মোল্লা জসিমউদ্দিন,
ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের শাঁসালো থানার আইসি, হলেন উত্তরবঙ্গের কম গুরত্বপূর্ণ আদালতের কোর্ট বাবু। নেপথ্যে কালিপুজোর নামে কোটির কাছাকাছি তোলাবাজি। জেলা পুলিশের ভাবমূর্তি ফেরাতে ফের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল রাজ্য পুলিশ প্রশাসন কে। দুদিন পূর্বে পূর্বস্থলী থানার এক এএসআই কবিরুদ্দিন খান কে সাময়িক বরখাস্ত করার পর , ওই থানার আইসি সোমনাথ দাস কে শাস্তিমূলক বদলী করা হল। পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের কালিম্পং মহকুমা আদালতে জিআরও ( কোর্ট ইনস্পেক্টর) পদে বদলী করা হয়েছে এই পুলিশ আধিকারিক কে । পুলিশের অপেক্ষাকৃত কম গুরত্বপূর্ণ পদ এটি।গত ২ নভেম্বর পূর্বস্থলীর এক সংখ্যালঘু যুবক থানার জোরপূর্বক চাঁদা তোলার অভিযোগ আইজি পার্সোনাল, ডিজি, হোম সেক্রেটারী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে তথ্য প্রমাণ সহ পাঠিয়ে ছিলেন। এহেন পুলিশ আধিকারিকদের নামে স্পর্শকাতর অভিযোগ আসায় নড়েচড়ে বসে রাজ্যের সদর প্রশাসনিক দপ্তর। নবান্নের নির্দেশে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশসুপার ভাস্কর মুখার্জী নিজে তদন্তে নামেন। আইসি লেভেলের পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে গুরতর অভিযোগ উঠায় বিশেষ টিম নামানো হয় এক্ষেত্রে । প্রাথমিকভাবে তদন্তে উঠে আসে, শুধু ওই সংখ্যালঘু যুবক নয়, এলাকার ৯০ জন রেশন ডিলার, ৪২ টি ইটভাটা, ৭০০ টি লরির মালিক, ৬৫০ টি ট্রাক্টর মালিক, পেট্রলপাম্প মালিক সর্বপরি নরকঙ্গাল - গাঁজা - অস্ত্র কারবারীদের কাছ থেকে গড়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার কূপন ছাপিয়ে তোলা তুলা হয়। রাজ্যপুলিশের সেফ ড্রাইভ লোগো সাঁটা ক্রমিকসংখ্যাহীন বিলবই তে থানার এক এএসআই এর নামে তোলাবাজিতে চলছিল। চাঁদা দিতে অস্বীকার করা ব্যক্তিদের গাঁজার মামলা দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন চলছিল। উল্লেখ অস্ত্র সহ অন্যান্য মামলায় ফাসানো হলে তিনমাসের মধ্যে জামিন মেলে। তবে গাঁজা পাচারের মত মাদক মামলায় কমপক্ষে দুবছর জেলখানায় বিচারধীন বন্দি থাকতে হয়। তাই পূর্বস্থলী থানার গাঁজা পাচারের মামলার ব্লাকমেলে তটস্থ ছিল এলাকার ব্যবসায়ীরা। পুজোর চাঁদার নামে তোলা আদায়ের অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন পূর্বস্থলী থানার এক সাব ইনস্পেকটর কালনা মহকুমার এক অনুগামী আইনজীবী সাথে নিয়ে অভিযোগকারীর বাড়ি যায় বলে এলাকা সুত্রে প্রকাশ। সেখানে আইনসিদ্ধভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করা নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তাই নয় পূর্বস্থলী পঞ্চায়েত সমিতির এক পদাধিকারী অভিযোগকারীর মোবাইলে 'অভিযোগ না তুললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন '। বহিরাগত সশস্ত্র বাহিনীর রুটমার্চ শুরু হয়ে যায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো যুবকের পাড়ায়। প্রাণহানির আশংকায় অতিরিক্ত জেলা পুলিশসুপার ( গ্রামীন) রাজ নারায়ণ মুখার্জী কে অভিযোগকারী পুরো বিষয়টি জানান। এরপরেই দুদিন আগে বিলবই তে সাক্ষর করা ওই থানার এএসআই তথা ডাকমাস্টার কবিরুদ্দিন খান কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আজ পূর্বস্থলী থানার আইসি সোমনাথ দাস কে অপেক্ষাকৃত কম গুরত্বপূর্ণ পদে কালিম্পং মহকুমা আদালতে জিআরও পদে শাস্তিমূলক বদলী করা হল। তবে বিরোধীদের দাবি এটা পুলিশের 'আই-ওয়াস' ছাড়া কিছুই নয়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ওসি/আইসি স্তরের পুলিশ আধিকারিকদের বদলী করবে। তাই পূর্বস্থলীর আইসি কে দেড়মাস পূর্বে একটু তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল উত্তরবঙ্গে।একাধারে জনমানসে ভাবমূর্তি উজ্বল করার চেস্টা করা হল, অপরদিকে নামমাত্র শাস্তি দিয়ে গুরতর অভিযোগ থেকে আইসমুক্ত করার প্রয়াস চালানো হল বলে মনে করছে অনেকেই।