মোল্লা জসিমউদ্দিন
সরকারি নিরাপত্তারক্ষী এবং গাড়ী ছেড়েছেন গত দুতিনদিন পূর্বে।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে তথ্যসংবলিত চিঠি লিখে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন মঙ্গলকোট বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। এবার মন্ত্রিত্ব এবং দলীয়পদ ছাড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।এহেন পেক্ষাপট মাস কয়েক পূর্বেই ঘটত, কিন্তু ডালিম সেখ খুনে সিআইডির তদন্তর 'ব্লাকমেলিং' এর জন্য ঘটেনি বলে বিশস্ত সুত্রে প্রকাশ।গত ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলকোটের আটঘড়ায় ব্লক নেতৃত্ব এবং স্থানীয় পুলিশের যোগসাজশে তথাকথিত 'জনরোষ' এর ঘটনায় মহিলাদের ঝাঁটা - জুতো হাতে গালিগালাজ ঘটনায় রাজ্য পুলিশ - প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় এহেন বিদ্রোহ দেখাতেন।কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে দলীয় প্রতীক বিলিতে মঙ্গলকোটের একতৃতীয়াংশ আসন পাওয়ার সম্ভাবনায় সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী খোলস ছাড়েননি।যেভাবে তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কায়দা করে মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে বিধায়ক অনুগামীদের টিকিট না দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছেন সিদ্দিকুল্লাহ কে।তাতে 'শেষ আশা' ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে চেনা মেজাজে ফিরছেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তারই প্রাথমিক রুপ হিসাবে সরকারী গাড়ী এবং নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেওয়া।এরপরে তিনি রাজভবনের সরকারী বাসভবন এমনকি মন্ত্রিত্ব এবং তৃনমূলের দলীয় সদস্যপদ ছাড়তে চলেছেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। কি এমন পরিস্থিতি যে, সিদ্দিকুল্লাহ এত বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।যদিও তৃনমূল নেত্রী তাঁকে আগামী লোকসভায় মুর্শিদাবাদ /মালদার কোন আসনে দাঁড়াবার কথা নাকি জানিয়েছেন।এবার ফেরা যাক গত বিধানসভা নির্বাচনে মঙ্গলকোটের পেক্ষাপটের কথা।কেননা অনুব্রত মন্ডল অনুগামী ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর সাথে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর প্রধান বিরোধের শুরু এখান থেকেই।গত নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃনমূল নেত্রীর দলীয় প্রার্থী তালিকার অনেক পূর্বে মঙ্গলকোটের ক্ষীরোগ্রামে এক সভায় এক মন্ত্রী কে পাশে বসিয়ে অনুব্রত ঘোষনা করেছিলেন - ২০১১ এর অল্প ব্যবধানে (১৪২ টি ভোট) পরাজিত তৃনমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরীই এবারেও প্রার্থী।এহেন ঘোষনার পরেই উত্তপ্ত বীরভূমের মাখড়া, খাগড়াগড়ের প্রতিবাদ আন্দ্রোলনের নেতা সিদ্দিকুল্লাহ কে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন তে ডেকে নেন এবং মঙ্গলকোট কিংবা মন্তেশ্বর আসনে তৃনমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তাব দেন।এই প্রস্তাবে জমিয়ত উলেমা হিন্দের একাংশে বিরোধিতা থাকলেও তা মেনে নেন সিদ্দিকুল্লাহ।আর এতেই অনুব্রত বনাম সিদ্দিকুল্লাহের কাজিয়া শুরু হয়ে যায়।কৈচরে ব্লক তৃনমূল অফিসে সিদ্দিকুল্লাহ কে সরাসরি মঙ্গলকোটে না দাঁড়াবার হুমকি দেন ব্লক সভাপতির অনুগামীরা।এতে না দমে অপূর্বর বিরোধী গ্রুপের নেতা বিকাশ চৌধুরী কে সাথে নেন সিদ্দিকুল্লাহ।উগ্র মুসলিম সংগঠনের নেতা হিসাবে অপপ্রচার চালানো হয়। যেখানে ২০১৪ সালে লোকসভায় তৃনমূল ২৪ হাজারের বেশি লিড পায়।সেখানে সিদ্দিকুল্লাহ জিতেন ১২ হাজারে।বাকি ১২ হাজার অলৌকিকভাবে বিজেপি পেয়ে যায়।এহেন অন্তর্ঘাতে দুই চৌধুরীর বিবাদ আরও বাড়ে।ধীরে ধীরে মঙ্গলকোটের সাংগঠনিক এবং জনপ্রতিনিধিদের একাংশ বিধায়কমুখি হয়। এমনকি এই কেন্দ্রের সাংসদ অনুপম হাজরা সিদ্দিকুল্লাহের বিভিন্ন উন্নয়নকাজ এবং দলীয় সমাবেশে যোগ দেন।এতে ক্রমশ পিছু হটে অনুব্রত অনুগামী ব্লক সভাপতি।বালির বে আইনি কারবার নিয়ে পুলিশ এবং দলের একাংশ কে হুশিয়ারী দিয়ে সিদ্দিকুল্লাহ আরও শত্রু হন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে।পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক, থানা অঘোষিত বয়কট শুরু করে দেয় বিধায়কের প্রতি।এতে বিধায়ক তহবিলের নানান কাজ বাস্তবায়ন তো দূর অস্ত, প্রকল্প শুরুই হয়না।এমনকি বিধায়ক তহবিলের টাকা ফিরে যায় বারবার।এহেন পরিস্থিতির মধ্যে ব্লক সভাপতির কোর এলাকায় খুন হন অঞ্চল সভাপতি ডালিম সেখ।এই খুনে বিধায়কের ভাই সহ অনুগামী জেলাপরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী অভিযুক্ত হন।এই সুপরিকল্পিত খুনে ঘটনাস্থলে থাকা এক ব্লক নেতা এবংং মঙ্গলকোট পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।তড়িঘড়ি বিধায়ক সিআইডি তদন্ত দাবি করেন।যদিও সিবিআই তদন্তে বিশ্বাসী ছিলেন।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বিরাগভাজন হবার আশংকায় তা করেননি বিধায়ক।পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সিআইডি তৎপরতা দেখাইনি।ভোটের প্রাক্কালেই গ্রেপ্তার হন জেলাপরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী। বিধায়কের ভাই কে গ্রেপ্তার না করে সিদ্দিকুল্লাহের প্রতি 'সুতোর পুতুল' পলিসি নেয় তৃনমূল। এইরুপ দাবি বিধায়ক অনুগামীদের।এরেই মাঝে সিদ্দিকুল্লাহ কে তাঁরই নির্বাচনী কেন্দ্রে মহিলাদের দিয়ে ঝাঁটা জুতো সহ গালিগালাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে ব্লক নেতারা।একের পর এক বিধায়ক অনুগামীদের গাঁজা - অস্ত্র কেস দিয়ে, থানায় নিয়মিত ডেকে সন্ত্রাস চালিয়ে পুলিশের বড় অংশ সিদ্দিকুল্লাহ কে প্রতিমুহুত্যে চাপে রাখে বলে অভিযোগ। অপরদিকে প্রতিদিন পুলিশি রক্ষী পাওয়া ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী থানায় এসে ক্ষমতার প্রদর্শন চালিয়ে যান।একজন রাজ্যের মন্ত্রী নিজ বিধানসভা কেন্দ্রে দলের একাংশের দ্বারা প্রকাশ্যে নিয়মিত অপমানিত হচ্ছেন।তাতে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন নীরব থাকায় সিদ্দিকুল্লাহ ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যান।পঞ্চায়েত ভোটে দল বিধায়কের অনুগামীদের সম্মান দেবে, এতে বিশ্বাসীও ছিলেন।যেভাবে শীর্ষ নেতৃত্ব আসনরফার নামে লুকোচুরি খেলে কার্যক্ষেত্রে শুন্য করে দেয় বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ কে।তাতে সিদ্দিকুল্লাহ বুঝে যান তৃনমূলে আর তিনি নিরাপদ নন।তাই সরকারী গাড়ী ও নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেন গত দুতিনদিন পূর্বে।সমস্ত ক্ষোভ তথ্যসমৃদ্ধভাবে লিখে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী কে।দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না দিলে মন্ত্রিত্ব এবং তৃনমূল ছাড়তে চলেছেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন ঘনিষ্ঠ মহলে।অপরদিকে পুলিশ ও ব্লক তৃনমূল নেতারা এইবিধ অভিযোগ মানতে চাননি।