শ্যামল রায় বর্ধমান
পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা কাটোয়া মহকুমায় তাঁত শিল্পীদের বসবাস বেশি। তাই শিল্পীদের হাতে বোনা হরেক রকম শাড়ি বিক্রয় হয় সমুদ্রগড় গণেশ কর্মকার তাঁত কাপড় হাটে। সপ্তাহে তিন দিন জমজমাট হাট বসে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত। সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে বহু ব্যবসায়ী এই হাট থেকে কাপড় কিনে দেশ-বিদেশে বিক্রি করেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল বিকেলে হাট বসে তাদের উৎপাদিত বস্ত্র নিয়ে এই হাটে বসেন।বৃহস্পতিবার ছিল তাঁত কাপড় হাট। এই হাটে এসেছিলেন কলকাতার বাগুইহাটি থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি এবং আসাম ঝাড়খন্ড প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা।এই তাঁত কাপড় হাট এর সম্পাদক সুবীর কুমার কর্মকার অনন্ত কর্মকার প্রশান্ত কর্মকার প্রাণ হরি কর্মকার জানালেন যে এই হাটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত সুবিধে এছাড়াও হাটের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এটিএম পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা অতিথিদের জন্য থাকার বন্দোবস্ত প্রভৃতি সুযোগ সুবিধার কারণে এই হাতটি ক্রমশই যেন তাঁত ব্যবসায়ীদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহে তিন দিন হাটে একাধিক ব্যবসায়ীরা এই হাড় থেকে পাইকারি দরে কাপড় কিনে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন এর ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়ে থাকেন। সেই সাথে সম্পাদক সুবীর কুমার কর্মকার জানিয়েছেন যে প্রকৃতপক্ষে তাঁতীদের হাতে তৈরি কাপড়ের মান যথেষ্ট উন্নতমানের। সেই সাথে কাপড় কোনরকম ত্রুটি ধরা পড়লে পরবর্তী সময়ে ফেরত নেওয়ার একটি ভালো ব্যবস্থাপনা রয়েছে এই হাটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে।বৃহস্পতিবার ওই তাঁত কাপড় হাটে গিয়ে দেখা গেল যে বহু জায়গা থেকে বাড়ির মহিলারাও কাপড় কিনতে হাটে এসেছেন।
রুমা রায় প্রমীলা বসাক বাবলি সাহা রিঙকি সরকার প্রমূখ জানালেন যে তারা অন্যান্য জায়গায় যে দামে কাপড় কিনতে পারেন এই হাটে এলে অনেকটাই দাম কমে ভালো ভালো শাড়ি কিনতে পারেন কারণ তাঁতিদের কাছ থেকেই সরাসরি কাপড় কিনার সুযোগ তারা পাচ্ছেন।
তাই আমরা বাড়ির শাড়ি যেমন তিনি তেমনি যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য এই হাট থেকে কাপড় কিনে থাকি।আরও জানা গিয়েছে যে আগামী পূজার মরশুম শুরু হতেই তাতিদের উৎপাদিত কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সমুদ্রগড় এর কাপড় ব্যবসায়ী আনন্দ চৌধুরী জানালেন যে আগামী শারদীয় পূজার কয়েক মাস বাকি থাকলেও এখন থেকেই আমরা কাপড় কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দিই । এক কথায় বলা যেতে পারে যে প্রকৃত অর্থে পুজোর অনেক আগে থেকেই কাপড় কিনে আমরা পাইকারি দরে বিভিন্ন দোকানে দোকানে সাপ্লাই দিয়ে থাকি । এখন থেকেই তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত কাপড় আমাদের কাছে সরাসরি বিক্রি করার সুযোগ পান এবং তারা লাভবান হতে পারেন ।আনন্দ চৌধুরী আরও জানিয়েছেন যে এই তাঁত কাপড় হাট এর উপর নির্ভরশীল দুই হাজার ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ী তাদের রুজি রোজগারের পথ এখান থেকেই হয়ে থাকে।
এছাড়াও রয়েছে অনেকেই যারা এই হাটেই কাপড় কিনে কাপড় হাটেই বিক্রি করেন। এই কাপড় বিক্রি করেই লাভবান এবং লাভের টাকা দিয়ে সংসার চালান। এই শঙ্কাটাও নেহাত কম নয় এই হাটের ওপর নির্ভর করে অনেকেই বেঁচে থাকছেন। ব্যান্ডেল কাটোয়া রেল শাখায় সমুদ্রগড় রেলস্টেশন থেকে কিছুটা দুরেই এই তাঁত কাপড় হাট টি অবস্থিত। এছাড়াও এস টি কে কে রোড সংলগ্ন তাঁত কাপড় হাট টি অবস্থিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভালো। তাই ব্যবসায়ীদের কেনা কাপড় যানবাহনের মাধ্যমেই নিয়ে যেতে কোন সমস্যা তৈরি হয় না।
কিন্তু চৈত্র সেলের বাজার পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঠেলে ফেলে জমজমাট রূপ ধারণ করেছে এই গনেশ কর্মকার তাঁত কাপড় হাটে কাপড় কেনার জন্য ক্রেতারা। পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাট গণেশ কর্মকার তাঁত কাপড় হাট টি।