জাহাঙ্গীর বাদশা
নব নির্বিত পাঁচশো বছরের প্রাচীন কাঁথি–৩ ব্লকের বাহিরী জগন্নাথ মন্দির ও দেব দেউলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী, জেলা শাসক ডাঃ রেশ্মি কোমল প্রমুখ। পূর্ত দফতরের সহযোগিতায় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংস্কার হওয়া বাহিরী জগন্নাথ মন্দির ও দেব দেউল নবরুপের উদ্বোধন হলো। উদ্বোধন করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী, জেলাশাসক ডাঃ রেশ্মী কোমল প্রমুখ। জেলাশাসক ডাঃ রেশ্মী কোমল জানান, বাহিরীর জগন্নাথ মন্দির ও দেব দেউল ইতিমধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে।পূর্ত দফতরের দক্ষিণ-পশ্চিম চক্রের মুখ্য বাস্তুকারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার দফতরের সুপারিশে ৭৩ লক্ষ ৬৪হাজার টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে কাঁথি-৩ ব্লকের প্রাচীন জনপদ বাহিরীর পাঁচশো বছরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির ও দেউলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি নষ্ট হচ্ছিল। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষণ ও মন্দির সংস্কারের জন্য বাহিরী জগন্নাথ সেবায়েত সমিতি ও স্থানীয় এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন জানানো হয়। ২০১১ সালে রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার দফতরের পক্ষ থেকে জগন্নাথ মন্দিরটি পরিদর্শনের পর মন্দিরটির সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করে। তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকার রাজ্যের পূর্ত দফতরকে মন্দিরটি সংস্কার করার জন্যে দায়িত্ব দেয়। পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই জগন্নাথ মন্দির ও দেউলকে ঘিরে নানা লোককথাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। ইতিহাসবিদ ও বাহিরী জগন্নাথ দেউলের মধ্যে পাওয়া শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮৪ সালে পদ্মনাভ দাসের ছেলে বিভীষণ দাস এই জগন্নাথ দেউল তৈরি করেন। সেখানে স্থাপন করা হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ। ইতিহাসবিদদের মতে, রসিকমঙ্গল কাব্যে উল্লেখিত হিজলি মণ্ডলের বিভীষণ মহাপাত্রই শিলালিপিতে লেখা বিভীষণ দাস মহাপাত্র। ইতিহাসবিদদের মতে কুষাণ, গুপ্ত ও পাল বংশের রাজত্বকালে শিল্পসৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল বাহিরী। এখান থেকেই পাওয়া প্রাচীন একটি পাথরের মূর্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় রক্ষিত রয়েছে।বাহিরী জগন্নাথ সেবায়েত সমিতির সদস্য রাজদুলাল নন্দ জানান, বাহিরী গ্রামে জগন্নাথ দেবের মন্দিরও দেউলে কোন বিগ্রহ নেই। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মন্দিরটির দুটি ভাগ রয়েছে। একটি মূল দেউল ও অন্যটি জগমোহন। দুটি ভাগের মধ্যে যাতায়াতের জন্য একটি ছোট ঘরও রয়েছে। ইঁটের তৈরি মূল দেউলটি প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ও চওড়ায় প্রায় ২৪ ফুট। জগমোহন এর উচ্চতা ৪০ ফুট ও চওড়ায় ১৭ফুট। দিঘা-কলকাতা সড়কের ধারে মারিশদা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে বিস্মৃত জনপদ বাহিরী। প্রাচীন একটি তেঁতুলগাছ যা এলাকায় ‘জাহাজবাঁধা তেঁতুল গাছ’ নামে পরিচিত, তা একসময়ের নদীপথের স্মৃতি বহন করে আসছে। স্থানীয় মানুষদের উদ্যোগে বাহিরী গ্রামে বিভিন্ন সময়ে মাটি খুড়ে পাওয়া নানা মূর্তি, মাটির পাত্র, পোড়া মাটির খেলনা, হাতি সংরক্ষণের জন্য একটি সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেটিও অযত্ন আর অবহেলা টিঁকে রয়েছে মাত্র।