মোল্লা জসিমউদ্দিন
বিরোধী দল তো বটেই শাসকদলের তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী হওয়া স্বতেও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীরর ৩৪ জন প্রতিনিধি মঙ্গলকোটে দ্বিতীয় দফা মনোনয়ন পর্বে ফর্ম তুলতে পারলো না।সেখানে তৃনমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন আসনরফায় সবুজ সংকেত ছিল। যে সন্ত্রস্ত পরিবেশ গত ১ এপ্রিল থেকে মঙ্গলকোটে তৈরি হয়েছে।সেখানে অবস্থার উন্নতি তো দূর অস্ত, উল্টে শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর এবং পুলিশি সন্ত্রাস বহুগুন বেড়ে যাওয়ায় বিধায়ক অনুগামীরা সোমবার মনোনয়ন পেশের ফর্ম তুলতে যায়নি।গত রবিবার ঝিলু ২ নং অঞ্চলের নপাড়া গ্রামে এক বিধায়ক অনুগামী পঞ্চায়েত ভোটের পদপ্রার্থীরর বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয় দলের বিপক্ষ গোষ্ঠী। তিনটি পশু পুড়ে যাবার পাশাপাশি ওই পদপ্রার্থীর নাবালক ছেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে জানা গেছে।এই ধরনের সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খুন রাহাজানি শুরু হয়ে যাবে মাঠে ময়দানে নামলে।এই যুক্তিতেই গত রবিবার মঙ্গলকোট বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর অনুগামীদের ফোন করে হাত গুটিয়ে নিতে বলেন মনোনয়ন পর্ব থেকে।ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর আসনরফার নির্দেশ টি 'আই ওয়াস' ছাড়া কিছুই নয়।সেভাবে নির্দেশ টি দলের বিপক্ষ শিবির কে এবং পুলিশ কে কড়া হাতে আইনশৃঙ্খলা দেখতে বলা হয়নি বলেই সিদ্দিকুল্লাহ এই পরিস্থিতির শিকার হলেন। দল এক্ষেত্রে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামীদের মনোনয়ন পেশে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারতো।বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটে এবার দলের ক্ষমতাহীন গোষ্ঠী কে জব্দ করলো বলা যায়।গত ১ এপ্রিল মঙ্গলকোট থানা লাগোয়া পদিমপুর বাইপাসে বিধায়ক অফিসে দেড়শত মোটরবাইক বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসের তাস টি প্রথম খেলে ব্লক তৃনমূল সভাপতির অনুগামীরা।সেদিনই দুটি বিধায়ক অনুগামীর দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়।সেইসাথে বিধায়কের পঞ্চায়েত ভোটের পদপ্রার্থীদের বাড়ীর সামনে সশস্ত্র বাহিনীর নজরদারী বেড়ে যায়।২ এপ্রিল থেকে মঙ্গলকোট ব্লক অফিস লাগোয়া কৃষাণ মান্ডিতে এই বাহিনী কে রাখা হয় মনোনয়ন যাতে কেউ তুলতে না পারে সেজন্য।নির্বাচন কমিশন ব্লক অফিসের পাশাপাশি মহকুমাশাসক অফিসে ফর্ম তুলবার নির্দেশ দিলে, তাতেও সন্ত্রাসের মাত্রা বেড়ে যায়।বিভিন্ন সড়কমোড়ে সশস্ত্র বাহিনী কে রেখে ধরপাকড় চলে।পালিশগ্রাম মোড়ে গতবারের তৃনমূল জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যা লিপিকা সুলতানা কে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ উঠে বিপক্ষ শিবিরের দিকে।কাটোয়া মহকুমাশাসক ঢুকতে গেলে পুলিশের বাধাদানের অতিসক্রিয়তা দেখা যায়।দশের বেশি বিধায়ক অনুগামী আটক হয় মনোনয়ন ফর্ম তুলতে গিয়ে।৮ এপ্রিল মঙ্গলকোটের পদিমপুরে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আসেন অনুগামীদের মনোনয়ন তুলতে ৯ এপ্রিল নিয়ে যাবেন বলে।মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী, কনভয়, স্থানীয় থানার গাড়ী থাকা স্বতেও খুন রাহাজানি ঘটবে যুক্তি দেখিয়ে পুলিশের তরফে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠে। শান্তিপ্রিয় সিদ্দিকুল্লাহ অশান্তি এড়াতে কলকাতা চলে আসেন।এরপরে সরকারী নিরাপত্তারক্ষী, গাড়ী ছেড়ে দেওয়া।রাজভবন কিংবা বিকাশভবন সর্বোপরি রাজ মন্ত্রীসভা বৈঠকে না গিয়ে দলীয় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্দিকুল্লাহের ৩৪ টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়।উল্লেখ্য মনোনয়ন পেশের প্রথম পর্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুব্রত বকসী, ফিরহাদ হাকিম, অরুপ বিশ্বাস একজায়গায় বসে ৩৪ টি আসনের প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছিল।এবারেও সেই একই পেক্ষাপট দেখা যায়।তাতে সিদ্দিকুল্লাহ ভেবেছিলেন - দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মনোনয়ন পেশে আর বাঁধা হবেনা।কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে বিধায়ক অনুগামীদের উপর দলের একাংশের বাহিনী এবং পুলিশের একাংশের হাতে সন্ত্রাস বহুগুণ বেড়ে গেল।অভিযোগ, মঙ্গলকোট থানায় কোন বিধায়ক অনুগামী আক্রান্ত অবস্থায় গেলে অভিযুক্তদের সাথে পুলিশের একাংশের দহরমমহরম দেখে তারা সিটিয়ে যায়।উল্টে মিথ্যা মামলার প্রাপ্তিযোগে বিধায়ক অনুগামীদের বড় অংশ এলাকাছাড়া।কয়েকজনের বাড়ীতে রীতিমত দিনেরাতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ব্লক সভাপতির বেপরোয়া সশস্ত্র বাহিনী। যদিও ব্লক তৃনমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।মঙ্গলকোটের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হিংস্বা হানাহানি রুখতে পিছিয়ে গেলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি নিজে অনেক পঞ্চায়েত ভোটের পদপ্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে বারণ করেন গত রবিবার থেকে।যেভাবে বাড়ীতে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁর এক অনুগামী কে।তাতে তিনি বলেছেন - মনোনয়ন পত্র তুলবার পর, স্কুটিনি, মনোনয়ন প্রত্যাহার, ভোটের দিন, গণনার দিন অনুগামীদের প্রাণ সংশয়ে তিনি ফেলতে চাননা।দল যদি কড়া নির্দেশ দিত, তাহলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতনা কোনদিন। তাই চাপা ক্ষোভ এখনও রইলো মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অন্তরে।তার বহিঃ প্রকাশ ঘটা শুধুই সময়ের অপেক্ষা।