মোল্লা জসিমউদ্দিন
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে সারাবাংলায় যখন শাসকদলের বিধায়করা নিজ নিজ কেন্দ্রে সময় বেশি দিয়ে গেছেন। আবার মন্ত্রী হলে তো নিজ জেলা তো বটেই আশেপাশে জেলায় নির্বাচনী প্রচারে দেখা গেছে অন্যদের কে ।সেখানে মঙ্গলকোট বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী রাজ্যের মন্ত্রী হয়েও তৃনমূলের কোন নির্বাচনের প্রচারে মঞ্চে স্থান পাইনি।এমনকি গত দেড়মাসের বেশি সময়কালে মঙ্গলকোটে ঢুকতে পারেননি।এমন পরিস্থিতি যে, আগামী কয়েকমাস যে মঙ্গলকোট যেতে পারবেন না।তা বিশস্ত অনুগামীদের আগাম বলে রেখেছেন সিদ্দিকুল্লাহ।মঙ্গলকোটে গত ৮ এপ্রিল সর্বশেষ দেখা গেছে।তারপর থেকেই বেপাত্তা তিনি।মুখ্যমন্ত্রী নাকি জানিয়েছেন বিধায়ক কে - পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন পর্ব মিটলেই সুবিচার তিনি দেবেন।ভবিষ্যতে কি হবে, সেটা পরের বিষয়।এখন মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকায় বাৎসরিক ৬০ লক্ষ বিধায়ক তহবিলের উন্নয়নকাজ পুরোপুরি বন্ধ বলা যায়।গত দুবছরের নিরিখে ২০১৬-১৭ বর্ষে বিধায়ক তহবিল খরচ হয়েছে, চলতি আর্থিকবর্ষে কোন কাজ হয়নি।উল্টে অনুদান ফিরে যাচ্ছে।যেখানে চারিদিকে এত 'উন্নয়ন', সেখানে মঙ্গলকোটের বিধায়ক তহবিলের উন্নয়ন স্তব্ধ গোষ্ঠীবিবাদের রাজনীতির বেড়াজালে।স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন সারা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলায় জেলায়।সেখানে মঙ্গলকোটের উন্নয়নকাজ একপ্রকার বন্ধ বলা যায়।শুধু সিদ্দিকুল্লাহের বিধায়ক তহবিল নয়, অনুপম হাজরার সাংসদ তহবিলেরও ২০১৪ সালের পর থেকে সেভাবে কাজ হয়নি।অনুব্রত মন্ডল বিরোধী শিবিরের মধ্যে পড়েন বিধায়ক ও সাংসদ। একটি ব্লকে যেমন কেন্দ্রসরকার ও রাজ্যসরকারের অনুদান আসে উন্নয়নকাজে, ঠিক তেমনি স্থানীয় বিধায়ক - সাংসদদের নিজস্ব উন্নয়ন তহবিলের অনুদান সামগ্রিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দিক।মঙ্গলকোটের রাজনীতি বলয়ে এই বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডলের সাথে সাংসদ অনুপম হাজরা এবং বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সম্পক সাপেনেউলে। এই সম্পকের টানাপোড়নে মার খাচ্ছে মঙ্গলকোটের যথার্থ উন্নয়ন।এমনিতেই রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে দেখিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদল শুন্যের পাশাপাশি বিক্ষুব্দ গোষ্ঠীদের জব্দ করেছেন অনুব্রত মন্ডল। এইরুপ অভিযোগ বিরোধীদল সহ শাসকদলের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও।এখন প্রশ্ন বিধায়ক - সাংসদ দুজনকেই উপেক্ষা সর্বোপরি বিধায়ক - সাংসদ তহবিল বাদ দিয়ে কিভাবে মঙ্গলকোটে প্রকৃত উন্নয়ন ঘটবে, তা নিয়েও।গত চারবছরে বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা তাঁর নির্বাচনীক্ষেত্র আউশগ্রাম - মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকাগুলিতে সাংসদ তহবিলের বড় কোন প্রকল্প করতে পারেননি।মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতি কুনুর নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প সহ বেশকিছু প্রকল্পর প্রস্তাবনা দিলেও, তা বাস্তবায়ন ঘটেনি অনুব্রত অনুগামী পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি বলে।সাংসদ মেয়াদকাল শেষ হতে একবছরও সময় নেই।সেখানে চারবছরের ঘাটতি কিভাবে মিটবে? যদিও এইরুপ কোন প্রয়াস দুই শিবিরের মধ্যে কারও নেই।এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী কড়া পদক্ষেপ নিলে কিছু কাজ হতে পারে।তবে সে আশায় গুড়ে বালি।উল্লেখ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের শিবদায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ডাক পাননি সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদ অনুপম হাজরা।তাহলে বোঝা যায়, সাংসদের গুরত্ব কতখানি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাও উন্নয়নের প্রশাসনিক বৈঠকে।অপরদিকে মঙ্গলকোট বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ তাঁর মেয়াদকাল পাঁচবছরের মধ্যে ইতিমধ্যে দুবছর কাটিয়ে ফেলেছেন। এককোটি কুড়ি লক্ষ অনুদান তিনি বিগত দুছরে খরচ করতে পারেননি উন্নয়ন প্রকল্পে।মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক, পনেরোটি গ্রামপঞ্চায়েতে কোন সরকারী অনুষ্ঠানে তাঁকে রাখা হয়না অনুব্রতের সাথে বিরোধ হওয়ার জন্য।বিধায়ক তহবিল থেকে তিনটি আম্বুলেন্স এখন আর চলেনা।শুধুমাত্র মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালে প্রসূতিগৃহ নির্মাণ জ্বলজ্বল করছে বিধায়ক অনুদানে।আগামী তিনবছর এই ট্রাডিশান অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে তাহলে সাংসদ এবং বিধায়ক তহবিলের কোটি কোটি অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মঙ্গলকোটবাসি।কেন্দ্রীয় সরকারের নানান প্রকল্প বিশেষত একশোদিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, স্বছ ভারত নির্মাণ প্রকল্পগুলিতে খাতাকলমে উন্নয়ন দেখিয়ে টাকা লুট করেছে ক্ষমতাসীন নেতারা।এইরুপ অভিযোগ বিরোধীদল গুলির স্থানীয় নেতাদের।এইরুপ উন্নয়নের দৌরাত্ম্যে এবার পঞ্চায়েত ভোটে কোন বিরোধী প্রার্থী নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি।এক্ষেত্রে উন্নয়নকাজ নিয়ে অভিযোগ তোলার কোন বিরোধী জনপ্রতিনিধি রাখলো না।যেখানে শাসকদলের সাংসদ - বিধায়কের এহেন হাল, সেখানে বিরোধীদের অবস্থা শোচনীয়। খাতাকলমে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে , প্রকৃত উন্নয়ন অধরায় রইবে মঙ্গলকোটে।এই দাবি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাবাসীর।