মোল্লা জসিমউদ্দিন
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এর লড়াই নিয়ে যে লড়াই সিদ্দিকুল্লাহ বনাম অনুব্রত মন্ডলের মধ্যে শুরু হয়েছে।তা এখনও থামেনি, উল্টে লড়াই বেড়েছে বহুগুণ। একজন স্থানীয় বিধায়কের পাশাপাশি রাজ্যের তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী, অন্যজন রাজ্য তৃনমূলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষকও বটে।সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃনমূলে যোগদানের পূর্বে পিডিসিআই নামে এক রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা ছিলেন।সেখানে আবার বীরভূমে বহু চর্চিত 'মাখড়া' সহ বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াতেন।তাই একদা তৃনমূল বিরোধী আন্দ্রোলনের সংগঠক সিদ্দিকুল্লার সাথে অনুব্রতের সম্পক বরাবরই সামন্তরাল রেখার মত।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত ৮ মার্চ মঙ্গলকোটের নূতনহাট মিলন পাঠাগারের নব ভবন উদ্বোধনি অনুষ্ঠান ঘিরে রাজ্যের চারজন মন্ত্রী ( রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক, উজ্বল বিশ্বাস) দেখানোর প্রতিযোগিতা নিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ।সেইমত ৭ নং রাজ্য সড়কে নূতনহাট বাইপাসে বিশাল তোরণ ( মন্ত্রী দের ছবি সহ), হাজার হাজার রঙ্গিন আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছিল।অনুষ্ঠানের দিন দেখা গেল একমাত্র সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আবু আয়েষ মন্ডল ছাড়া কেউ এলেন না।মান বাঁচলেও অনুব্রত শিবির মন্ত্রী দেখানোর ফ্লপ শো ঘিরে উজ্জীবিত হল।সাথে সাথে মহিলা তৃনমূল সম্মেলন কে সামনে রেখে তারাও মন্ত্রী দেখিয়ে কার কতটা প্রভাব রয়েছে মন্ত্রীসভায়, তাতে নেমে পড়লো।বীরভূম জেলা নিবাসী দুই মন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় (কৃষি), চন্দ্রনাথ সিংহ ( মৎস) এর ছবি নাম অজশ্র ফ্লেক্সে রাখলেও প্রচার চললো যে, আসবেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা মহিলা তৃনমূলের রাজ্য নেত্রী চন্দ্রীমা ভট্টাচার্য। শনিবার বিকেলে মঙ্গলকোটের মাথরূণ ফুটবল মাঠে মহিলা তৃণমূল সম্মেলনে চন্দ্রীমা ভট্টাচার্য কে যেমন পাওয়া গেলনা।তেমনি বীরভূমের রামপুরহাট কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় কেও দেখা গেলনা মঞ্চে।তবে কিছুক্ষণের জন্য এসেছিলেন মৎস মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।মূল বক্তা হিসাবে আগাগোড়া ছিলেন অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেষ্ট মোড়ল।সিদ্দিকুল্লাহ শিবিরের দাবি - চন্দ্রনাথ সিংহ এবং আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন বীরভূম জেলার বিধায়ক, সেখানে আবার দলীয় জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল।তাই ওই দুই মন্ত্রী আসবেন, তা সবাই জানে।কিন্তু আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ( কৃষিমন্ত্রী) কেন এলেন না? আর চন্দ্রীমা ভট্টাচার্যই বা এলেন না কেন? তার উত্তর পাওয়া মুস্কিল। অপরদিকে অনুব্রত শিবিরের দাবি - কৃষিমন্ত্রী সরকারী বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন, তাই আসতে পারেন নি।তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বারবার তাঁরা মঙ্গলকোটে প্রচারে আসবেন।শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ মঙ্গলকোটের মাথরুণ ফুটবলমাঠে শুরু হয় মহিলা তৃনমূলের সম্মেলন। সেখানে মুখ্য বক্তা ছিলেন এই কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডল।সাথে গোটা বীরভূমের শাসকদলের জনপ্রতিনিধি সহ নেতারা ছিলেন।বীরভূম জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী থেকে নানুরের প্রাত্তন বিধায়ক গদাধর হাঁজরা।তবে রামপুরহাট বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যান্য বিধায়কদের দেখা যায়নি।রাজনীতিমহল মনে করছে, বীরভূম জেলার দলীয় সভাপতি হওয়ার দরুন ওই জেলার জনপ্রতিনিধি, নেতাদের আনতে পেরেছেন মঙ্গলকোটে।নামে মহিলা সম্মেলন হলেও আক্ষরিক অর্থে ছিল ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই।গত ৮ মার্চ মঙ্গলকোটে নুতনহাট মিলন পাঠাগারে মন্ত্রী দেখানোর লড়াইতে সিদ্দিকুল্লাহ ফেল করলেও।আজকের মহিলা সম্মেলনে অনুব্রত 'ফুলমার্কস' পেলেন না,এটা বলায় যায়।তবে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোন পক্ষই মঙ্গলকোটের মাটি ছাড়তে রাজি নয়, তা ক্রমবর্ধমান ঘটনা পরম্পরা দেখে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।