মোল্লা জসিমউদ্দিন
রাজ্যে ৩৪% শতাংশ আসনে তৃনমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে মনোনয়ন পর্বেই।সমগ্র কাটোয়া মহকুমার ৫ টি ব্লকে বিরোধীশুন্য হয়েছে।৬৩৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৩৪ টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১১ টি জেলাপরিষদ আসনে কোন প্রার্থী খুঁজে পাইনি বিরোধী দলগুলি।অথচ ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে একতৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়েছিল বিরোধী দলগুলি।এমনকি ২০১৬ সালে কাটোয়ার দীর্ঘদিনের বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তৃনমূলের প্রতীকে জয়ী হন মাত্র ৯১১ টি ভোটে! ২০১৫ সালে দাঁইহাট পুরসভা দখল করে সিপিএম বুঝিয়েছিল তারা হারিয়ে যায়নি।পরে অবশ্য সিপিএম কাউন্সিলারদের বড় অংশ দলবদল করায় তৃনমূল এই পুরসভার জবরদখল নেয়।সামগ্রিকভাবে বোঝা যায় কাটোয়া মহকুমার ৫ টি ব্লকে ভোট হলে গতবারের চেয়েও বেশি পঞ্চায়েত হারাতে হত এমনকি একাধিক পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হত শাসকদলের।উল্লেখ্য গতবারে ১৫ এর কাছাকাছি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২ টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৫ টি জেলাপরিষদ আসনে বিরোধীরা ছিল।তাহলে বোঝা যায় ভোট হলে রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঘটত অবিরত। সিপিএম - কংগ্রেসের অলিখিত জোট, বিজেপির হঠাৎ উথান সর্বোপরি শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্ধ এই এলাকায় নিত্যনতুন সংঘাত আনত।বিশেষত মঙ্গলকোটের বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বনাম ব্লক তৃনমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব লড়াই হানাহানির ঘটনা বাড়িয়ে দিত।মনোনয়ন পর্বে বিধায়ক অনুগামী মঙ্গলকোটের নপাড়ায় বসির খানের বাড়ীতে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা ঘটে।৩ টি গবাদিপশু মরে যাওয়ার পাশাপাশি ওই অনুগামীর নাবালক ছেলে অগ্নিদগ্ধ হয়।এই ঘটনার পরেই মনোনয়ন ফর্ম তুলা থেকে অনুগামীদের সরিয়ে নেন বিধায়ক।এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার শাসকদলের দুই গ্রুপের রাজনীতির রেষারেষি যদি এইরকম মনোনয়ন পর্বে হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রচার থেকে ভোটের দিন কতটা রক্তাক্ত হত মঙ্গলকোট।মঙ্গলকোটে সিপিএম গত বিধানসভা নির্বাচনে ১২ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল, তাই তারা প্রার্থী খুঁজে পাইনি।এটা বলা যায় না।ভোটের মনোনয়ন নিয়ে সর্বদল বৈঠক আসার পথে জোনাল সম্পাদক, প্রাত্তন বিধায়ক আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃনমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের হাতে।গোটা ব্লক এমনকি মহকুমাশাসক অফিস ঘিরে রেখেছিল অজয় নদের বালিমাফিয়াদের বাহিনী। পুলিশের ভূমিকা ছিল এর থেকেও বেশি।মনোনয়ন ফর্ম তুলতে না দেওয়া যদি ওয়ান ডে ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তৃনমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা হয়, তাহলে গত একবছরে সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার 'টেস্ট ম্যাচ' তে ম্যান অফ দ্য সিরিজ হবে পুলিশ।যেভাবে কাটোয়া পুরসভার কাউন্সিলার জঙ্গল সেখের পুরো পরিবার, সিপিএম নেতা ডাবলু আনসারি সহ ৩০ এর বেশি সংগঠক কে গাঁজার মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে।সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীশূন্য করার অন্যতম দাবিদার পুলিশ।আদালতে বেশ কয়েকবার এইবিধ মামলায় ভৎসনার শিকার হয় তারা।বিরোধীদের দাবি গাঁজা মামলাগুলি একসাথে রেখে সর্বমোট মজুত গাঁজা পেশ করুক পুলিশ।যদিও পুলিশের তরফে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পুলিশ দিয়ে গাঁজা সহ মিথ্যা মামলা যেমন বিরোধীশুন্য করতে সুবিধা হয়েছে, ঠিক তেমনি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় তৃনমূলের সশস্ত্র বাহিনী তাও অজয় নদের বালি মাফিয়াদের পেশাদার টিম খুবই কাজে দিয়েছে শাসকদল কে।উল্লেখ্য কাটোয়া মহকুমা এলাকার বড় অংশে অজয় নদ ঘিরে বালি মাফিয়াদের কারবার দীর্ঘদিন চলছে।এরা শাসকদলের প্রতিটি ভোটেই নিখরচায় বাহিনী পাঠিয়ে থাকে।এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন কে সামনে রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গত দুবছর ধরে চলতে থাকায় এবার বিরোধীরা এইসব এলাকায় জব্ধ বলে অভিযোগ। তাই ভোট হলে রাজ্যের অন্যান্য একাকার পাশাপাশি কাটোয়া - কেতুগ্রাম - মঙ্গলকোটে হানাহানি বাড়ত।এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়।