মোল্লা জসিমউদ্দিন
পুলিশের একাংশের মদতে পুর্ব বর্ধমান জেলায় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম বাড়ছে।বারবার মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমান জেলায় দামোদর - ভাগীরথী - অজয় নদনদী গুলি থেকে বেআইনি বালি সিন্ডিকেট বন্ধ করতে সরব হয়েছেন।যতবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা এবং রাজনৈতিক সভা করে গেছেন, ঠিক ততবারই বালির অবৈধ কারবার বন্ধে নির্দেশ দিয়েছেন।রাজনৈতিকভাবে তৃনমূল সুপ্রিমো দেখেছেন - বালির অসাধু কারবারে খন্ডঘোষ রায়না কেতুগ্রাম মঙ্গলকোট কালনা গলসী সহ বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা - কর্মীরা খুন হয়েছে।তাই অসত কারবার বন্ধ করলে হানাহানি কমবে ওইসব এলাকাগুলিতে।রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী দেখেছেন, বালি চুরি রুখতে পারলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ববাবদ সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে।যা রাজ্যের কোষাগারের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। পুলিশের একাংশের মদতে বালি মাফিয়ারা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে, এই উপলব্ধি করে গত ২৯ জুলাই বর্ধমান শহরে সংস্কৃত লোকমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বালি কারবারে যুক্ত পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ্যে দুর্নীতি দমন শাখার ভিজিল্যান্স তদন্ত করবার হুশিয়ারী দিয়েছিলেন।সিআইডির একটি দল বালি নিয়ে আভ্যন্তরীন তদন্ত চালালেও, কোন কোন থানার ওসি/আইসি তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করছেন বলে দাবি উঠছে।মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই সিআইডি এই বালি বিষয়ক তদন্তটি চালাচ্ছে।জেলা ভূমি ও ভূমিসংস্কার দপ্তর চলতি সেশনে মঙ্গলকোট থেকে ৫ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা রাজস্ববাবদ আদায় করেছে।যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক আয়।প্রথম দিকে মঙ্গলকোটের অজয় নদে ৪২ টি বালিঘাট চিহ্নিত করা হলেও জমা পড়ে ২৭ টি বালিঘাটের টেন্ডার।বর্তমানে ১২ টি বালিঘাট চলছে অজয়ের বুকে।বাকি ১৫ টি অগ্রিম অর্থ জমা দেওয়া বালিঘাট গুলি চালু করা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।মূলত সড়ক পথ থেকে বালিঘাট যাওয়ার রাস্তা নিয়ে তথাকথিত 'প্রতিবাদী ' গ্রামবাসীদের অভ্যুত্থান ঘটেছে।অতীতে এইসব এলাকায় যখন ভূমিদপ্তরের অনুমোদনহীন ঘাটগুলি রমরমিয়ে চলত, তখন এইধরনের প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের অবশ্য দেখা যায়নি।পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে, যারা কোটি কোটি টাকা বালির টেন্ডারে জমা দিয়েছেন, তারা সরকারের কাছ থেকে বালিঘাট চালু না হওয়ার জন্য জমা দেওয়া অর্থ ফেরত চাইছেন।প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে।এই সমস্যা ( রাস্তাজনিত) মেটাবার জন্য গত মাসে জেলা ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিক প্রণব বিশ্বাসের নেতৃত্বে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয় মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে।সেখানে এই আধিকারিকের পাশাপাশি কাটোয়া মহকুমাশাসক সৌমেন পাল, মঙ্গলকোট ওসি প্রসেনজিত দত্ত, বিডিও মুস্তাক আহমেদ সহ বালিঘাটের ইজারদার, বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ছিলেন।সরকারী খরচে রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে গ্রামবাসীরা তাও মানেনি।কেন মানেনি তারা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীদের একাংশ এই প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন - "মঙ্গলকোট থানার পুলিশ 'প্রতিবাদী ' সাজতে বলেছে, মাসিক টাকার ব্যবস্থা করে দেবে। না মানলে গাঁজা/বেআইনি অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেব বলে হুমকি দিয়েছে"। উল্লেখ্য বিগত তিনবছরে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ যাদের কে গাঁজা বা অস্ত্র মামলায় ধরেছে, তারা বেশিরভাগই বালি অধ্যুষিত এলাকার বালি মাফিয়াদের কাছে প্রতিবাদী হিসাবে পরিচিত। আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন - এইবিধ মামলায় এফআইআর কপি, সিজার লিস্ট, চার্জশীট, ফাইনাল রিপোর্ট বিষয়গুলি পরীক্ষা করলে আসল তথ্য উঠে আসবে।বিতর্ক যতই থাকুক, মঙ্গলকোটে ভূমি দপ্তর বালি থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে, তার একাংশ অর্থ ফেরত চাইতে চলেছে বৈধ ঘাটের ইজারদাররা, এইরুপ জানা গেছে।মঙ্গলকোট থানার পুলিশের শেখানো বুলিতে গ্রামবাসীদের একাংশ রাস্তা নিয়ে প্রতিবাদী সাজছেন। এটাও মানছেন ভূমি আধিকারিকরা।মঙ্গলকোট বিধায়ক মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন "আইন মোতাবেক বালির ঘাট গুলি চলুক, সরকারি আয় বাড়বে তাতে।কমবে খুন রাহাজানি। এটাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন"। মঙ্গলকোট ভূমি আধিকারিক রামবিলাস বাবু জানিয়েছেন - ইতিমধ্যে আমরা বালি চুরি রুখতে সিসিটিভি লাগিয়েছি মঙ্গলকোটের তিনটি জায়গায়, বালিঘাট চালাবার ইজারদারদের বোঝাচ্ছি তারা যাতে ঘাট চালাতে অনাগ্রহ না দেখান"।জানা গেছে মঙ্গলকোটের নুতনহাটে জনৈক কুরবান সেখ নামে এক বালি কারবারি মঙ্গলকোটের অজয় নদের বেআইনি বালি সিন্ডিকেটটি চালাচ্ছেন। এই সিন্ডিকেটের আওতায় থাকা ডাম্পার গুলি অতিরিক্ত বালি বোঝাই, ভিজে বালি নিয়মিত নুতনহাট এমনকি মঙ্গলকোট থানার সামনে দিয়ে গেলেও পুলিশ সেভাবে তৎপরতা দেখায় না।অভিযোগ পুলিশ পরিচালিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ( ফুটবল/ক্রিকেট টুর্নামেন্ট প্রভৃতি) এর আর্থিক সহযোগিতা এই বালির কারবারি।পুলিশের বক্তব্য জানার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, যোগাযোগ করা যায়নি।