মোল্লা জসিমউদ্দিন,
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধানবিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হাওড়া কান্ডে স্বতঃস্ফূর্ত মামলার দ্বিতীয় শুনানি ছিল। তবে প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিত থাকার কারণে এই মামলার শুনানি হয়নি। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার দুপুরে ফের শুনানি হবে বলে হাইকোর্ট সুত্রে প্রকাশ। সোম ও মঙ্গলবার শুনানির কথা থাকলেও প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে তা হয়নি। মঙ্গলবারই ' বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর দ্বিতীয় দফার কর্মবিরতি পর্ব শেষ হয়। তাই তৃতীয় পর্যায়ে সারা রাজ্য জুড়ে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলবে কিনা, সেই বিষয়ে কর্মসমিতির বৈঠক টি হয় সিটি সিভিল কোর্টের ষষ্ঠ তলায় বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর অফিসে। সেখানে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ঘোষণা করে সারা রাজ্যে আদালত গুলিত আগামী ২১ মে অবধি কর্মবিরতি বহাল থাকছে। অর্থাৎ ২৩ শে মে এর আগে এই অচলাবস্থা কাটাবার কোন আশা দেখছেনরা আইনজীবিদের বড় অংশ। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর বর্তমান সদস্য তথা কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী আনসার মন্ডল বলেন - " শুনানিতে অংশগ্রহণ পরবর্তী বৈঠকে আমরা ঘোষণা করবো কর্মবিরতি নিয়ে কি করা যায়? সেই বিষয়ে "। অপরদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে গত সোমবার দুপুরে কলকাতার আলিপুর আদালতে আইনজীবীরা স্মারকলিপি দিতে যান ।ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে হাওড়া জেলা আদালতে আইনজীবীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাস করা পুলিশ আধিকারিকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার বলে আইনজীবীরা দাবি করেছেন । উল্লেখ্য লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা থেকে নুতন সরকার গঠন অবধি দেশের সমস্ত পুলিশ - প্রশাসনের আধিকারিকরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকেন। তাই নির্বাচনী বিধি চালুর মাঝে এই স্বতন্ত্র দপ্তর যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণও করতে পারে।অভিযুক্ত পুলিশ অফিসাররা এখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় রয়েছেন। ভারতীয় সংবিধান ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কে দিয়েছে। তাই আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টের স্বতঃস্ফূর্ত মামলায় যেমন অংশগ্রহণ করেছেন। ঠিক তেমনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান রাজ্যপালের কাছেও দারস্থ হয়েছেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে হাওড়া কান্ডের গুরত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন আইনজীবীরা বলে মনে করছে ওয়াকিবহালমহল।একাধারে কলকাতা হাইকোর্টে হাওড়া কান্ডে স্বতঃস্ফূর্ত মামলাগ্রহণ যেমন সেদিনের অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশনেও আইনজীবীরা লিখিত অভিযোগ জানিয়ে সেই দুশ্চিন্তার কালো মেঘ কে আরও বেশি ঘনীভূত করলো। ইতিমধ্যেই সারারাজ্য জুড়ে আইনজীবীদের কর্মবিরতির সময়সীমা কুড়িদিন পার করেছে। সেখানে বিভিন্ন মহকুমা / জেলা সংশোধনগারে বিচারধীন বন্দি রাখার বিষয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। হাওড়া জেলা সংশোধনাগারে ইতিমধ্যেই ধারণ ক্ষমতার বেশি বিচারধীন বন্দি রয়েছে বলে প্রকাশ । বিভিন্ন আদালতে জামিন প্রক্রিয়া চালু না হলে এই সমস্যা রাজ্যের প্রায় সংশোধনাগারে বড় সমস্যা তৈরি করবে বলে প্রশাসনিক কর্তারা অনুমান করছেন। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল সারারাজ্যে আইনজীবীদের কর্মবিরতির মেয়াদ ২১ মে অবধি বাড়াবার ঘোষণা করেছে।তাহলে সাতাশ দিন রাজ্যস্তরের আদালত গুলিতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলেছে বা চলবে। যা ২০০২ সালে স্ট্যাম্প ফি বিষয়ে আইনজীবীদের রাজ্যস্তরের বাইশ দিনের কর্মবিরতির রেকর্ড কে ভাঙলো। কলকাতা হাইকোর্টে কর্মবিরতির সর্বাধিক মেয়াদ ৭১ দিন থাকলেও রাজ্যস্তরে ২০০২ সালে স্ট্যাম্প ফি নিয়ে ২২ দিনের রেকর্ড টি হয়েছি।। সেই রেকর্ড ভেঙে দিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাসের ঘটনা টি। আগামী ২৩ শে মে লোকসভার ফলাফল ঘোষণার দিন, তাই তৃতীয় পর্যায়ে কর্মবিরতির মেয়াদ ২১ মে অবধি বহাল থাকায় অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাহলে কি নুতন কেন্দ্রীয় সরকার দেখা অবধি চলবে উকিলবাবুদের কর্মবিরতি?