মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
দীপঙ্কর চক্রবর্তী,
বাংলা সংবাদপত্রের জনক গঙ্গাকিশোর ভাট্টাচার্য এর জন্মদিন পালিত হল তাঁরই জন্মভূমিতে। ১৮১৮ সালের ১৫ ই মে বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বঙ্গাল গেজেট প্রকাশ করে সংবাদপত্র জগতে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।রামমোহন রায়,হরচন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় ও উৎসাহে গঙ্গাকিশোর 'বঙ্গাল গেজেট' প্রকাশ করেন।প্রথমে হুগলীর শ্রীরামপুর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশ শুরু হয়।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নিজ গ্রাম হাওড়া- কাটোয়া রেলপথের অগ্রদ্বীপ ষ্টেশনের কাছে বহড়া গ্রামে তিনি ছাপাখানা করেন।গঙ্গাকিশোরের পেশা ছিল শিক্ষকতা আর নেশা ছিল সাংবাদিকতা।গঙ্গাকিশোর শ্রীরামপুর মিশনারি থেকে ছাপার কাজ শিখে নিজ গ্রামে ছাপাখানা বসান।স্থানটি এখন ছাপাখানার ডাঙ্গা নামে খ্যাত।বঙ্গাল গেজেটি বাংলা ভাষায় ছাপা হলেও ইংরাজী ও হিন্দি ভাষাতেও এই কাগজ হত।রামমোহনের সতীদাহ বিরোধী কিছু লেখা এখান থেকে প্রকাশিত হয়।বহড়ায় এসে ছাপা ও বই লেখার কাজ পুরোদমে চালিয়ে যান।দুঃখের বিষয়,পত্রিকাটির কোন সংখ্যা উদ্ধার হয় নি আজও।গঙ্গাকিশোরের লেখা ও প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিকিৎসার্ণব,গীতা দায়ভাগ,দাশরথির পাঁচালী,আগ্রাম,ইংলিশ অ্যান্ড বেঙ্গলি,দায়ভাগ,দ্রব্যগুন,শব্দার্ণব প্রভৃতি।এখান থেকেই বেরিয়েছে অন্যদেরও লেখা, কিছু দেবদেবীর পাঁচালী।গঙ্গাকিশোর ছাপার কাজ,পত্রিকা প্রকাশ,বই প্রকাশ প্রভৃতি তো করতেনই আবার কাঠের ব্লকও তৈরী করতেন নিজে।বই,পত্রিকা বিক্রি করতেন মাথায় করে নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে শহরে।সারা দেশে এজেন্ট রেখে বইয়ের ব্যাবসা তিনিই প্রথম শুরু করেন।বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বইয়ের যাবতীয় কাজকর্মের তিনিই পথিকৃৎ।গঙ্গাকিশোরের জন্ম সম্ভবত ১৭৮২ এ এবং তিনি প্রয়াত হন ১৮৩১ সালে।তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।১৯৭৫ সালের ১৫ ই মে সাংবাদিক দাশরথি তা,দক্ষিণারঞ্জন বসু এবং স্হানীয় মানুষ,কবি,লেখক,সাংবাদিকরা বহড়া গ্রামে গঙ্গাকিশোরের জন্ম দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করেন।আজ তা টিমটিম করে চলছে।এখানে গঙ্গাকিশোরের জন্মভিটায় তার স্মৃতি স্তম্ভ স্হাপন করা হয়েছে।স্হাপিত হয়েছে গঙ্গকিশোরের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়।রয়েছে দুই বিঘা জমির উপরে তার পূজিত শিবমন্দির একটি বড় বটগাছ।বর্ধমান- কাটোয়ায় রয়েছে তার নামে প্রেসকর্নার।গঙ্গাকিশোরের
সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে।স্হানটি নির্জন।সেখানে অসাধুকাজ হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসি।বুধবার সকালে পূর্বস্হলী ২ নং ব্লকের পিলা পঞ্চায়েতের শেষ সীমায় বহড়ার ছাপাডাঙ্গায় গঙ্গাকিশোর স্মৃতিরক্ষা কমিটি ও গঙ্গাকিশোর প্রাথমিক স্কুলের আয়োজনে স্মরণ অনুষ্টান হয়ে গেল মহা উৎসাহের সাথে।আয়োজকদের পক্ষে চন্দন দাস,কাশিনাথ বিশ্বাস,ছবি বাইন,মীতা বিশ্বাস,হীরা সেখ,জয়ন্ত সুত্রধর,দ্বারকা নাথ দাস বলেন এলাকার মানুষের দাবী এখানে গঙ্গাকিশোরের নামে পাঠাগার,গবেশনাগার তৈরী করুক প্রশাসন।গত বছর কালনা মহকুমা শাসকের উদ্যোগে গঙ্গাকিশোরের জমির জরিপের কাজ হয়।পূর্বস্হলী ২ নং ব্লকের বি ডি ওর উদ্যোগে স্হানটি ঘেরা দেওয়া হয় ঢালাই রাস্তাও হয়েছে।শুধু প্রতি বছর এই দিনে স্হানীয় ও বাইরের লেখক,কবি,সাংবাদিকদের এনে সারাদিনের জন্মদিন পালন করলে তার প্রতি যথাযথ সন্মান জানান হবে।পরবর্তি প্রজন্ম নয়ত তাকে একেবারই ভুলে যাবে।উপস্থিত অতিথিরা গঙ্গাকিশোরকে নিয়ে আলোচনা করেন।খুদে ছাত্রছাত্রীরা,গান,আবৃত্তি,নাচ পরিবেশন করে।রাজ্য সরকারের আরও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন জেলার সাংবাদিকরা।