মোল্লা জসিমউদ্দিন
এখনও শেষ হয়নি।কোনপক্ষই হারতে রাজি নয়।এটা সম্মানরক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে মঙ্গলকোট কে ঘিরে।হ্যা শুক্রবার বিকেলে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ পঞ্চায়েত ভোট মামলায় রায়দানে অতিরিক্ত মনোনয়ন পত্র পেশের সময়সীমা দেওয়ার নির্দেশিকা দিয়েছে।রাজ্যের বিরোধীরা এই রায়ে চরম খুশির পাশাপাশি তৃনমূলের একাংশও খুশি।বিশেষত তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছিল মনোনয়ন পেশের সময়সীমা দেওয়া হোক।যদিও তারা প্রকাশ্যে চাননি, তবে ক্ষুব্ধ সিদ্দিকুল্লাহ কে সন্তুষ্ট করতে মনোনয়ন বাড়ানোর সুপ্ত ইচ্ছে ছিল।তাইতো গত বুধবার বীরভূম জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম অনুব্রত মন্ডল কে জানিয়েদেন - মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলকোটের ৩৪ টি আসনে যেন তাঁর অনুগামীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন এবং সেগুলি যাতে সিদ্দিকুল্লাহের অনুগামীরা দলীয় সিম্বল পান।কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানের দুদিন পূর্বে শীর্ষ তৃনমূলের এহেন নির্দেশ তাই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, মনোনয়ন পেশের সময়সীমা দেওয়াটা আবশ্যিক ছিল সিদ্দিকুল্লাহ কে সন্তুষ্ট করতে।শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে, সংখ্যালঘু নেতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী না চটাতে।বিশেষত আগামী লোকসভা নির্বাচন অবধি তো নয়।যদিও তারা ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি কে দিয়ে 'ঘরেঘরে' বিবাদ লাগানোর চেস্টায় ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনুভাব করে সিদ্দিকি এবং সিদ্দিকুল্লাহের বন্ধুত্ব বহুগুণ বেড়েছে।এতকিছুর মধ্যে হাল ছাড়বেন না মঙ্গলকোটের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেষ্ট মোড়ল।তিনি তৃনমূলের সূচনালগ্ন থেকেই মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক রয়েছেন। নানুরের ভূমিপুত্র হওয়ায় সীমান্তবর্তী মঙ্গলকোট কে একটু বেশিই চিনেন।তাই শীর্ষ নেতৃত্বর আসনরফাটি বাস্তবিকপক্ষে আদৌও তিনি মানবেন কিনা, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।কেননা প্রথম পর্বের মনোনয়ন পেশের সময়ও সাক্ষরিত দলীয় প্রতীক তিনি ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।তারপরেও বিধায়ক অনুগামী পদপ্রার্থীদের বাড়ী ঘিরে রাখে ব্লক সভাপতির লোকেরা।এমনকি কাটোয়া মহকুমাশাসক অফিসে পুলিশি সন্ত্রাস এবং দলীয় সশস্ত্র বাহিনীর সামনে পড়ে বিধায়ক অনুগামীরা।গত ৮ এপ্রিল নিজ বিধানসভা কেন্দ্র মঙ্গলকোটের পদিমপুর গিয়ে পুলিশের চরম উপেক্ষা এবং স্থানীয় নেতাদের শাসানির শিকার হন সিদ্দিকুল্লাহ।এরপরে একে একে সরকারি গাড়ী, নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেওয়া, রাজভবন না যাওয়া, মন্ত্রী অফিসে না যাওয়া, এমনকি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে অনুপস্থিতির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী কে চরম বার্তা দেন ক্ষুব্ধ সিদ্দিকুল্লাহ।আর এতেই টনক নড়ে।শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে সিদ্দিকুল্লাহ কে জানিয়ে দেওয়া হয় - মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে মঙ্গলকোটে ৩৪ টি আসন দেওয়া হয়েছে।এতদূর অবধি সবই ঠিকঠাক। যত সমস্যা ওই ৩৪ টি আসনের ১৬ টি নির্দল প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা নিয়ে।বিধায়ক জানিয়েছেন ৩৪ টি আসনে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরাই মনোনয়ন তুলবে।অপরদিকে সংবাদমাধ্যমে অনুব্রত জানিয়েছেন -" যে ১৬ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছে, তারা আসলে বিধায়কেরই অনুগামী। তাই বাকি ১৮ টি আসনে বিধায়কের লোকেরা মনোনয়ন জমা দেবে।"আর এখান থেকে পুনরায় সিদ্দিকুল্লাহের সাথে অনুব্রতের মনোমালিন্য কিংবা বিবাদ শুরু হতে চলেছে।যে মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে পুলিশের তাড়ায়, নেতাদের মোটরবাইক বাহিনীর দৌরাত্মে বিধায়ক অনুগামীরা মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেনি।এমনকি কাটোয়া মহকুমাশাসক অফিসে ঢুকতে গেলে পুলিশের হাতে দশের বেশি বিধায়ক অনুগামী আটক হয়।এমনকি সিদ্দিকুল্লাহের এক ভাইপোর মাথা ফাটে তাতে।তাই তথাকথিত ওই ১৬ জন আসলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীরই মনোনীত ব্যক্তি।এদের মধ্যে কেউ কেউ বিধায়কের অতি ঘনিষ্ঠ সেজে বিপক্ষ শিবির কে ভেতরকার খবর সাপ্লাই দিত বলে বিধায়ক শিবিরের দাবি।তাই এইধরনের ভোল পাল্টানো সুবিধাবাদীদের মেনে কি নেবেন সিদ্দিকুল্লাহ? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।যাইহোক মঙ্গলকোটের ১৬ জন নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে শাসকদলের যুযুধান দুপক্ষের বিবাদ শুধু সময়ের অপেক্ষা, এটা বলায় যায়।