মানস দাস, মালদা
চোলাই তৈরি এক সময় কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছিল এখানে। এখন সেখানেই চোলাই মুক্তির অঙ্গীকার করছেন গ্রামবাসীরা । রীতিমতো নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে নিজেরাই আয়োজন করলেন সচেতনতা শিবির। আর সেই শিবিরে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গোটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন জেলা আবগারি কর্তারা। এমনই উলটপুরাণ নজরে এলো মালদার চাঁচল থানার মালতিপুরের গৌড়ষন্ড গ্রামে।
"আমরা চোলাইমুক্ত সমাজ চাই" - এই দাবিকে সামনে রেখেই সচেতনতা ক্যাম্পে সামিল হলেন আদিবাসী নাগরিকরা। এদিন গৌড়সন্ডার পাথরঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই শিবিরে অংশ নেন প্রায় তিন হাজার আদিবাসী নাগরিক । মহিলা ও শিশুদের উপস্থিতিও ছিল নজরে পড়ার মতো। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে ও সচেতনতার বার্তা আরও ছড়িয়ে দিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা আবগারি সুপার শ্রী নিমাই বিশ্বাস, আবগারি মালদা ডিভিশনের অ্যাসিস্টান্ট কমিশনার শ্রী গৌতম দাস, আবগারি চাঁচল সার্কেলের ও সি শ্রী মুকেশ ঝাঁ সমেত আবগারি বিভাগের অন্যান্য আধিকারিকরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আবগারি কর্তাদের হাতে আঠারো দফা দাবিসনদ তুলে দেন আদিবাসী নেতারা। চোলাই মুক্ত সমাজ গড়ার দাবি ছাড়াও দাবিসনদে আদিবাসীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার সুব্যবস্থা করার মতো দাবিও করা হয়। চোলাই এর মতো বিষমদের রমরমা ঠেকাতে আদিবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বিশেষ জোর দেন আবগারি কর্তারা। আবগারি মালদা ডিভিশনের অ্যাসিস্টান্ট কমিশনার গৌতম দাস বলেন," আদিবাসীরাই এখানে ভূমিপুত্র । তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া চোলাইমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব নয়। আবগারি ভবিষ্যতে এদের সঙ্গে নিয়েই উন্নয়নের পথে এগোবে।" অন্যদিকে আদিবাসী পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষা ও জাতিগত শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন জেলা আবগারি সুপার নিমাই বিশ্বাস । তিনি বলেন, " জাতিগত শংসাপত্র পেতে বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে আপনারা সরাসরি আমাদের দফতরে আসুন। আমরা সবরকম সাহায্য করব।" পাশাপাশি জেলাশাসক তথা জেলা প্রশাসন এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলেও জানান আবগারি কর্তারা। এদিকে আবগারি দফতর তথা জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে খুশি চুনিয়া মূর্মূ, হোপনা সোরেনের মতো আদিবাসী নেতারা। চোলাইমুক্ত আদিবাসী সমাজ গঠনে ভবিষ্যতে তাদের সংগঠন চাঁচল আদিবাসী কল্যাণ সমিতি এবং আসেকা ও সারা ভারত ওঁরাও সমিতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাবে বলে জানান তারা ।