীদের আটক করে থাকে।এই ঘটনায় মাথা ফাটে বিধায়কের এক ভাইপোর।সর্বোপরি বিধায়ক অনুগামী হিসাবে পরিচিত মনোনয়ন তুলবে এইরুপ ব্যক্তিদের বাড়ী ঘিরে রাখার পাশাপাশি প্রায় বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ করে দেয় সশস্ত্র বাহিনী। এমনকি রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ সাহেব গত ৮ এপ্রিল নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে বিধায়ক অফিসে এলে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হয়।এরপরের দিনই এইবিধ ঘটনার প্রতিবাদে সরকারী নিরাপত্তারক্ষী, গাড়ী ছেড়ে দেন।সরকারী বাসভবন (রাজভবন), মন্ত্রী দপ্তর যাওয়া বন্ধ করে দেন।এমনকি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে গড়হাজির থেকে দলীয় ক্ষোভের বার্তা দেন শীর্ষ নেতাদের কে।মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি সিদ্দিকুল্লাহ সাহেবের ক্ষোভ নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী কে দায়িত্ব দেন।দুই মন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর জানিয়ে দেওয়া হয় যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে ৩৪ টি আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে এবং ওইসব আসনে যারা ইতিমধ্যে দলের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তারা তা প্রত্যাহার করে নিবেন। এহেন সিদ্ধান্ত তৃনমূলের সর্বোচ্চস্তর থেকে নেওয়া হলেও, মনোনয়ন পেশের দিন বিধায়কের ৩৪ জন প্রতিনিধি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।যেভাবে গত ২ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত তারা পুলিশ এবং দলেরই একাংশদের দ্বারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, তাতে আদৌও শান্তিপূর্ণ মনোনয়ন দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে মঙ্গলকোটের বুকে।যদিও মঙ্গলকোট বিধায়ক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মনোনয়ন পেশের থেকে মঙ্গলকোটে আসবেন বলে জানা গেছে।পনেরো টি গ্রাম পঞ্চায়েত, একটি পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদের তিনটি আসন সর্বমোট দুশোর কাছাকাছি আসনসংখ্যার মধ্যে বিধায়কের কপালে জুটেছে মাত্র চৌত্রিশ টি আসন।অর্থাৎ শতকরা পনেরো শতাংশর কিছু বেশি।এতেও চরম আপত্তি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত অনুব্রত মন্ডল অনুগামী ব্লক সভাপতি শিবিরের।গত ১ এপ্রিল বিধায়কের অফিস সহ বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা চলে।যদিও বিধায়কের অফিসের ঘর মালিক হায়দার সেখ অশান্তি এড়াতে বিধায়কের অফিসে তালা মেরে দিয়েছেন। উল্লেখ্য গত দু বছরে মঙ্গলকোট থানার এককিমির মধ্যে থাকা এই অফিসে বারবার সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে।এমনকি মঙ্গলকোট ওসির সরাসরি হামলায় মদত অভিযোগ তুলে কাটোয়া মহকুমাশাসক অফিসে বিধায়ক অনুগামীরা এবং পুলিশসুপার কে জমিয়ত উলেমা হিন্দের জেলা কমিটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।এহেন পেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের অতি ঘনিষ্ঠ মঙ্গলকোট ওসির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।সেখানে মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে আদৌও মনোনয়ন পেশের ফর্ম তুলতে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামীরা পারবেন কিনা, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।গত দুবছরে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তিদের এক কুইন্টালের বেশি গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে বিধায়ক অনুগামীদের যেসব মামলা দিয়েছে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ।তাতে মনোনয়ন পেশ নিয়ে পুলিশি নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।