মোল্লা জসিমউদ্দিন
চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আসনরফায় নি:স্ব হওয়া 'বিদ্রোহী' সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে মুখ্যমন্ত্রী দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিশস্ত সুত্রে প্রকাশ।মিডিয়াতে কোন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে মঙ্গলকোট বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে।যেভাবে শাসকদলের মন্ত্রী হয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বিভিন্ন গনমাধ্যমে দলেরই শীর্ষ নেতৃত্বর প্রতি বিষেদগার হয়েছিলেন, তাতে তৃনমূলের অন্দরে ক্রমশ সিদ্দিকুল্লাহ কে নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়।সর্বোপরি সিদ্দিকুল্লাহ একজন রাজ্যস্তরের মুসলিম ধর্মীয়গুরু হওয়ায় চলতি পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে চিড় ধরতে পারে, এহেন আশংকায় তড়িঘড়ি সিদ্দিকুল্লাহ কে সর্তক করার পাশাপাশি মিডিয়াতে রাজনৈতিক বক্তব্য পেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বলে জানা যাচ্ছে। যেভাবে রাজ্য বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু প্রার্থী 'প্রমোট' করেছে, তাতে সিদ্দিকুল্লাহর মত একজন সংখ্যালঘু নেতা তৃনমূলের অন্দরে থেকে তীব্র অসন্তোষ সহ রণংদেহী বক্তব্য নিয়মিত বললে, ক্ষতি হবে শাসকদলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে।যদিও সিদ্দিকুল্লাহ প্রকাশ্য কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন - "দলনেত্রী চুপ থাকতে বলেছেন এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি ভোট মিটলেই মঙ্গলকোটে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন "। উল্লেখ্য এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে মনোনয়ন পেশের সময় সিদ্দিকুল্লাহ কে মঙ্গলকোটে ৩৪ টি আসন দেওয়ার কথা শীর্ষ নেতৃত্ব জানালেও কোন আসনেই মনোনয়নের ফর্ম তুলতে পারেনি বিধায়কের অনুগামীরা।আবার হাইকোর্টের নির্দেশে মনোনয়ন পেশের দ্বিতীয় দফাতেও অনুরুপ ছবি দেখা যায় বিধায়ক শিবিরে।সেসময় মিডিয়ায় সিদ্দিকুল্লাহ বিভিন্ন সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন - " দলনেত্রীর নির্দেশে সুব্রত বকসী, ফিরহাদ হাকিম,অরুপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় অনুব্রত মন্ডল সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে ৩৪ টি আসনের প্রতীক তুলে দেন।এই প্রতীক তুলে দেওয়া হয় ফিরহাদ হাকিমের বাড়ীতে।" প্রথমপর্বে মনোনয়ন পেশে ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েকদিনের জন্য সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী সরকারী গাড়ী - নিরাপত্তারক্ষী ছেড়ে দেন।সেইসাথে রাজভবন - বিকাশভবন যাওয়া বন্ধ করে দেন।এমনকি রাজ্যমন্ত্রীসভার মাসিক বৈঠক এড়িয়েও যান।এইবিধ অবস্থান গুলি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ হওয়ায় রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছেন বলে প্রকাশ। শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেও দ্বিতীয়দফাতেও মঙ্গলকোটে মনোনয়ন পেশ করতে পারেনি সিদ্দিকুল্লাহের অনুগামীরা।তখন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিদ্দিকুল্লাহ দলেরই বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখান।প্রথমত মনোনয়ন পেশে শাসকদলের সন্ত্রাস নিয়ে গাঁ জোয়ারি প্রসঙ্গ টানেন সিদ্দিকুল্লাহ।উন্নয়নের প্রশ্নে সওয়াল করে ভোট পেত তৃনমূল তা তিনি মনে করে দলের সংগঠিত সন্ত্রাস কে সুকৌশলে তুলে ধরেন। এতে তৃনমূলের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুন্ন হয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রশ্নে।বিরোধী দলের কোন নেতা নয়, দলেরই একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে এহেন বক্তব্য পেশ করায় চাপে পড়ে যায় তৃনমূল। দ্বিতীয়ত মঙ্গলকোটে আসনরফা নিয়ে যে অংক সিদ্দিকুল্লাহ বারবার তুলে ধরেন, তাতে দলের মধ্যে গোষ্ঠীবাজী বারবার মদত পাচ্ছে।এতে বিক্ষুব্ধদের দাবিদাওয়া ক্রমাগত বেড়েই চলছিল সারারাজ্য জুড়ে।তৃতীয়ত বিজেপির সাথে উগ্র হিন্দুত্ব নিয়ে বিশেষত রামনবমী - হনুমান জয়ন্তী পালনে তৃনমূল যে লড়াই শুরু করেছে।তাতে বিজেপির হাত শক্ত হবে বলে মন্তব্য সিদ্দিকুল্লাহ করাতে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক নিয়ে দোটানায় পড়ে যায় তৃনমূল। একাধারে উগ্র হিন্দুত্ব বজায় রাখা অপরদিকে মুসলিম সমাজ কে খুশি করা দুটো একসাথে সম্ভব নয়, তা ঘনিষ্ঠ মহলে সিদ্দিকুল্লাহ ব্যক্ত করেন।চতুর্থত যেভাবে বীরভূম জেলা সভাপতি তথা মঙ্গলকোট কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মন্ডল কে 'মহারাজ' সম্বোধনে সিদ্দিকুল্লাহ ব্যঙ্গ করেছেন, তাতে দলনেত্রী চরম রুষ্ট বলে জানা গেছে। সামগ্রিকভাবে মিডিয়ায় সিদ্দিকুল্লাহের সাক্ষাতকার পেশে দেখা যায় - দলনেত্রীর নির্দেশ থাকা সত্বেও মঙ্গলকোটে পঞ্চায়েত ভোটে কোন আসনেই মনোনয়ন দিতে পারেনি বিধায়ক অনুগামীরা।দলের একাধারে সুপ্রিমো, অন্যধারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কখনও সুব্রত বকসী কে, আবার কখনওবা শিক্ষামন্ত্রী কে দিয়ে সিদ্দিকুল্লাহের আসনরফার বৈঠক করেছেন।সেখানে কোন রসায়নে মঙ্গলকোটে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং স্থানীয় থানার প্রভাবে সিদ্দিকুল্লাহ মঙ্গলকোট গিয়েও পারলেন না অনুগামীদের মনোনয়ন তুলতে? এই প্রশ্ন বারবার সিদ্দিকুল্লাহের বিভিন্ন মন্তব্যে উঠে আসায় একপ্রকার বাধ্য হলেন সতর্ক করতে। সেইসাথে মিডিয়ায় কথা না বলার ( রাজনৈতিক) নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সিদ্দিকুল্লাহ কে দেওয়া হয়েছে বলে বিশস্ত সুত্রে প্রকাশ।এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা না মানার অভিযোগে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইংগিত দেওয়া হয়েছে মঙ্গলকোট বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে।